কালিগঞ্জ প্রতিনিধি: “যত দিন শেখ হাসিনাকে আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছে ততদিন এই বাংলার মসনদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি ছাড়া আর কারো বসার সুযোগ নেই। শুধু বাংলা নয় গোটা বিশ্বে শেখ হাসিনার সমতুল্য কেউ নেই। শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করতে আমি সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে রাজী আছি।”
শনিবার (২০ অক্টোবর) রাতে কালিগঞ্জ উপজেলার ধুলিয়াপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে ধলবাড়ীয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ আয়োজিত গণসংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্য স ম জগলুল হায়দার এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, গত পাঁচ বছর অযথা কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়নি, কাউকে হয়রানি করিনি, কারোর চোখের পানি ঝরায়নি। জনতার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, কেউ কি বলতে পারবেন কাউকে হয়রানি করা হয়েছে কি-না? জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি নৌকার মাঝি বানাইয়ে আমাকে পাঠাইয়ে দেয় তাহলে আবারো আপনাদের খেদমতে আসব। আর যদি অন্য কাউকে মনোয়ন দেন তাহলে বিসমিল্লাহ বলে তল্পি তল্পা ঘাড়ে নিয়ে তার পিছে পিছে হাঁটব। নৌকার পক্ষে ভোট ভিক্ষা করব।
নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে জগলুল হায়দার বলেন, শ্যামনগর ও কালিগঞ্জে যে উন্নয়ন হয়েছে- তা স্বাধীনতা পরবর্তী আর কোন সময়ে হয়নি। শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে দু’ই উপজেলায় দুটি স্কুল ও দুটি কলেজ সরকারিকরণ করা হয়েছে। দু’টি সরকারি কারিগরি স্কুল নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে প্রায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই উপজেলায় দু’টি মিনি স্টেডিয়াম এবং শ্যামনগর উপজেলায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের কাজও শুরু হবে।
সংসদ সদস্য বলেন, নির্বাচনী এলাকার শতশত কিলোমিটার পাকা রাস্তা, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে। শ্যামনগর সরকারি কলেজে দু’টি পাঁচ তলা আবাসিক হল নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে। দুটি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সভবন নির্মাণ করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল কমপ্লেক্সের কাজও দ্রুত শুরু হবে।
তিনি বলেন, শ্যামনগর ও কালিগঞ্জের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া হয়েছে। যাদের বাড়ীতে এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি কিন্তু অস্বচ্ছল ও দরিদ্র তাদেরকে সোলার প্যানেল দেয়া হয়েছে। হাজার হাজার অসুস্থ ও অসহায় মানুষের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। এমন কোন সেক্টর নেই যে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।
জগলুল বলেন, সাধারণ মানুষের পাশে থাকতে গ্রামে গ্রামে ঘুরে তাদের খোঁজ নিয়েছি, যথাসাধ্য সাহায্য সহযোগিতা করেছি। রাত নেই দিন নেই যে যেখানে ডেকেছে ছুঁটে গিয়েছি। ঝড়ের রাতে যখন ৬/৭ নম্বর বিপদ সংকেত সে সময়েও উপকূলীয় এলাকার গ্রামে গ্রামে ঘুরে তাদের সাহস যুগিয়েছি, তাদের পাশে থেকেছি।
নৌকা প্রতিকে ভোট প্রার্থনা করে এই সংসদ সদস্য বলেন, শেখ হাসিনাকে পুনরায় রাষ্ট্র ক্ষমতায় আনতে না পারলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থেমে যাবে। তিনি প্রধানমন্ত্রী বলেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শেষ উপজেলায় এতো উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, বিদায় বেলায় বলে যেতে চাই, দেশরতœ শেখ হাসিনাকে তোমরা কোন দিন ভুলো না। তোমাদের হৃদয়ের মাঝে দিও মোরে ঠাই, জীবিত অবস্থায় আমাকে যদি মূল্যায়ন করতে না পারো, তাহলে জীবনের গীত যদি জ্বালাতে নাহি পারো সমাধি পরে মোর জ্বেলে দিও। জেলে দিও।
আবেগঘন বক্তৃতায় জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের কবিতার কয়েকটি লাইন উদ্ধৃত করে অভিমান করে দূরে থাকা দলীয় নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে জগলুল হায়দার বলেন, শুন্য এ হৃদয় পাষানি মোর আয়, ফিরে আয়, ফিরে আয়, ফিরে আয়। দেশরতœ শেখ হাসিনার মুখের দিকে তাকিয়ে সবাইকে ফিরে আসার আহ্বান জানান তিনি।
ধলবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সজল মুখার্জীর সভাপতিত্বে ও উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ উজ্জলের সঞ্চালনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোজাহার হোসেন কান্টু, শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জহুরুল হায়দার বাবু, রতনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল হোসেন খোকন, কুশুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী কাওফিল অরা সজল, কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তফা কবিরুজ্জামান মন্টু, সাধারণ সম্পাদক সুরুজ আলী, দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফছার আলী, মথুরেশপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন মনো, মৌতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দুলাল চন্দ্র ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন, শ্যামনগরের আটুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জি. এম কামরুল ইসলাম, কৈখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম প্রমুখ। অনুষ্ঠান শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ হয়।
