Site icon suprovatsatkhira.com

সাতক্ষীরা-৩: দুর্নীতি ও হয়রানি বন্ধ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করবো

সমীর রায়:
এবিএম মোস্তাকিম। ছোট বেলা থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত তিনি। ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে ডা. মোকলেছুর রহমানের পক্ষে দলকে জয়ী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। জোট সরকারের আমলে, আওয়ামী বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনকে সুসংগঠিত করে তৎকালিন বিএনপি সরকারের এগেনেস্টে আওয়ামী লীগ টিকিয়ে রেখেছিলেন তিনি। ২০০১ সালে তিনি আশাশুনির জনগণকে রক্ষা করেছেন। ’১৩-১৪ সালে ‘আওয়ামী লীগ হঠাও’ নামে যে সহিংসতা চলেছিল সেই সহিংসতার সময় জেলায় দলের কোন নেতা-কর্মীদের অবস্থান না থাকলেও আশাশুনিতে তিনি ছিলেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুঠোফোনে তাকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন। বর্তমানে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এবিএম মোস্তাকিম দলীয় মনোনয়ন নিয়ে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চান। এ বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন দৈনিক সুপ্রভাত সাতক্ষীরা’র সাথে। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে ডা. মোকলেছুরের পক্ষে কাজ করে তাকে জয়যুক্ত করেছি। ২০০১ সালে যখন জোট সরকার ক্ষমতায় আসল তখন মোকলেস সাহেব হেরে যান। তখন মোকলেস সাহেব সাতক্ষীরার বাসায় চলে যান। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। নেতারা যখন রাজনৈতিক বিভিন্ন সংকটে পড়ল, তখন মোকলেস সাহেবকে জানালে তিনি বলেন, আমার নিজেরই নিরাপত্তা নাই, তোমাদের নিরাপত্তা কিভাবে দেব? তখনি আমি কঠিন ভূমিকায় যেয়ে আওয়ামী বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনকে সুসংগঠিত করি। তৎকালিন সরকারের এগেনেস্টে কঠিন পদক্ষেপ নিয়ে আওয়ামী লীগকে এ অঞ্চলে টিকিয়ে রাখি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ করার কারণে সেনাবাহিনীর হাতে আটক হই। ২ মাস আটক থাকি। তারপর উপজেলা আওমী লীগের সভাপতি সাবেক সাংসদ ডা. মোকলেস সাহেব আমার সাথে উপজেলা নির্বাচন করতে আসেন। তখন অনেক বড় ব্যবধানে আমি জয়লাভ করি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার আগে শেখ হাসিনা কিন্তু আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে সব উল্টাপাল্টা হয়ে গেল। সাতক্ষীরার ৫টা আসন ছোট করে ৪টা আসন হয়। তখন আ ফ ম রুহুল হক এসে গেলেন। ২০১৩-১৪ সালে যে সহিংসতা চলছিল সেই সহিংসতার সময় সাতক্ষীরায় কিন্তু কোন নেতা কর্মীদের অবস্থান ছিল না। সে সময় আমি আশাশুনিকে সন্ত্রাসমুক্ত রেখেছিলাম। আমরা নেতা কর্মী নিয়ে সারা রাত পাহারা বসিয়েছিলাম। ওই সময় সাংবাদিক আবেদ খানের নেতৃত্বে রুখে দাড়াও বাংলাদেশ নামে একটা টিম আসে সাতক্ষীরায়, সাতক্ষীরা জরিপ করার জন্য। সেই জরিপে সাতক্ষীরা, কলারোয়া, শ্যামনগর কোথাও কোন নেতাকর্মী দেখতে পায়নি। শুধুমাত্র আশাশুনি এসে তারা আমাকে মাঠে পেয়েছে। তখন তারা আমাকে বাহবা দেয়। এই নিউজ ঢাকায় প্রচার হলে সেই প্রচার দেখে শেখ হাসিনা মুঠোফোনে আমাকে উৎসাহিত করেন এবং বলেন, তুমি একমাত্র ব্যক্তি যিনি সাতক্ষীরায় আমার আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রেখেছ। প্রথম দফায় যে নির্বাচন হলো, তখন জামায়াতের বিপক্ষে কিন্তু আমি জয়যুক্ত হই। তখন থেকে তৃণমূল পর্যায়ে আমি কাজ করে যাচ্ছি। আমার এলাকায় আমি কোন চাঁদা উঠাতে দেই না। যতো অনুষ্ঠান হয়, যুবলীগের, শ্রমিক লীগের, আওয়ামী লীগের সকল সম্মেলন আমি নিজের অর্থায়নে করি। কারণ চাঁদাবাজি করলে আমার দলের ক্ষতি হবে, দুর্নাম হবে। আওয়ামী লীগের সংকটকালে আমি পরীক্ষিত একজন সৈনিক। এজন্য আমি বিশ্বাস করি জননেত্রী আমাকে মনোনয়ন দেবেন।
তিনি বলেন, আশাশুনির ভৌগলিক অবস্থার কারণে জোয়ার বেশি হলে অথবা বৃষ্টিপাতে এলাকা পানিতে ডুবে যায়। বিভিন্ন জায়গায় বাধ বা স্লুইচগেট ভেঙে গেলে সেগুলো আমি নিজের পকেটের খরচে তৈরী করে মানুষকে বিপদ থেকে রক্ষা করেছি। ২০০১ সালে আমি আমার জনগণকে রক্ষা করেছি। ২০১৩ সালেও আমি জনগণকে রক্ষা করছি। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে সাহসী পদক্ষেপ বলতে যা বুঝায় সেটা আমি এককভাবে নিয়েছি- এটা আমি জোর গলায় বলতে পারি। এ কর্মকা-গুলো আমাকে মনোনয়ন পেতে সাহায্য করবে। এলাকার মানুষ আমাকে দানবীর মোস্তাকিম নামে চেনে। আমি ছাড়া কোন নেতা জনগণের জন্য আশাশুনি পড়ে থাকে না। এগুলো নিশ্চয় জননেত্রী বিবেচনায় আনবেন।
দলে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী আছে- এটাকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যে দূরত্ব বা মতবিরোধ তৈরি হতে পারে- এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মনোনয়নকে কেন্দ্র করে আমাদের ভিতর দু-তিনটা দল থাকতে পারে, মতবিরোধ থাকতে পারে এবং মতানৈক্য থাকতে পারে কিন্তু নির্বাচনের ক্ষেত্রে নৌকার বিপক্ষে আমরা কেউ না। যখন নেত্রী মনোনয়ন দিয়ে দেবেন তখন সব মনোদ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে প্রতীক যাতে জয়লাভ করে সেই চেষ্টা আমরা সবাই করব।
মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হলে কোন কাজগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করবেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি যোগাযোগ ব্যবস্থাটাকে বেশী গুরুত্ব দেব। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না হলে এলাকার অগ্রগতি মন্থর হয়। আমাদের এলাকায় রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ। এছাড়া নায়েবেরা অসহায় কিছু মানুষকে হয়রানি করছে। পয়সার বিনিময়ে একই জায়গায় একাধিক ডিসিআর দিচ্ছে, অনেকের বসতবাড়ি উচ্ছেদ করে দিচ্ছে। এই অসহায় মানুষের পাশে দাড়াতে হবে। সরকারি যে জিনিসগুলো আসে সেগুলো সঠিক বণ্টন হয় না। এতে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়- এবিষয়ে গুরুত্ব দেব। এছাড়া আমাদের মধ্যে কিছু গজিয়ে ওঠা নেতা এবং নেতার সাগরেদ থানাকে ভুল ইনফরমেশন দিয়ে মানুষজনকে হয়রানি করছে। আমি থানাকে দোষ দেব না কারণ তাদেরকে ভুল ইনফরমেশন দেয়া হচ্ছে, এবিষয়ে আমি নেতা কর্মীদের সংযত করবো। আমি রাজনীতি করি না আমি সেবানীতি করি।
বর্তমানে কোন সমস্যার কারণে মানুষ ভোগান্তিতে আছে- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রাস্তাঘাট ও জলাবদ্ধতার কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থার অবনতি হয়েছে। জনগণ একারণে বেশী ভুগছে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version