Site icon suprovatsatkhira.com

কলারোয়ায় ২০ লাখ টাকার ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন: কমেছে খরচ, বেড়েছে ফসল উৎপাদন

ডেস্ক রিপোর্ট: কলারোয়ায় বছরে প্রায় ২০ লাখ টাকার ১৭০ টন পরিবেশ বান্ধব জৈব সার ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন হচ্ছে। এতে বার্ষিক ৬ লাখ টাকার অধিক রাসায়নিক সার খরচ সাশ্রয় এবং ফসল উৎপাদন ২০% বৃদ্ধি পেয়েছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি প্রচলনের শুরু থেকে কলারোয়ার জমিতে বছরে ৩/৪ টি ফসল উৎপাদন করা হয়। সংগে সাথী ফসলও থাকে। ক্রমান্বয়ে বছরে ৩/৪ টি ফসল উৎপাদন এবং বেশি পরিমাণ রাসায়নিক সার ব্যবহারে জমির উর্বরা শক্তি ক্রমান্বয়ে সর্বনিম্ন পর্যায়ে এসে পৌছায়। এতে জমি প্রায় জৈব পদার্থ শূন্য হয়ে পড়ছে। ফলে ফসল উৎপাদন হ্রাসের সংগে সংগে ফসলে বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের প্রার্দূভাব দেখা দিচ্ছে। কিন্তু কয়েক ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি এবং রোগ বালাই থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য কৃষক ক্রমান্বয়ে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার বৃদ্ধি করছে। এতে কৃষকের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেলেও ফসল উৎপাদন কোনভাবে বৃদ্ধি হচ্ছে না। বরং রোগ বালাই কৃষকের নিত্য সঙ্গী হয়ে পড়ছে। এতে প্রচ- পরিশ্রমী কৃষক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এরকম বিপর্যস্থ কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থায় মহাসীন আলী নামে এক কৃষি কর্মকর্তা কলারোয়ায় যোগদান করেন। তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে সমগ্র কলারোয়ার গ্রামগঞ্জের কৃষকদের সংগে কথা বলে প্রকৃত বিষয় অনুধাবন করেন। এরপর মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পরিবেশবান্ধব ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন ও ব্যবহার সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাসায়নিক সারের ব্যবহার হ্রাসকরণ বিষয়ের উপর ইনোভেশনের আওতায় জৈব সার উৎপাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
কৃষি কর্মকর্তা মহাসীন আলী জানান, কলারোয়ায় এসে দেখেন উত্তোরণ এনজিওর সহায়তায় এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে ২০১৫ সাল পর্যাপ্ত মাত্র ১০ টি ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে এবং বার্ষিক ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন ক্ষমতা মাত্র ১.৫ টন। তাই তিনি ইনোভেশনের আওতায় বিগত ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে সাতক্ষীরা সদরের নেবাখালী থেকে ১ হাজার ২’শ টাকা কেজি দরে দেড় কেজি কেঁচো এনে উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরের আঙ্গিনায় ১১টি চাড়ি বা নান্দায় ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনের সূত্রপাত ঘটান। ৬০ দিন পরে ক্ষুদ্র আকারের এই ডিপো থেকে প্রথম পর্যায়ে ৪০ জন কৃষককে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনে বিনামূল্যে অর্ধ কেজি কওে কেঁচো সরবরাহ শুরু করেন। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে এই ৪০ জন কৃষক ও উপজেলা সদর ডিপো থেকে বিনামূল্যে কেঁচো সরবরাহ করে বর্তমানে ৮৫০ টি ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। চলতি বছরের জুনে এসে ভার্মি কম্পোস্টের সংখ্যা ৮৫০ টি উন্নীত হয়েছে। এতে বর্তমানে বার্ষিক ১৭০ টন ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদিত হচ্ছে। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ২০ লাখ টাকা। এতে রাসায়নিক সার বাবদ বছরে প্রায় ৬ লাখ টাকার অধিক সাশ্রায় হচ্ছে বলে তিনি জানান।
কৃষি কর্মকর্তা মহাসীন আলী আরো জানান, গোবর আঙ্গিনায় রেখে ২৫/৩০ দিন নাড়াচাড়া করে গন্ধমুক্ত করা হয়। কারণ দুর্গন্ধযুক্ত পঁচা গোবরের মধ্যে কেঁচো মারা যায়। এরপর চাড়ি বা নান্দায় দুর্গন্ধমুক্ত গোবর ভরে তার ভিতর কেঁচো ছেড়ে দেওয়া হয়। কেঁচো এই গোবর খেয়ে বিষ্ঠা ত্যাগ করে। কেঁচোর এই বিষ্ঠাই ভার্মি কম্পোস্ট সার। এই সার কৃষকরা নিজের ফসলে ব্যবহার ছাড়াও প্রতিবেশী কৃষককে উপহার দিচ্ছে এবং সীমিত আকারে এ সার বেচাকেনা শুরু হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কৃষি পদকপ্রাপ্ত কৃষক কলারোয়ার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের ইউনূছ আলী জানান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহাসীন আলীর উৎসাহে ২০১৬ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন শুরু করেন। বর্তমানে প্রতি মাসে তার ৪ টি চাড়ি বা নান্দা থেকে বার্ষিক প্রায় ১ টন ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন হয়। এই সার তার ধান, পাট এবং তরিতরকারি চাষে ব্যবহার করায় উৎপাদন আগের যে কোন সময়ের তুলনায় কমপক্ষে ২০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার রাসায়নিক সার খরচ এক তৃতীয়াংশ হ্রাস পেয়েছে। বিশেষ করে ফসলে রোগের প্রাদুর্ভাব না থাকায় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির সংগে সংগে উৎপাদন খরচ হ্রাস পেয়েছে। ফলে তারা বেশি লাভবান হচ্ছে। এসব দেখে পার্শ্ববর্তী কৃষকরা তাদের থেকে ভার্মি কম্পোস্ট সার কিনে সীমিত আকারে ব্যবহার শুরু করেছে। সাফল্য দেখে অনেকে কৃষক এর উৎপাদন শুরু করছেন।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version