Site icon suprovatsatkhira.com

একান্ত সাক্ষাৎকারে ডিসি মোস্তফা কামাল: এখন সরকারের কথা শুনতে আমি বাধ্য না

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল। ১৯৭৩ সালে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানি উপজেলার খারহাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি শুরু হয় কাশিয়ানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১৯৮৮ সালে কাশিয়ানি গিরিশচন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে এসএসসি উত্তীর্ণ হন। ১৯৯০ সালে কাশিয়ানি এমএ খালেক ডিগ্রি কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এইচএসসি পাশ করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে নিজেকে নিয়োজিত করেন আইন পেশায়। সদস্য হন ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতির। পরে ২১তম বিসিএস-এ উত্তীর্ণ হয়ে বরগুনা জেলায় সহকারি কমিশনার হিসেবে নতুনভাবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। ২০০৮ সালে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও ২০১৬ সালে সাতক্ষীরা জেলা কালেক্টরেটে এডিএম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও গাজীপুরে এডিসি হিসেবে কাজ করেছেন। সর্বশেষ তিনি গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পদে কর্মরত ছিলেন। গত ৯ অক্টোবর সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন তিনি। ‘সমকালীন উন্নয়ন ভাবনা: প্রেক্ষাপট সাতক্ষীরা’ নিয়ে দৈনিক সুপ্রভাত সাতক্ষীরার সাথে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- গাজী আসাদ, এসএম নাহিদ হাসান, ফাহাদ হোসেন ও আরিফুল ইসলাম রোহিত

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: কেমন আছেন?
এসএম মোস্তফা কামাল: ভালো আছি।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে জানতে চাই-
এসএম মোস্তফা কামাল: প্রাথমিক শিক্ষা নিয়েছি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। প্রথম ক্লাসে রেজাল্টে প্রথম হয়েছিলাম। পরে চতুর্থ শ্রেণিতে আমার ছোট ভাই আর আমি কাশিয়ানি গিরিশচন্দ্র বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি লাভ করেছিলাম। সপ্তম শ্রেণিতে আমার রোল প্রথম থেকে দ্বিতীয় হয়ে গেলো। তবে অষ্টম শ্রেণিতে আবার প্রথম হয়েছিলাম। এরপরে ওই স্কুল থেকেই ১৯৮৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ ও ১৯৯০ সালে কাশিয়ানি এমএ খালেক ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসিতে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হই। ১৯৯১-৯২ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হই। তবে আমার ইচ্ছা ছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার। কিন্তু বিভিন্ন চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি। পরে আমার বড় ভাই, তিনি ফরেস্ট অফিসার। তিনিই আমাকে গাইড লাইন দিয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য তিনিই উৎসাহ দিয়েছিলেন। বলে রাখা ভালো, বেশ কিছু দিন থেকে আমি পড়াশুনা থেকে দূরে গিয়ে সংস্কৃতি ও খেলাধূলার জগতে চলে গিয়েছিলাম। এজন্য কয়েকটি পরীক্ষার ফলাফলও খারাপ হয়েছিল আমার। অনার্স শেষ হলে আমরা বিভাগের সহযোগিতায় সার্কভুক্ত দেশ ভ্রমণ করেছি । ১৯৯৭ সালে দ্বিতীয় বিভাগে মাস্টার্স শেষ করে ঢাকা বারের সদস্য হয়ে আইন পেশায় নিয়োজিত হই। বছরখানেক পর ২১তম বিসিএস-এ মোটামুটি প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দেই। তখন বিসিএস প্রশাসনই ছিল প্রথম চয়েজ।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: পরিবারের সদস্যরা-
এসএম মোস্তফা কামাল: বাড়িতে আমরা ১১ ভাই বোন। এর মধ্যে আমি তৃতীয়। বাবা মো. আব্দুর রশিদ ছিলেন সরকারি নিরীক্ষা ও হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা। আম্মা জিন্নাতারা বেগম গৃহিনী। ব্যক্তিগত জীবনে দুই ছেলের জনক আমি। একজনের নাম আব্দুল্লাহ দ্বীপ, আরেকজন আপন আহসান। সহধর্মিনী লাভলী কামাল।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনার পূর্বের কর্মস্থল সম্পর্কে কিছু বলুন-
এসএম মোস্তফা কামাল: বিসিএস পরীক্ষায় পাশ করার পরে ২০০৩ সালের ৩১ মে বরিশাল বিভাগে যোগদান করি। সেখান থেকে ৯ জুন বরগুনাতে সহকারি কমিশনার হিসেবে কাজ শুরু। ২০০৮ সালে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও ২০১৬ সালে সাতক্ষীরায় এডিএম হিসেবে কাজ করেছি। এছাড়াও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, গাজীপুরের এডিসি ও সর্বশেষ গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পদে কর্মরত ছিলাম।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: ছোটবেলার কোন স্মৃতি আপনার সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে-
