এস.এম. নাহিদ হাসান:
ডা. মোখলেছুর রহমান। ১৯৬৬ সালে আশাশুনির হামিদ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে মাঠে সব সময় সরব থাকতো ছাত্রলীগ। এতে উৎসাহিত হয়ে ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়েন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। ঐ বছরই ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সদস্য হন। রাজপথে থেকে ইয়াইয়া সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। ১৯৬৮ সালে এইচএসসি পাশ করে ভর্তি হন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। সেখানে যুক্ত হন ছাত্রলীগের সহযোগী সংগঠন অভিযাত্রী’র সাথে। ১৯৭৪ সালে এমবিবিএস পাশ করে চাকরী জীবন শুরু করেন। চাকরী জীবনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মানুষের সাধ্যমত চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। বিভিন্ন সময় নির্যাতিত দলীয় নেতাকর্মীদের সেবা দিয়ে আস্থা অর্জন করেন তিনি। ১৯৮৩ সালে জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পদে আসার মধ্য দিয়ে মূলধারার রাজনীতিতে যোগ সক্রিয় হন। ‘১৯৯৩ সালে জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে সাতক্ষীরা-৩ আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে জয়লাভের মধ্য দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমান তিনি জেলা স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশায় প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি।
সাতক্ষীরা-৩ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ডা. মোখলেছর রহমান কথা বলেছেন দৈনিক সুপ্রভাত সাতক্ষীরা’র সাথে।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর সেই ১৯৭৫ সালে থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত আশাশুনিতে আওয়ামী লীগের কোন কার্যক্রম ছিলো না। জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে আসার পর ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে এ আসন থেকে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। আমি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রচেষ্টায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই। এরপর আমার নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেই। এরই ধারাবাহিকতায় আমার উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ৯৯টি ওয়ার্ডের প্রত্যেকটি কমিটি প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন করেছি। প্রতিবছর সম্মেলন করে আওয়ামী লীগের যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজে বের করেছি। এছাড়া মানিকখালি নদীতে আমার উদ্যোগেই ফেরীর ব্যবস্থা করা হয়। কুল্যা ব্রিজ তৈরি করেছি। আশাশুনি-ঘোলা সড়ক তৈরি করা হয়েছে। আমার নির্বাচনী এলাকার ভোলাবাড়িয়া বাধ ভেঙে ২৫ মাস ধরে মানুষ পানিবন্দি ছিলো। এলাকার মানুষের সমস্যার কথা ভেবে সেই বাধটাও আমি সংস্কার করেছি। আমার সময় এলাকার উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ খুব কমই পাওয়া যেতো। তারপরও শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য ১৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ করেছি। ৭টা মাদ্রাসার ভবন নির্মাণ করেছি। আশাশুনি কলেজের ভবন করেছি। নারী শিক্ষার অগ্রগতির জন্য আমিই উদ্যোগ নিয়ে আশাশুনি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছি। বর্তমানেও আমি এ কলেজের সভাপতি। ২০০১ সালেও আমি নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করি। কিন্তু জামায়াতের লোকেরা ভোট কেটে নিয়ে বিজয় লাভ করে। আমি মনে করি সততা ও নিষ্ঠার সাথে সাধারণ জনগণকে সাথে নিয়ে এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছি। আমি সংসদ সদস্য থাকাকালিন কারো কাছ থেকে একটা কানা কড়িও নেই নি। মানুষকে হয়রানি করেনি। তাই আমি মনে করি আমার এ কর্মকা- বিবেচনা করে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দেবেন।
সাতক্ষীরা-৩ আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন- এতে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভেদ তৈরি হচ্ছে- এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল এখানে অনেক যোগ্য নেতা থাকবে। অনেকেই মনোনয়ন চাইবে। দলের প্রধান যাকে এলাকার উন্নয়নের জন্য দরকার বলে মনে করবেন তাকে নৌকা প্রতীক দেবেন। যতবেশি মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকবে ততবেশি কর্মীদের মধ্যে নানা মত থাকবে- এটা কোন বিষয় না। আওয়ামী লীগ এমনই একটি রাজনৈতিক দল যেখানে নেত্রীর চাওয়া পাওয়ার কিছুই থাকে না। নৌকাকে জয়ী করতে সকল স্তরের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আবারো নৌকাকে জয়ী করবে। আমি অতীতে যেমন নৌকার বিজয় আনতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। তেমনি এবারো যাকে নৌকা দেবে তাকে বিজয়ী করতে মাঠে থাকবো।
এলাকার মানুষের বর্তমান সমস্যা নিয়ে তিনি বলেন, আমার এলাকার মানুষ নানা কারণে কষ্টে আছে। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলার ব্যাপারে। আমি নির্বাচনে জয় পেলে এলাকায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবো। আশাশুনি এলাকার স্বাস্থ্য সেবার মান অনেক নিচে। আমার ইচ্ছা আছে আমি সুযোগ পেলে এখাতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবো। আমি পেশায় ডাক্তার, সেকারণে এখাতকে উন্নতি করতে ভূমিকা রাখতে পারবো। যেসব এলাকায় লবণ পানির সমস্যা সেখানে নতুন প্রজেক্ট দিয়ে খাবার যোগ্য পানির ব্যবস্থা করবো। এছাড়া শিক্ষাখাতে আরো কাজ করবো এবং বর্তমানে সেসকল উন্নয়ন প্রকল্পগুলো চলমান রয়েছে সেগুলো সমাপ্ত করবো। বর্তমানে আমার এলাকার মানুষ চিংড়ি চাষের সাথে যুক্ত, কিন্তু এখানে কিছু পেশি শক্তি কাজ করে। এগুলো ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের ঘের দখল করে। তাদের ভয়ে মানুষ ভীত সন্ত্রস্ত্র। আমি আশা রাখি নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়ে এলাকার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের সুযোগ দেবেন।
সাতক্ষীরা-৩: সুশাসন প্রতিষ্ঠা, স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন ও সুপেয় খাবার পানির সংকট দূর করবো
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/