Site icon suprovatsatkhira.com

সাতক্ষীরা-৪: রেললাইন ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, পর্যটন খাতের উন্নয়ন এবং সুশাসন নিশ্চিত করবো

শেখ শাওন আহমেদ সোহাগ:
সাঈদ মেহেদী। কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ১২নং মৌতলা ইউপি চেয়ারম্যান। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান সাঈদ মেহেদী ১৯৯২ সালে কালিগঞ্জ কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৯৪ সালে কালিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৯৮ সালে কালিগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ এর কালিগঞ্জের আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালে কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।
কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের এই নেতা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তি প্রসঙ্গে তিনি দৈনিক সুপ্রভাত সাতক্ষীরাকে বলেন, ছাত্রলীগের আদর্শিক রাজনীতির ধারক বাহক হিসাবে সর্বজনীনভাবে সততার দৃষ্টান্ত স্থাপনের ধারাবাহিকতা আমার রাজনৈতিক উত্থানের মূল কারণ। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অবৈধ নির্বাচন প্রতিরোধে ছাত্রলীগ নেতা হিসাবে শিক্ষিত যুবকদের উদ্বুদ্ধ করে অবৈধ নির্বাচন প্রতিহত করতে সাতক্ষীরা জেলায় সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক ভূমিকা পালন করেছি। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের সংসদ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় নেতৃবৃন্দের কাছে আমি আস্থাভাজন হয়ে উঠি। ২০০১ সালের নির্বাচনেও চার দলীয় জোটের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ভূমিকা রেখেছি। ওই নির্বাচনে বিজয়ী চারদলীয় জোটের এমপি কাজী আলাউদ্দীন আমাকে রাজনৈতিক রোশানলে ফেলেন। পুলিশি নির্যাতনের শিকার হই। নবম সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ডা. আ ফম রুহুল হকের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করি। এছাড়া চার দলীয় ঐক্যজোট সরকারের (২০০১-২০০৬) ভুয়া ভোটার তালিকাকে চ্যালেঞ্জ করে দায়িত্বশীল সহকর্মীদের নিয়ে প্রতিটি ভোটার বাস্তবে সনাক্ত পূর্বক একুশ হাজার ভুয়া ভোটার সনাক্ত করে ডা. আ ফ ম রুহুল হক সাহেবের মাধ্যমে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে বস্তুনিষ্ট তথ্য সরবরাহ করতে সক্ষম হই। ওয়ান ইলেভেনের সময় যুবলীগ নেতা-কর্মীদের নিয়ে জীবন বাজি রেখে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। ২০০৯ সালে আইলা দুর্গত মানুষদের পাশে দাড়াতে সর্বপ্রথম কৃষ্ণনগর জয়নগর কাশিমাড়ী এলাকায় উদ্ধার কাজে ঝাপিয়ে পড়ি। নিজস্ব অর্থায়নে দুর্গতদের জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ এবং বন্ধু বান্ধবের সহায়তায় প্রথম মেডিকেল ক্যাম্প ও ঔষধ সরবরাহ করেছি। ২০১৩ সালে জামায়াত বিএনপির নৈরাজ্যের সময় ‘রুখে দাড়াও বাংলাদেশ’র এর কালিগঞ্জ-শ্যামনগর এলাকার আহবায়ক হিসাবে সহিংসতা এবং নৃশংসতার বিরুদ্ধে তরুণদের উজ্জীবিত করে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। এ কারণে জামায়াত ও ছাত্র শিবির ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে হত্যার লক্ষ্যে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ইউটিউবে, সাতক্ষীরার সহিংসতা) তাদের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ভিডিও বার্তা প্রেরণ করে। ২০১৩ সালে সহিংসতার বিরুদ্ধে এই এলাকায় আমার নেতৃত্বে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। ২০১৬ সালে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে সরকারি সহায়তার বাইরে এসডিজির অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে শিক্ষিত তরুণ স্বেচ্ছাব্রতী এবং স্থানীয় জনসাধারণকে উজ্জীবিত করে স্বেচ্ছা শ্রমে রাস্তা নির্মাণ, অবকাঠামো রক্ষা এবং জলবদ্ধতা নিরসনের মাধ্যমে কৃষি, মৎস্য, পরিবেশ উন্নয়ন, সুপেয় পানির প্লান্ট, পয়ঃনিষ্কাশন, গৃহয়ান, বিকল্প কর্মসংস্থান, মানসম্মত শিক্ষা (৩ টি বিদ্যালয়ে সি সি ক্যামেরা, ফিঙ্গার প্রিন্ট ডিজিটাল হাজিরা, শতভাগ মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম) ও শিক্ষিত বেকারদের জন্য কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করি। এই কর্মকা- এলজিইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, প্লানিং কমিশনের আইএমইডি এবং দাতা সংস্থার কাছে মডেল হিসাবে বিবেচিত হওয়ায় খুলনা বিভাগীয় প্রকল্প, খুলনা বাগেরহাট সাতক্ষীরা প্রকল্প, সিসি আরআইপি প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকদের মাধ্যমে সাতক্ষীরা-৪ নির্বাচনী এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ও হাট-বাজারের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এছাড়াও জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও ভূমিদস্যুদের দৌরত্ম্য প্রতিহত করতে দলমত নির্বিশেষে আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নদী-খাল দখলকারীদের উচ্ছেদ করে সর্বসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে নেতৃত্ব দিয়েছি। তাই এলাকার মানুষ আমাকে ভালবাসে, আমি বিশ্বাস করি দল আমার উপর আস্থা রাখবে।
দলে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছে- এটাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে নেতাকর্মীদের মধ্যে দূরত্ব বা মতবিরোধ তৈরি হতে দেখা গেছে- এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি পরমত সহিষ্ণু বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন উজ্জীবক। ধারাবাহিকভাবে ২৫ বছর ধরে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। যদি কোন দলীয় নেতাকর্মী আমার চেয়ে আমার কোন সহকর্মী নেতাকে একটু বেশি পছন্দ করেন, তাহলে সে কি কখনও আমার শত্রু হবে? কখনই নয়। তাই জননেত্রী শেখ হাসিনা টেকসই উন্নয়নের মধ্য দিয়ে সমৃদ্ধির বাংলাদেশ গড়তে যাকেই নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন দেবেন, আমিই হব তার প্রথম সহযোগী। আর আমি যদি মনোনয়ন পাই তাদেরকে নিজে গুণে বরণ করে নেওয়ার মত মনের বিশালতা এতটুকু কমতি থাকবে না।
দলীয় মনোনয়ন পেয়ে জয়লাভ করলে কোন কাজগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতার অভিশাপ মুক্ত করতে টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে। সুপেয় পানির সংকট দূর করা হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে রেল লাইন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে উদ্যোগ নেব। পর্যটন শিল্প এই এলাকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির এক মাইলফলক। তাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম জীব ও বৈচিত্র্য সমৃদ্ধ সুন্দরবনই আমাদের জাতীয় জীবনে অমূল্য সম্পদ। পর্যটনের উন্নয়নসহ পর্যটন শিল্পকে আকর্ষণীয় করতে সংশ্লিষ্ট রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন ঘটনো হবে। সাথে সাথে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও সুশিক্ষিত গাইডের মাধ্যমে নির্বিঘেœ ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হবে। পর্যটকদের চাহিদা বিবেচনা করে পরিকল্পিত রিসোর্ট, হোটেল, মোটেল নির্মাণ করা হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। সর্বোপরি ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, ভিশন ২০২১ এবং এসডিজি বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ‘কাউকে পিছনে রাখা যাবে না’ তাদের মাধ্যমে মা ও শিশু স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, নিরাপদ পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্য বিধি, দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমন, সুশাসন, মাদক নির্মূল, নারী-পুরষ সমতা বিষয়ক কার্যক্রম নিশ্চিত করা হবে।
এলাকার বর্তমান সমস্যা নিয়ে তিনি বলেন, পুলিশি হয়রানি এলাকার মানুষের কাছে ভোগান্তির কারণ বলে জনশ্রুতি আছে। তবে, সফলভাবে সন্ত্রাস ও জঙ্গী দমন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করতে যেয়ে পুলিশ বাহিনী আত্মত্যাগের দৃষ্টান্তও আছে। তবে রাজনৈতিক ক্ষমতা অভিষ্ট দলের ভেতরে শৃঙ্খলার অভাবে কিছু সংখ্যক অনুপ্রবেশকারী লুমপেন তথ্য বিকৃতি করে দুই একজন অসৎ পুলিশ সদস্য দ্বারা সাধারণ মানুষকে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। আমি নির্বাচিত হলে সুশাসন নিশ্চিত করা হবে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version