এসএম মোস্তফা কামাল: আসলে আমি নিজেকে পরিব্রাজক মনে করি। আমি যখন যেখানে অবস্থান করি, আমার কাছে সেই জায়গাটি মনে হয় নিজের বাড়ি। আমি যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি তখন একদিন ভাবলাম বাড়ি থেকে অনেক দূরে চলে যাবো। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। দুপুরের পরে বেরিয়ে পড়ে হাটতে হাটতে আমাদের গ্রাম শেষে আরও একটি গ্রামের একটি খালের ধারে গিয়ে পৌঁছলাম। তখন সেখানে লোকজন আমাকে ডাকাত দলের তথ্যদাতা হিসেবে মনে করে ধরে নিয়ে গেল। কিন্তু আমার পরিচয় জানতে পেরে সেই গ্রামেরই আমার এক শিক্ষকের মাধ্যমে আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিল। এটা আমার ছোট বেলার খুব স্মৃতিময় ঘটনা।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: একাদশ সংসদ নির্বাচন সন্নিকটে, নির্বাচনে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কোন ধরণের কৌশল অবলম্বন করবেন-
এসএম মোস্তফা কামাল: সব দল যখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। সবার অংশগ্রহণে দেশ একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এমন একটি নির্বাচনে যাতে সকলে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে। নির্বাচন নিয়ে সাতক্ষীরার মানুষ কি ভাবছে- এবং কারও মধ্যে কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকলে সেটা নির্ণয় করা আমার দায়িত্ব। আমি প্রথমেই সকল বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে বিভিন্ন উপজেলায় ছুটে বেড়িয়েছি। কিন্তু এখন একা একা বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছি-এই জেলার মানুষের মনোভাব বোঝার জন্য। রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব আইন-শৃঙ্খলার বিষয় সমন্বয় করা এবং সকল বিভাগকে সমন্বয় করে সুষ্ঠু নির্বাচন করা। আমি সেটাই করছি। রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দক্ষতা, যোগ্যতা ও একনিষ্ঠতা দিয়ে কাজ করবো। এটা যদি এই জেলার মানুষ পজেটিভলি নেয় ভালো, আর যদি পজেটিভভাবে না নিয়ে তাদের ভেতর কনফিউশন রাখে- তবে সেটা দূর করার দায়িত্ব আমার। আমি সাংবিধানিকভাবে অর্পিত দায়িত্ব পেয়েছি। নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন করার জন্য আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে। এখন সরকারের কথা শুনতে আমি বাধ্য না। আমি সাংবিধানিকভাবে নির্বাচনের জন্য যা করার দরকার তাই করবো।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনি জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত গণশুনানি অব্যাহত রেখেছেন। এটার মাধ্যমে প্রশাসনের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ছে, এ বিষয়ে কিছু বলুন-
এসএম মোস্তফা কামাল: আসলে এটা আমার একটি প্রচেষ্টা- যেখানে আমি মানুষের পাশে গিয়ে তাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলে জানার চেষ্টা করছি। এই গণশুনানির মধ্যদিয়ে যদি একজন মানুষকেও সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারি তবে সেটা আমার জন্য ভাললাগার বিষয়। আমি সর্বদা সরকারের উন্নয়নকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। এটার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মাঝে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আশা করি, গণশুনানি অব্যাহত থাকবে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: ইতোমধ্যে আপনি ঘোষণা দিয়েছেন শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত প্রাণ সায়ের খালের সৌন্দর্য বর্ধনে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন- এ সম্পর্কে জানতে চাই-
এসএম মোস্তফা কামাল: এর আগে সাতক্ষীরাতে দীর্ঘদিন থাকায় প্রাণ সায়ের খাল সম্পর্কে ধারণা ছিল। তাই এই খালকে পুনরুদ্ধার করার জন্য সাতক্ষীরায় এসেই খালের দু’ধার ঘুরে দেখেছি। বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে সমস্যা খুজে বের করার চেষ্টা করেছি। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খালের উন্নয়নের জন্য তিনটি চিঠি পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক বরাবর, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বরাবর ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বরাবর প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাতের সাথে কথা হয়েছে। তিনি ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন আমাদের এই খালটি দেখার জন্যে আসবেন। আমি তাকে নিয়ে এই খালের সবটুকু ঘুরে দেখাবো। সকলে সহযোগিতা করলে খালের সৌন্দর্য বর্ধন সম্ভব হবে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় যোগদান করেছেন এক মাস হয়েছে- সাতক্ষীরা কেমন লাগছে?
