Site icon suprovatsatkhira.com

শরীক নিয়ে অস্বস্তিতে কোন্দলে বিপর্যস্ত আ’লীগ: মাঠে নেই বিএনপি-জামায়াত

বি.এম. জুলফিকার রায়হান ও মোজাহিদুল ইসলাম: সাতক্ষীরা-১ আসন (জাতীয় সংসদ-১০৫)। আসনটি জেলার তালা ও কলারোয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত। রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এ আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটে প্রার্থীর যেমন ছড়াছড়ি রয়েছে, তেমনি বিএনপি ও জামায়াতেরও রয়েছে শক্ত প্রার্থী।
চার লক্ষ ২২ হাজার ৮৯৮ জন ভোটারের এ আসনে আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের সম্ভাব্য প্রার্থীরা গণসংযোগ শুরু করেছেন বেশ জোরেসোরেই। প্রতিদিন সকাল থেকেই নির্বাচনী পথসভা, মতবিনিময়, কর্মী সমাবেশ, লিফলেট বিতরণসহ মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বের করছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। সেই সাথে সরকারি কর্মসূচিতেও উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে নৌকায় ভোট প্রার্থনা করছেন তারা।
তবে, নিজেদের শক্ত প্রার্থী থাকলেও মাঠে নেই বিএনপি-জামায়াত।
অভিযোগ, ক্ষমতাসীনরা সব ধরনের কর্মসূচি পালন করতে পারলেও মাঠে নামতে দেওয়া হচ্ছে না বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের। প্রতিনিয়ত গায়েবি মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে তাদের। রাজতৈনিক কর্মসূচি তো দূরে থাক, চায়ের দোকানেও বসতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে বিদ্যমান কোন্দলকে কাজে লাগাতে চান তারা।
বর্তমানে এ আসনের সংসদ সদস্য বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য ও জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের মনোনয়নে নৌকা প্রতীকে ভোট করে বিজয়ী হয়েছিলেন তিনি। এবারও অংশ নিতে চান নির্বাচনে। সেই লক্ষ্যে নিজ দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করার পাশাপাশি গণসংযোগ করছেন তৃণমূলেও। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তার নির্বাচনী এলাকা তালা-কলারোয়াতেই বেশি সময় কাটিয়েছেন তিনি।
যদিও আসনটি দলীয়ভাবে ফিরে পেতে চায় আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে আওয়ামী লীগেরও একাধিক প্রার্থী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
দলীয় মনোনয়নের আশায় গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান।
একইভাবে তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নূরুল হক, কলারোয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ স্বপন, সাবেক প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য শহীদ স ম আলাউদ্দিনের মেয়ে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক লায়লা পারভিন সেঁজুতিসহ কয়েকজন আওয়ামী লীগের মনোনয়নের প্রত্যাশায় গণসংযোগ করছেন।
তবে, শুধু ওয়ার্কার্স পার্টি নয়, আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সাতক্ষীরা-১ আসনের দিকে নজর রয়েছে জাতীয় পার্টি এবং জাসদেরও।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের তথ্য উপদেষ্টা সাবেক তথ্যপ্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখত্ ও জাসদের (ইনু) কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক ওবায়দুস সুলতান বাবলুও মনোনয়নের প্রত্যাশায় নিয়মিত গণসংযোগ করছেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা চান, শরীক নয়- সাতক্ষীরা-১ আসনে সরাসরি আওয়ামী লীগের কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হোক।
যদিও সেক্ষেত্রে বিপত্তি রয়েছে। কারণ জোটগত নির্বাচনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি যে কয়টি আসন ভাগ পাবে- সে কয়টি আসনে প্রার্থী মনোনয়নে দলটিতে এগিয়ে আছেন অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ।
আবার, জাতীয় পার্টি নেতা সৈয়দ দিদার বখত্ও দলীয়ভাবে শক্ত প্রার্থী। তাই সাতক্ষীরা-১ আসনে প্রার্থী মনোনয়ন ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে অস্বস্তিতেই রয়েছে আওয়ামী লীগ।
এ আসনের দুটি উপজেলাতেই (তালা ও কলারোয়া) আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দুই শিবিরে বিভক্ত। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকদের মধ্যে মুখ দেখাদেখি নেই দীর্ঘদিন। এই সূত্র ধরে বিভক্ত অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোও।
তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতে, অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে ব্যর্থ হলে আগামী নির্বাচনে ভরাডুবি ঘটতে পারে দলটির।
এদিকে, একক প্রার্থী নিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বিএনপি।
