আরিফুল ইসলাম রোহিত:
সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বদলে যাচ্ছে সদর উপজেলার শিক্ষাঙ্গন। গ্রামগঞ্জে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় নির্মিত হচ্ছে সুউচ্চ ভবন। ইতোমধ্যে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। এতে দূর হতে শুরু করেছে শ্রেণিকক্ষ সংকট। যেখানে আগে গ্রামগঞ্জের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষ সংকট লেগেই থাকতো, সেখানে শিক্ষাখাতে অবকাঠামোগত উন্নয়নে এই অভূতপূর্ব সাফল্য দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছে সাধারণ মানুষ।
উন্নয়ন বঞ্চিত এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুউচ্চ নতুন ভবন পেয়ে উচ্ছ্বসিত ছাত্র-ছাত্রীরা। সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক আর অভিভাবকরাও।
সাতক্ষীরা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবির প্রচেষ্টায় ও ডিও অনুযায়ী ২৬টি অনুন্নত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন চারতলাবিশিষ্ট ভবন নির্মিত হচ্ছে। এর মধ্যে ৬টি কলেজ, ১০টি বেসরকারি স্কুল, ২টি সরকারি স্কুল ও ৮টি মাদ্রাসা রয়েছে। ইতোমধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে বেশ কয়েকটি ভবনের। এছাড়াও ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভবন ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ এবং ১৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একতলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। কোথাও কোথাও কাজ শেষ পর্যায়ে, আবার কোথাওবা কাজ শুরু হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, নির্বাচিত বেসরকারি কলেজ উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতায় ৬টি কলেজে ১৫ কোটি ( প্রত্যেকটি ২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা) টাকা ব্যয়ে ৪তলা ভিত্তি বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। এর মধ্যে কুলিয়া ইউনাইটেড মডেল কলেজ, ঝাউডাঙ্গা কলেজ ও অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান কলেজে ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। কাজ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে এম এ গফুর মডেল কলেজ, গাভা আইডিয়াল কলেজ ও সাতক্ষীরা সিটি কলেজের নির্মাণাধীন ভবনের।
এছাড়া নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতায় ১০টি বিদ্যালয়ের প্রত্যেকটিতে ২ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৪তলা ভিত্তি বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। বিদ্যালয়গুলো হলো পুলিশ লাইন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সাতক্ষীরা নৈশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাছখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বল্লী ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ভালুকা চাঁদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আলিপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ঝাউডাঙ্গা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ভবানীপুর ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
এছাড়া, নির্বাচিত বেসরকারি ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ঊর্ধŸমুখী ভবন সম্প্রসারণের কার্যক্রম পাশ করা হয়েছে। ৫০ লক্ষ টাকা থেকে ৫ কোটি পর্যন্ত ব্যয় ধরে এসব বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ করা হবে। বিদ্যালয়গুলো হলো, মির্জানগর আইডিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ঘোনা ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ডিবি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ডিবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শাখরা কোমরপুর এজি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বৈকারি মাদ্যমিক বিদ্যালয়, ভাড়–খালী মাদ্যমিক বিদ্যালয়, খেজুরডাঙ্গা আর কে মাদ্যমিক বিদ্যালয় ও শিবপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
একই সাথে নির্বাচিত বেসরকারি মাদ্রাসা উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতায় ৮টি মাদ্রাসার প্রত্যেকটিতে ২ কোটি ৭৫ লক্ষ ব্যয়ে ৪তলা ভবন নির্মাণের দরপত্র নির্বাচনের মাধ্যমে শুরু করা হয়েছে। মাদ্রাসাগুলো হলো, মির্জানগর দাখিল মাদ্রাসা, খাদিজাতুল কোবরা মহিলা মাদ্রাসা, ঘোনা রহমানিয়া দাখিল মাদ্রাসা, গাভা দাখিল মাদ্রাসা, গোদাঘাটা বরকাতিয়া দাখিল মাদ্রাসা, বকচরা আহমাদিয়া দাখিল মাদ্রাসা। পরবর্তীতে আরও ২টি মাদ্রাসা এই কর্মযজ্ঞে যোগ হবে। এছাড়া একই সময়ে ডিপিবি এর আওতায় আরও ৬৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হবে সাতক্ষীরা আলিয়া মাদ্রাসা, কুখরালী মাদ্রাসা ও আগড়দাড়ি মহিলা মাদ্রাসার ভবন।