এসএম মোস্তফা কামাল: আমি বিশ্বাস করি এই জেলা অপার সম্ভাবনাময়, সকল জেলার শীর্ষে। এই জেলাকে নিজের জেলা মনে হচ্ছে। ভালো লাগছে এখানকার পরিবেশ। এখানে আসার আগে অনেকে আমাকে নানা ধরণের কথা বলেছে। কিন্তু আমি এখানে এসে মানুষের মধ্যে অনেক সম্প্রীতি আর সংস্কৃতিমনা আচরণ দেখতে পেয়েছি। আমি বলতে পারি অন্য সকল জেলার চেয়ে এই জেলার মানুষ অত্যন্ত সংস্কৃতিমনা। এখানে সবচেয়ে বেশি সংস্কৃতি চর্চা হয়।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সংস্কৃতি নিয়ে বলছিলেন- সাতক্ষীরার সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে কীভাবে এগিয়ে নিতে চান-
এসএম মোস্তফা কামাল: সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে আমি প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করতে চাই। আমি নির্দেশ দিয়েছি, সকল স্কুলে সপ্তাহে একদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে। জেলায় স্কাউটিং নিয়ে কাজ করবো। খুব শীঘ্রই স্কাউটিং বিষয়ে কোর্স করা হবে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সুন্দরবনের বড় অংশ সাতক্ষীরা জেলায়- এছাড়াও বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও প্রতœতাত্ত্বিক স্থাপনা সাতক্ষীরার গুরুত্ব বহন করে- পর্যটন শিল্পের এই সম্ভাবনা বিকাশে জেলা প্রশাসনের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাই-
এসএম মোস্তফা কামাল: জেলার পর্যটন নিয়ে আমাদের নিজস্ব পরিকল্পনা আছে। সেসব পরিকল্পনা আস্তে আস্তে বাস্তবায়ন করা হবে। জেলা প্রশাসন এসব নিয়ে অতিশীঘ্রই কাজ শুরু করবে। একই সাথে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সাথে নিয়ে আমাদের কর্মশালা করার পরিকল্পনা আছে। জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন উপজেলার দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখেছি। সম্প্রতি দেবহাটায় মিনি সুন্দরবন ঘুরে দেখেছি। সেখানে দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য টয়লেট ফ্যাসিলিটি, পুলিশ ক্যাম্প, কটেজ তৈরি, বোটিং সিস্টেম স্থাপন করার ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে দর্শনার্থীদের সমাগম আরও বাড়বে। সাতক্ষীরায় প্রতœতাত্ত্বিক জাদুঘরের বাজেট পাশ করা হয়েছে। আমি বিভিন্ন সময়ে দেখেছি শ্যামনগরের ঈশ্বরীপুর থেকে তালার খলিশখালি পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। এসব সংরক্ষণের কাজ করা হবে। ইতোমধ্যে তালায় একটি প্রতœতাত্ত্বিক জায়গার সন্ধান পাওয়া গেছে। সেটাও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। একই সাথে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলোতে ভাস্কর্য স্থাপন করা হবে। যাতে এই এলাকার ছেলেমেয়েরা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি মনে রাখতে পারে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরা-নাভারণ রেললাইন বাস্তবায়ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ছিল। এই প্রকল্প নিয়ে কয়েকটি সমীক্ষাও হয়ে গেছে- এটা কবে নাগাদ বাস্তবায়ন হতে পারে-
