Site icon suprovatsatkhira.com

সাতক্ষীরা-১; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে চাই

আরিফুল ইসলাম রোহিত:
সৈয়দ দীদার বখত। জেনারেল এরশাদ রাষ্ট্রপ্রধান থাকাকালে দায়িত্ব পালন করেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে। একই সময়ে ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী। রাজনীতির হাতেখড়ি খুলনা বিএল কলেজ থেকে। তখন ১৯৬২ সাল। যোগদান করেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নে। সেসময় ছাত্র সংসদ নির্বাচেন তাকে ছাত্র ইউনিয়ন থেকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়। তিনি বিএল কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। নেতৃত্ব দিয়েছেন ৬২’র শিক্ষা কমিশন বাতিল ও আইউব খান বিরোধী আন্দোলনে। এসময় তাকে কারাভোগ করতে হয়েছে। খুলনা বিএল কলেজ সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ১৯৬৪ সালে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। পরে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে মাস্টার্স করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের সাথে কাজ করেছেন। এছাড়া পাওনিয়র যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি খুলনার যুব সমাজ যাতে নেতৃত্ব সম্পন্ন নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে সেজন্য প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন ব্লাক অ্যান্ড হোয়াইট ক্লাব। বর্তমান খুলনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বাগেরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান টুকু ওই ক্লাবের সাথেই যুক্ত ছিল। পরে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নিয়ে ১৯৬৬ সালে কাজ শুরু করেন কবি সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত ‘সমকাল’ সাহিত্য পত্রিকায়।
এছাড়াও ঢাকা ট্যানারি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। পাওনিয়র যুবলীগকে সাথে নিয়ে শ্রমিক সংগঠন তৈরির জন্য আদমজী এবং টঙ্গীতে শ্রমিকদের সাথে কাজ করেছেন। জেনারেল এরশাদ যখন রাষ্ট্রপতি, তখন সাংবাদিকতা করতেন তিনি। রাষ্ট্রপতি এরশাদ তাকে নিয়ে আসেন তার দলীয় রাজনীতিতে। সেসময় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করেন সাতক্ষীরা থেকে। ১৯৮৮ সালে জাতীয় সংসদের এমপি নির্বাচিত হন। দায়িত্ব পান জাতীয় সংসদের হুইপ হিসেবে। পরে রাষ্ট্রপতি এরশাদ প্রথমে তাকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও পরে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেন। বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আলোকিত মানুষ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করেছেন জনপ্রতিনিধি হিসেবে।
একই উদ্দেশ্যে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সৈয়দ দীদার বখত সাতক্ষীরা-১ আসন থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী।
সংসদীয় আসনের বিভিন্ন সমস্যা-সম্ভাবনা আর দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন সুপ্রভাত সাতক্ষীরা’র সাথে।