যদিও দলটির কোন কার্যক্রম নেই এ আসনে। তবে, বিএনপি নির্বাচনে আসলে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবই যে দলটির প্রার্থী হবেন- এমন বিশ^াস তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মাঝে। একই সাথে বর্তমানে তারা কোন প্রচার-প্রচারণা না চালালেও সর্বত্র সুশাসনের ঘাটতি ও ক্ষমতাসীনদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কাজে লাগিয়ে বিজয় ঘরে তুলতে চায় দলটি। যদিও একাধিক মামলার আসামি হওয়ায় তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে কিছুটা সংশয় রয়েছে।
সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিব যদি কোনভাবে নির্বাচন করতে ব্যর্থ হন তাহলে তার স্ত্রী অ্যাড. শাহানারা পারভীন প্রার্থী হবেন বলে দলের মধ্যে প্রচারণা রয়েছে। যদিও তালা উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ শফিকুল বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছেন, বিষয়টি আমার জানা নেই।
সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে করণীয় নিয়ে হাবিবুল ইসলাম হাবিব ইতোমধ্যে গোপনে পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি এবং ডুমুরিয়া উপজেলার আঠারোমাইল এলাকায় দুটি সভা করেছেন। সেখানে তালা ও কলারোয়া উপজেলার এবং সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। একাধিক মামলার কারণে হাবিবুল ইসলাম হাবিব প্রকাশ্যে আসেননি।
ঠিক একইভাবে এ আসনে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জতউল্যাহকে নিয়ে আশাবাদী জামায়াতের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। বিএনপি জোটগতভাবে নির্বাচনে আসলে সাতক্ষীরা-১ আসনে মনোনয়ন চাইবে দলটি। কারণ এ আসনে শক্ত ঘাটি রয়েছে জামায়াতের। বিগত ১৯৯১ সালে এই আসন থেকে জামায়াতের এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন অ্যাড. শেখ আনছার আলী। বিএনপির প্রচার-প্রচারণাসহ সাংগঠনিক কর্মকা- থেমে থাকলেও থেমে নেই জামায়াতের সাংগঠনিক কর্মকা-। বরং অতীতের যে কোনও সময়ের চেয়ে বর্তমানে অধিকতর শক্তিশালী অবস্থানে থাকায় নিজ দলের প্রার্থী দিতে অনড় অবস্থানে রয়েছে জামায়াত। তাই বিএনপিও প্রার্থী মনোনয়নে থাকবে চাপে।
কলারোয়া উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রইচ উদ্দিন জানান, বিএনপির নেতাকর্মীরা হামলা মামলায় জর্জরিত। প্রতিনিয়ত তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। তারপরও কেন্দ্রের নির্দেশ পেলেই যে কোন সময় দৃশ্যপট বদলে যেতে পারে। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং সাধারণ মানুষের উপর সরকারের দমন পীড়নের কারণে মানুষ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। মানুষ যদি সঠিকভাবে ভোট দিতে পারে- তাহলে নির্বাচনে বিএনপির জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।
তালা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মৃনাল কান্তি রায় বলেন, আমাদের তো মাঠে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। সামাজিক অনুষ্ঠানে গেলেও নাশকতার পরিকল্পনার গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে। তারপরও বিএনপির নেতা-কর্মীরা প্রস্তুত, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করুক, বিএনপির জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। এই ভয়েই আমাদের নেতা-কর্মীদের ঘরে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না।
এদিকে, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে উপজেলা সম্পাদকের সাথে দীর্ঘদিন মুখ দেখাদেখি না থাকলেও আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ স্বপন কোন্দলের বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, আমি মনে করি দলে কোন কোন্দল নেই। স্থানীয় একটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উপজেলা সম্পাদকের সাথে দূরত্ব তৈরি হলেও তা ঠিক হয়ে যাবে। এর প্রভাব নির্বাচনে পড়বে না। সাতক্ষীরা-১ আসন আওয়ামী লীগের সিট বলে পরিচিত। তাই এই সিটে আমরা আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন চাই।
এদিকে, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদক মহিবুল্লাহ মোড়ল জানান, আগামী নির্বাচনেও সাতক্ষীরা-১ আসনে মনোনয়নের ব্যাপারে ওয়ার্কার্স পার্টি আত্মবিশ^াসী। নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা তৃণমূলে অব্যাহতভাবে কাজ করছি।
আওয়ামী লীগে কোন্দল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বড় দলে কোন্দল থাকে- তাদের মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যাও বেশি হবে এটাই- স্বাভাবিক। কিন্তু নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার পর আর কোন্দল থাকে না, সবাই এক কাতারে এসে কাজ করে। তারা মনোনয়ন পেলে জোটগতভাবে আমরাও তাদের সাথে কাজ করবো। তাদের সাথে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version