এসএম মোস্তফা কামাল: ইতোমধ্যে জেলার মুন্সিগঞ্জের সাথে নাভারণ হয়ে রেল লাইন স্থাপনের জন্যে জরিপের কাজ শেষ হয়েছে। কাজ শুরু হবে তা খুবই দ্রুতই। তবে খুলনা থেকে আরেকটি রেল লাইন স্থাপনের জন্যও চেষ্টা চালাবো। যা যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও বেশি সহজ করবে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: ভোমরা স্থলবন্দর থেকে কলকাতার দূরত্ব সবচেয়ে কম, এজন্য এর বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও বেশি। কিন্তু এ বন্দর দিয়ে প্রশাসনিক জটিলতার কারণে সব পণ্য আমদানি বা রপ্তানি হচ্ছে না- জেলার স্বার্থে এই সীমাবদ্ধতা কীভাবে কাটানো যায় বলে মনে করেন-
এসএম মোস্তফা কামাল: ভোমরা বন্দরের কি কি সমস্যা রয়েছে- আমরা তা জানার জন্য খোঁজ খবর নিচ্ছি। বন্দর কমিটির সভাপতিকে আসতে বলেছি। কি কি সমস্যা রয়েছে- তা জেনে পর্যায়ক্রমে সমাধান করা হবে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: জেলার শিক্ষার মান-উন্নয়নে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন-
এসএম মোস্তফা কামাল: উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে শিক্ষার আধুনিকায়নের কোন বিকল্প নেই। দরকার গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা। আসলে আমি যতটা বুঝেছি জেলায় কোন মনিটরিং নেই- যারা শিক্ষার মান ধরে রাখতে কাজ করবে। এখানে সার্বিক মনিটরিং প্রয়োজন। আমি নির্দেশ দিয়েছি প্রাথমিক শিক্ষাকে আগে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এগিয়ে নিতে হবে। তাই জেলা প্রাথমিক কর্মকর্তাকে বিভিন্ন সময়ে প্রধান শিক্ষকদের সাথে সভা করতে বলেছি। যেখানে আমি উপস্থিত থাকবো। কোচিং নির্ভর শিক্ষা বাদ দিতে হবে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরা সীমান্তবর্তী জেলা। এ জেলায় মাদকের ভয়াবহতা অনেক বেশি- মাদক প্রতিরোধে জেলা প্রশাসন কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন-
এসএম মোস্তফা কামাল: মাদক, সন্ত্রাস ও মানব পাচারের বিরুদ্ধে মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সচেতনতা ছাড়া আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এ সামাজিক ব্যাধিগুলো দূর করা সম্ভব না। এজন্য স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ব্যতিক্রমধর্মী কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার মাছের সুনাম দেশজুড়ে- এছাড়া সাতক্ষীরা থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমান চিংড়ি রপ্তানি হয়- কিন্তু এখানে এখনো কোন রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি- এই বিষয়ে জেলা প্রশাসনের কোন উদ্যোগ আছে কি না?