ব্যক্তিগত রাজনৈতিক জীবন নিয়ে তিনি বলেন, জেনারেল এরশাদ রাষ্ট্রপতি থাকাকালে আমি সাতক্ষীরা, নড়াইল, বাগেরহাট উন্নয়ন কমিটির সাথে যুক্ত ছিলাম। আমার সময়ে জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী ও জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উৎসব পালিত হয়েছে। নজরুল ইসলামের নামে ত্রিশালে স্কুল, কলেজ জাতীয়করণ করা হয়েছে এবং সেসময় আমার উদ্যাগেই নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সাতক্ষীরার মানুষ সেসময় শিক্ষায় অনেক পিছিয়ে ছিল। এজন্য এ অঞ্চলে অনেক স্কুল-কলেজ তৈরি করেছি। কিছু স্কুল-কলেজ জাতীয়করণ করেছি। তালা সরকারি কলেজ নিজের উদ্যোগেই তৈরি করেছি। তালা বিদে ইনস্টিটিউশন স্কুল, আলী আহমেদ বালিকা বিদ্যালয় আমিই জাতীয়করণ করেছি, কলারোয়া কলেজকে শিক্ষাবিদ আমানুল্লাহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, কিন্তু জাতীয়করণ আমি করেছি। সাতক্ষীরা মহিলা কলেজও আমি জাতীয়করণ করেছি। এছাড়া আমি যখন ছাত্র ছিলাম তখন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১টি দফা ছিল। আমাদের তার মধ্যে একটা দাবি ছিল খুলনায় একটা বিশ^বিদ্যালয়ের। আমি যখন মন্ত্রণালয়ে যায়, আমি সচিবালয়ে গিয়ে খুলনায় একটা বিশ^বিদ্যালয়ের জন্যে অনুমোদন নিয়ে এসেছি।
এছাড়া সাতক্ষীরায় মন্ত্রীদের থাকার জায়গা ছিল না, তাই সার্কিট হাউজ করেছি, পুলিশ লাইন করেছি, জেলা পরিষদের ভবন তৈরি করেছি, জর্জকোটের জন্য জায়গা বরাদ্দ করেছি, জেলা কালেক্টরেট নির্মাণ করেছি, এলজিইডি ভবন নির্মাণ করেছি, সাতক্ষীরা বাসটার্মিনাল, টিভি টাওয়ার নির্মাণ করেছি। সাতক্ষীরা রেজিস্ট্রি অফিস, সড়ক ও জনপদের অফিস, বিনেরপোতায় কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউট আমার সময়েই তৈরি করেছি। বিনেরপোতায় বিসিক আমি আর ডা. এম আর খান মিলে তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলাম। আমিই তা বাস্তবায়ন করেছি।
আমরা লেখাপড়া শিখেছি চার কিলোমিটার হেটে। আমি চিন্তা করেছিলাম যেন আমার ছেলেমেয়েদের কষ্ট করে লেখাপড়া না শিখতে হয়। একই সাথে চিন্তা ছিল মাছের বাজারকে বিস্তৃত করা। যে কারণে তালা ১৮ মাইল থেকে পাইকগাছা পর্যন্ত ও সাতক্ষীরা থেকে মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত রাস্তা করেছি। আর বর্তমানে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার মাছ রপ্তানি হচ্ছে। সরসকাটি ব্রিজ তৈরি করেছি, তালা ব্রিজের পরিকল্পনা আমি করেছি, ইসলামকাটি ব্রিজের ব্যাপারে আমার সহযোগিতা ছিল, ইসলামকাটি সাব রেজিস্ট্রি অফিস নষ্ট ছিল, আমি তৈরি করেছি। কলারোয়া পৌরসভা তৈরি করেছি, সেখানে বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন তৈরি করেছি, পাটকেলঘাটায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি আমার সময়েই তৈরি করা হয়েছে। কলারোয়া থেকে খোরদো সেখান থেকে কাজীরহাট পর্যন্ত রাস্তা তৈরি করেছি। দলুয়া থেকে পাটকেলঘাটা সেখান থেকে কলারোয়া চান্দুরিয়া পর্যন্ত রাস্তা করেছি, দমদম বাজারে ব্রিজ করেছি, হঠাৎগঞ্জে ব্রিজ করেছি। কলারোয়া তখন বেতনা নদীর কারণে দুইভাগ ছিল, আমিই বেতনা নদীতে ব্রিজ করেছি।
