Site icon suprovatsatkhira.com

সাতক্ষীরা-৪: বৃহৎ আকারে লবণ প্রকল্প ও জেলে, বাওয়ালি, মৌয়ালিদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবো

এস.এম নাহিদ হাসান:
গাজী নজরুল ইসলাম। ১৯৮৬ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামীর শ্যামনগর উপজেলা নায়েবে আমীর হিসেবে তার রাজনৈতিক জীবনে পদচারণা। ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মত দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য হওয়ার পর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য মনোনীত হন। এরপর ২০০১ সালে আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সাতক্ষীরা-৪ আসন থেকে বিএনপি-জামায়াত জোট থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী গাজী নজরুল ইসলাম কথা বলেছেন দৈনিক সুপ্রভাত সাতক্ষীরা’র সাথে।
সাতক্ষীরা-৪ আসনে বিএনপি-জামায়াতের বেশ কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন- এটাকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যে দূরত্ব বা মতবিরোধ তৈরি হয়েছে- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মতবিরোধ বা বিভক্তি অন্য দলগুলোর থাকতে পারে তবে আমাদের জোটের মধ্যে এমনটা নেই। আমরা প্রত্যেকেই স্ব স্ব জোটের চেইন অব কমান্ড মানতে বাধ্য। আমাদের দলকে সরকার নিবন্ধন দিচ্ছেও না এবং বাতিলও করছে না। আমাদের ভাষায় যেটাকে বলি আটকিয়ে রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। তাছাড়া আমার দল থেকে আমাকে এই নির্বাচনে মনোনয়নের জন্য চুড়ান্ত করেছেন এবং আমাদের জোটের শরিক দলগুলো আমাকে সার্বিকভাবে সমর্থনও দিয়েছেন। বিগত দিনে তারা দাঁড়িপাল্লা প্রতিক নিয়ে যেমন আমাকে সমর্থন দিয়েছেন, আগামীতেও স্বতন্ত্র প্রতীকে জোটের নেতারা তেমন স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমার পাশে থাকবেন। এখন শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পালা।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি যখন প্রথমবারের মতো ১৯৯১-১৯৯৬ মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই তখন উপজেলা সদর থেকে ইউনিয়নের কানেক্টিং রোড নির্মাণ করি। ইউনিয়ন টু ইউনিয়ন, বাজার টু বাজার রোড নির্মাণ করি। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে কাদা, পানি, মাটিতে তাদের হাঁটতে হতো। নৌকা ছাড়া চলতে পারতো না। আমি সেখানে কালভার্ট, ব্রিজ নির্মাণ করে দিয়েছি। আমি প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে রাস্তাঘাট করে দিয়েছিলাম। আমি যখন দ্বিতীয় মেয়াদে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সংসদ সদস্য ছিলাম তখন সাতক্ষীরা জেলার মধ্যে প্রথম গ্রাম অঞ্চলে হাইওয়ে রোডের কাজ শুরু করি। শ্যামনগর থেকে নওয়াবেঁকী এবং পদ্মপুকুর হয়ে গাবুরা চৌদ্দরশী ব্রিজ পর্যন্ত হাইওয়ে রোড করেছি। সেখানে ব্রিজ নির্মাণ করেছি এবং গাবুরার বেদকাশি টু কপোতাক্ষ নদীর কানেক্টিং রোড করেছি। আমার উপজেলায় নদীবেষ্টিত এলাকা হিসেবে ভেটখালী টু কৈখালী যে কানেক্টিং ব্রিজ এটি আমার সময়েই নির্মাণ করাএবং সীমান্তবর্তী এলাকা কৈখালীতে আমার অধীনে একটি ব্রীজ নির্মাণ করা, যে ব্রিজটিতে বর্তমানে ওপার বাংলা ভারতের বিএসএফ এবং বাংলাদেশের বিজিবি তারা নিরবচ্ছিন্নভাবে যাতায়াত করতে পারে। আমি সংসদ সদস্য থাকাকালীন সময়ে সবচেয়ে বড় সাফল্য- দেশে কোন সৈনিক মারা গেলে যেমন সরকার তার পরিবারকে অনুদান দিতো ঠিক তেমনি আমার এলাকার বাওয়ালি, জেলে, মৌয়ালি মারা গেলে কোন অনুদানের ব্যবস্থা ছিল না এবং আমি সেটা সংসদে উপস্থাপন করি এবং সেটা পাস হয়। আমি সংসদ সদস্য থাকাকালীন সময় আমি নিজে হাতে অনুদানের ২৫০০০ টাকা করে বিতরণ করেছি। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-৪ আসনের মানুষ সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারলে তাদের সেই প্রাণের নেতাকে বেছে নিয়ে তারা আমাকে আবারো ভোট দিয়ে এই এলাকার সংসদ সদস্য নির্বাচিত করে সংসদে পাঠাবে ইনশাল্লাহ।
নির্বাচনী এলাকার মানুষ বর্তমানে কোন সমস্যার কারণে সবচেয়ে দুর্ভোগে আছে- এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এক দুয়ার বন্ধ হলে হাজার দুয়ার খুলে নেওয়ার কৌশল রয়েছে। তবে আমার নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলার মানুষের প্রথম সমস্যা হলো রাজনৈতিক সমস্যা। তাছাড়া বর্তমানে চাঁদাবাজিও অনেকাংশে বেড়ে গেছে। একজন শিক্ষক শিক্ষকতা করতে পারছে না, কৃষক ঠিকমত কৃষিকাজ করতে পারছে না, ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা কার্যক্রম ঠিকমত পরিচালনা করতে পারছে না। আর সাংগঠনিক কার্যক্রম তো প্রকাশ্যে করার সুযোগই নেই। আমাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। যেসব মামলার কোন সত্যতা নেই। আমি আমার হার্টের অপারেশন করার পরে এশিয়ার স্বনামধন্য ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা সেবা নিতে ঢাকায় অবস্থানকালে শ্যামনগর থানায় আমার নামে মামলা হয়েছে। আমার ৩ জন কর্মী পবিত্র হজ্বে থাকাকালীন সময়ে তাদের নামে মামলা হয়েছে। মামলার বাদী আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ।
দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করলে এলাকার জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোন কাজগুলো আগে করতে চান- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের সমাজটা একেবারে উচ্ছন্নে গেছে। সবাই বিচ্ছিন্ন, বিভক্তি ও গ্রুপিং নিয়েই আছে। প্রত্যকটা মানুষের সাথে মানুষের কোন্দল। আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে আমার প্রথম লক্ষ্য হবে আমাদের এই ঘুণেধরা সমাজে আবারও সম্প্রীতির সেতুবন্ধন প্রতিষ্ঠা করবো। মানুষের উপর এখন আর সেই আস্থা নেই। আমি আবারও মানুষের প্রতি মানুষের আস্থা, সহানুভূতি ফিরিয়ে আনতে চাই। দ্বিতীয়ত, দলমত নির্বিশেষে প্রত্যেকের স্ব স্ব অবস্থানে রেখে তাদের সকল চাহিদা মিটানো। তৃতীয়ত, শ্যামনগরের জেলে, বাওয়ালি, মৌয়ালিদের নিরাপত্তা ও তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে আনতে চাই। বৃহৎ আকারে লবণ প্রকল্প করতে চাই। সর্বোপরি নাভারন-মুন্সিগঞ্জ রেললাইন বাস্তবায়ন, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন, যুবশক্তির উন্নয়ন করতে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা করবো ইনশাআল্লাহ।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version