এসএম মোস্তফা কামাল: মৎস্য কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি। চিংড়ি থেকে কিভাবে রোগ দূর করে মানসম্মত চিংড়ি উৎপাদন করা যায় তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া শুধু চিংড়ি নয়, সকল ধরণের মাছই যাতে রপ্তানি করা যায় সেজন্য পরিকল্পনা করছি। বলে রাখা ভালো এখানকার মানুষের জ্ঞানের জায়গা বৃদ্ধিকল্পে সকল প্রজাতির মাছের একটি জীবনচক্র নিয়ে বই লেখা হবে। যা আগামী বছরের যে কোন সময়ে প্রকাশিত হবে।
একই সাথে আম রপ্তানি করা হচ্ছে। সেজন্য যেসকল বাঁধা আছে তা দূর করতে কাজ করা হবে। বস্তুত সকল প্রকার কৃষিজ উৎপাদিত ফল, ফসল, তরকারিসহ বিভিন্ন দ্রব্যাদি যাতে দেশে এবং দেশের বাইরে রপ্তানি করা যায় তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় প্রচুর খাস জমি রয়েছে। এসব খাস জমি ভূমিহীনদের মাঝে বন্দোবস্ত করার ব্যাপারে জেলা প্রশাসন কী ভাবছে-
এসএম মোস্তফা কামাল: খাস জমি কোথায় কি পরিমাণে আছে, কি অবস্থায় আছে, কোন জমি কে দখল করে রেখেছে, কোন জমিতে মামলা আছে- সব জানার জন্যে একটি কমিটি গঠন করেছি। অচিরেই সকল জমি ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার এর আওতায় আনা হবে। আমি বলতে চাই ভূমিদস্যুদের জন্য আমি অশানি সংকেত হিসেবে কাজ শুরু করবো। এছাড়া আমি জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদানের পর বিভিন্ন ভূমি অফিস পরিদর্শনে গিয়েছি। সেখানে আমি নির্দেশ দিয়েছি, যদি কোন ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যায় তবে তাকে চাকুরিচ্যুত করার দায়িত্ব আমার। সকল ভূমি কর্মকর্তাকে তার সততা আর একনিষ্ঠতার মাধ্যমে কাজ করতে বলেছি।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার ক্রীড়াঙ্গন এখন বেশ মুখরিত- জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি হিসেবে জেলার ক্রীড়াঙ্গনকে এগিয়ে নিতে আপনার পরিকল্পনা জানতে চাই-
এসএম মোস্তফা কামাল: আমি বিশ্বাস করি এই জেলা জাতীয় পর্যায়ের ক্রীড়া ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে- কি ফুটবল কি ক্রিকেট। সকল ক্ষেত্রে এই জেলার ছেলে-মেয়েদের অসামান্য অবদান রয়েছে। তাই এই জেলাকে আরও এগিয়ে নিতে জোরালো পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে উপজেলা ভিত্তিক ট্যালেন্টহান্টের মাধ্যমে ভালো মানের খেলোয়াড় খুঁজে বের করা হবে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সদর হাসপাতালের সেবার মান নিম্নগামী- এটা নিয়ে কী ভাবছেন?
এসএম মোস্তফা কামাল: হাসপাতালের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে কাজ করবো। আরএমও’র সাথে কথা হয়েছে- সেখানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার নির্দেশ দিয়েছি। এছাড়া সামগ্রিক উন্নয়নে কাজ করবো।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরাবাসীর উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন-
এসএম মোস্তফা কামাল: সম্ভাবনাময় এই জেলাকে আরও এগিয়ে নিতে হবে। এই জেলার যে দুর্নাম রয়েছে- তা সাংস্কৃতিক জাগরণের মাধ্যমেই দূর করা সম্ভব। সম্ভাবনাময় এই জেলাকে এগিয়ে নিতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। জেলা প্রশাসনের সকল কার্যক্রম ভালো দৃষ্টিভঙ্গিতে নিতে হবে।

সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় যোগদান করেছেন- এক সময় সরকারি সিদ্ধান্তে চলেও যেতে হবে- যাওয়ার সময় কেমন সাতক্ষীরা রেখে যেতে চান-
এসএম মোস্তফা কামাল: এমন একটি সাতক্ষীরা রেখে যেতে চাই, যেন এই জেলা দেশের শ্রেষ্ঠ জেলার তালিকায় স্থান পায়। একই সাথে বলতে চাই, আমি যখন এই জেলায় যোগদান করেছি তখন কোন ফুলের শুভেচ্ছা নেয়নি, তবে যখন চলে যাবো- তখন যেন আমার কর্মকাণ্ডের কারণে এখানে ফুলের স্তুপ পড়ে যায়।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনাকে ধন্যবাদ।
এসএম মোস্তফা কামাল: সুপ্রভাত সাতক্ষীরাকেও ধন্যবাদ।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version