আবু রাইয়ান: মো: জুলকারনাঈন দোলন সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। ছোটবেলা থেকেই খেলাধূলার প্রতি আগ্রহ তার। সুযোগ পেলেই ব্যাট হাতে মাঠে নেমে পড়তো সে। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় জেলা কোচ মুফাসিনুল ইসলাম তপুর কাছে ক্রিকেটে হাতেখড়ি তার। ক্রিকেটের পাশাপাশি পড়াশুনায়ও বেশ ভাল দোলন। জে.এস.সি পরীক্ষায় জেলায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিল সে।
সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়নের মাগুরা গ্রামের শিক্ষক মো. শমসের আলী ও গৃহিনী আরিফা ফারজানার একমাত্র ছেলের আগ্রহের প্রতি সাড়া দিয়ে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দোলনকে সাতক্ষীরার সুন্দরবন ক্রিকেট একেডেমিতে ভর্তি করে দেন তার মামা আমিমুল এসহান।
ভর্তি হওয়ার পরে ক্রিকেটার তারেকুজ্জামান তারেকের নজরে পড়ে সে। তখন থেকেই তার দক্ষতা উন্নয়নে কাজ শুরু করে দেন তারেক। পরে সাতক্ষীরা গণমুখী সংঘের কোচ আলতাফের অধীনে ব্যাটিং কোচিং গ্রহণ করে সে। আর এরপর সাতক্ষীরার জেলা কোচ মুফাসিনুল ইসলাম তপুর অধীনে প্রশিক্ষণ নিয়ে আরও দক্ষ হয়ে ওঠে সে।
দেড় মাস প্রাকটিস করার পর সাতক্ষীরা অনূর্ধ্ব-১৪ জেলা টিমে ডাক আসে দোলনের। জেলা টিমের হয়ে ২টি হাফ সেঞ্চুরি ও ১টি সেঞ্চুরির সাহায্যে ছয় ম্যাচে ৩৩৭ রান করেছিল সে।
এরপর খুলনা ডিভিশনে ডাক পায় এই ক্ষুদে ক্রিকেটার। পাঁচ ম্যাচে তার ব্যাট থেকে আসে ২৩৪ রান। সেসময় ২টি হাফসেঞ্চুরি ও ১টি সেঞ্চুরিও হাঁকিয়েছিল সে।
তারপর অনূর্ধ্ব-১৫ ন্যাশনাল ক্যাম্পে জায়গা হয় তার। সেসময় সুযোগ পেয়েও সুবিচার করতে পারেনি। ইনজুরিতে পড়ে ন্যাশনাল ক্যাম্প থেকে ছিটকে পড়ে সে। সেসময় ক্যাম্প থেকে তাকে নিয়মিত ব্যায়াম করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
পরে সাতক্ষীরার জেলা কোচ মুফাসিনুল ইসলাম ও আলতাফের অধীনে ফের তার পরিচর্যা করানো হয়। ৩ মাস পরে ইনজুরি কাটিয়ে ২০১৬-১৭ মৌসুমের অনূর্ধ্ব-১৪ এর অধিনায়ক হয়ে আবারো মাঠে ফেরে সে। এসময় ১টি ফিফটি ও ২টি সেঞ্চুরির সাহায্যে ছয় ম্যাচ খেলে ৩০৭ রান করেছিল সে।
পরে অধিনায়ক হয়েই খুলনা ডিভিশনে তিন ম্যাচে ২টি ফিফটিতে ১১৭ রানে করে সে। এরপরে আবারো অনূর্ধ্ব-১৫ ন্যাশনাল টিমে ডাক আসে তার। পাঁচটি ক্যাম্প করার পর এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে অনূর্ধ্ব-১৫ দলের হয়ে ভারত সফর করে দোলন। ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে, টেস্ট ও টি-টুয়েন্টি মিলে আট ম্যাচে ৩৪১ রান করে এই উদীয়মান ব্যাটসম্যান। এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ৯১ রান আসে তার ব্যাট থেকে। এছাড়া টি-টুয়েন্টিতে অধিনায়ক ছিল সে। তার অধিনায়কত্বে ভারতের বিপক্ষে দুইটি টি-টুয়েন্টি ম্যাচে প্রথম ম্যাচে ৯ উইকেটে ও দ্বিতীয় ম্যাচে ৬৪ রানে বিজয়ী হয় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ দল। ভারত সফরে ম্যান অফ দ্য সিরিজ হয়ে সৌরভ গাঙ্গুলীর হাত থেকে পুরস্কার নিয়েছিল দোলন। এরপর ২০১৮-১৯ মৌসুমের অনূর্ধ্ব-১৬ বিভাগীয় পর্যায়ে খেলে সে। এরই ধারাবাহিকতায় জুন মাসে অনূর্ধ্ব-১৭ ন্যাশনাল টিমে ডাক পায় দোলন। কিন্তু আবারো ইনজুরিতে পড়ায় ক্যাম্প থেকে ছয় মাসের বিশ্রাম এবং এক মাস ফিজিওথেরাপি দেওয়া হয়।
ইনজুরিতে পড়া দোলন জানান, ক্যাম্পের নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়মিত ব্যায়াম করছি। বেশি করে স্কিল ও ফিটনেসের প্রতি নজর রাখছি। ইনজুরি কাটিয়ে যাতে দ্রুত ফিরতে পারি সেজন্য কোচের সাথে কাজ করে যাচ্ছি।
ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফিরতে মরিয়া দোলন
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/