এদিকে সূত্র আরও জানায়, রাজস্ব বাজেটের মাধ্যমে ৭৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন ভবন ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এই কার্যক্রমের আওতায় শিবপুর ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রায়পুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ভালুকা চাদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সীমান্ত কারিগরি কলেজ, টাউন গার্লস মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আলিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভবন সম্প্রসারণ করা হবে।
এছাড়া সম্প্রসারণ কাজ শেষ হয়েছে ছফুরুন্নেছা মহিলা কলেজ, এ করিম গার্লস হাইস্কুল, ডিবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শহীদ স্মৃতি ডিগ্রী কলেজ, সোনার বাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ডিবি বালিকা বিদ্যালয়, গাভা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দ্যা পোল স্টার হাইস্কুলে।
অপরদিকে, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতায় সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬তলা ভিত্তি বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হবে। একই সাথে সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে এক তলা বিশিষ্ট ভোকেশনাল ভবন নির্মিত হবে।
সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে ১২৫ শয্যা বিশিষ্ট ছাত্রী নিবাস নির্মাণাধীন রয়েছে। একই সাথে ৪র্থ ও ৫ম তলার ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজ শেষ হওয়ার পথে।
জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর জানায়, নির্মিতব্য এসব ভবনে শ্রেণিকক্ষের পাশাপাশি স্থাপন করা হবে আইসিটি ক্লাসরুম, লাইব্রেরি, প্রতিটি ফ্লোরে স্যানিটেশন ব্যবস্থা (ছেলে ও মেয়ে পৃথক), প্রতিবন্ধীদের জন্যেও থাকবে আলাদা টয়লেট। এছাড়া প্রতিটি শ্রেণিকক্ষ হবে স্মার্ট শ্রেণি কক্ষ। ৪তলা বিশিষ্ট ভবনে থাকবে শিক্ষকদের মিলনায়তন, পরীক্ষার হল, ছাত্র-ছাত্রী কমন রুম, ৩০টি কম্পিউটার সমৃদ্ধ আইসিটি ল্যাব, ক্যান্টিন, লাইব্রেরি ও বিজ্ঞানাগার। আরও প্রদান করা হবে আসবাপত্র এবং পর্যায়ক্রমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
ছফুরুন্নেছা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী লতা কর্মকার জানান, আমাদের কলেজে শ্রেণিকক্ষের সংকট ছিল। সব ছাত্রীদের একসাথে বসার জায়গা ছিল না। এই সরকারের আমলে সেই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। কারণ আমাদের এখানে একটি নতুন ভবন তৈরি করা হয়েছে। আরও একটি ভবন তৈরি করা হচ্ছে। এতে আমরা সত্যিই সরকার ও সংসদ সদস্য রবির নিকট কৃতজ্ঞ।
গাভা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী আসমা খাতুন জানায়, আমাদের এই বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষের সংকট ছিল। কিন্তু আমাদের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবির প্রচেষ্টায় এই সংকট দূর করার জন্য চারতলা বিশিষ্ট ভবনের কাজ শুরু হয়েছে। আর আমাদের শ্রেণি কক্ষের সংকট থাকবে না।
সাতক্ষীরা নৈশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শিখা রাণী জানান, আমাদের বিদ্যালয়ে অত্যন্ত গরীব ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশুনা করে। তাদের ভালো শ্রেণিকক্ষ নেই। নেই কোন মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম। তবে সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি আমাদের সেই সংকট থেকে মুক্তি দিয়েছেন। অতিদ্রুত আমাদের চারতলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণের কাজ উদ্বোধন করা হবে। আর এই কারণে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরাও বেশ খুশি।
নবারুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মালেক গাজী বলেন, ‘আমাদের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত কক্ষ ছিল না। তাই কক্ষ সংকট দূর করার জন্যে সংসদ সদস্যের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় আমাদের চারতলা বিশিষ্ট ভবনের বরাদ্দ পেয়েছি। ইতোমধ্যে এক তলার কাজ শেষ হয়েছে। এই চারতলা ভবন নির্মাণ শেষ হলে আমাদের স্কুলে আর শ্রেণিকক্ষের সংকট থাকবে না। এর জন্যে আমরা সত্যিই সংসদ সদস্য রবি এমপি ও শিক্ষা বান্ধব সরকার শেখ হাসিনার নিকট কৃতজ্ঞ।’