১৯৮৮ সালে বিশাল ঝড় হলো। অসংখ্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কিন্তু আমি মানুষকে বুঝতেই দেয়নি। বিভিন্ন এনজিওকে ডেকে নিয়ে এসে সংস্কার কার্যক্রমের ব্যবস্থা করেছি। সরকারি সাহায্য আসার আগেই মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। ২০০০ সালে বন্যার সময় আমার সাথে যেসব বেসরকারি সংস্থার সম্পর্ক ছিল তাদের সবাইকে ডেকে নিয়ে সাহয্যের ব্যবস্থা করেছি। কাথন্ডা থেকে ভোমরা পর্যন্ত রাস্তা তৈরি আমার সময়ে। কাকশিয়ালি ব্রিজ করেছি, সাতক্ষীরায় বেতনা নদীর পানি যাতে ভালোভাবে বের হতে পারে সেজন্য কামারডাঙ্গীতে সাতগেট বিশিষ্ট স্লুইস গেট তৈরি করেছি। পাটকেলঘাটায় ডাক বাংলো তৈরি করেছি।
এছাড়া অসংখ্য মসজিদ, মন্দির, প্রাইমারি স্কুল তৈরি করেছি। আজকে এতো নেতা তৈরি হয়েছে, কারণ তারা শিক্ষিত হয়েছে, আমিই তাদের আলোকিত মানুষ তৈরি করার কাজ করেছি। আর তাই বিশ্বাস করি আমাদর দল আমাকে মনোনয়ন দিয়ে এই অনগ্রসর এলাকাকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করবে। আমি চাই এই এলাকাকে এগিয়ে নিতে।
দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করলে কোন কাজগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মানুষকে আরও বেশি শিক্ষিত করতে চাই। একারণে সাতক্ষীরায় একটি পাবলিক বিশ^বিদ্যালয় ও একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় করতে চাই। দ্বিতীয়ত সাতক্ষীরার একটি বিশাল যুব সমাজ ক্রীড়াক্ষেত্রে অবদান রাখছে। আমাদের সৌম্য সরকার, মুস্তফিজুর রহমান ও সাবিনাসহ আরও অনেকে ভালো করছে। এছাড়া যারা বিভিন্ন উপজেলায় রয়েছে তাদেরকে এগিয়ে আনতে একটি ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে চাই। একই সাথে জেলায় একটি স্টেডিয়াম চাই যেখানে থাকবে সুইমিং পুল, টেনিস মাঠ ও যাবতীয় ক্রীড়াসামগ্রী। আর তৃতীয়ত, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে চাই। প্রত্যেকটি উপজেলায় যারা অর্থনৈতিকভাবে সামর্থবান তাদেরকে নিয়ে মিল, কল-কারখানা তৈরি করতে চাই।
বর্তমানে জনগণের দুর্ভোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্ভোগ হলো, আমাদের এখানে অনেক কিছু উৎপাদন হয়, কিন্তু সেসব সংরক্ষণ করার মতো জায়গা নেই। অনেক পণ্যদ্রব্য নষ্ট হয়ে যায়। এসব পণ্যদ্রব্য যাতে আর নষ্ট না হয় সেজন্য কুটিরশিল্প করতে হবে। আমাদের দেশের মানুষ রাজধানী নির্ভর হয়ে পড়ছে। এটাও তাদের বড় কষ্টের কারণ। আমরা চাই প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা। তাহলে নিজেদের অর্থ দিয়ে নিজেরা উন্নয়ন করতে পারবো। আমাদের ছেলেমেয়েদের ভালো কিছু উপহার দিতে পারবো। তাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে আসতে পারবো। এছাড়া কিছু কিছু এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ যায়নি। আমি চাই সকল মানুষের বাড়ি বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করতে।
আসলে আমি শুধুমাত্র আমার আসনের মানুষকে নিয়ে চিন্তা করি না। পুরো সাতক্ষীরা জেলাকে নিয়ে কাজ করতে চাই। আর এজন্য পাশে চাই আমার এলাকার, আমার জেলার মানুষকে। আমি বিশ্বাস করি আমি যা স্বপ্ন দেখছি, তা বাস্তবায়ন খুব বেশি কঠিন না। তাই বিশ্বাস রাখি সকলের সহযোগিতা পেলে আমি অবশ্যই আমার এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবো। আমি শুধু মানুষের পাশে দাাঁড়াতে চাই। চাই আমার এই এলাকা এগিয়ে আসুক সব দিক থেকে। এগিয়ে আসুক আমাদের ছেলে-মেয়েরা। তাদের জন্যই আমার সব ভালো কাজ উৎসর্গ করা।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version