আরিফুল ইসলাম রোহিত:
ডা. শহিদুল আলম। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নকালে ছাত্রদলের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। নির্বাচিত হন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ছাত্রদলের সভাপতি। ছাত্রদলের সমর্থনে ১৯৮৪ সালে নির্বাচিত হন কলেজ ছাত্রসংসদের জিএস। একই বছরে ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে পেশাগত জীবনে জড়িয়ে পড়েন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (ড্যাব) সাথে। সংগঠনটিতে দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব শুরু তার। পরে এক নম্বর যুগ্ম সম্পাদক হিসেবেও কাজ করেছেন। বর্তমানে এক নম্বর সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনে পর পর দু’বার দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তিনি নিজ এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে।
মানুষের প্রতি মমতা আর দরদ নিয়ে কাজ করা ডা. শহিদুল আলম আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-৩ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী।
সংসদীয় আসনের বিভিন্ন সমস্যা-সম্ভাবনা আর দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন সুপ্রভাত সাতক্ষীরার সাথে।
ব্যক্তিগত রাজনৈতিক জীবন নিয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক কার্যক্রম বলতে গেলে প্রথমেই আসে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কথা। তার দেখানো আদর্শ থেকে কখনো বিচ্যুত হয়নি। এছাড়া শহিদ জিয়া যেমন জনগণের পাশে থেকে কাজ করার চেষ্টা করে গেছেন আমিও তেমনি সাতক্ষীরার মানুষের পাশে থেকে কাজ করতে চেয়েছি। আর তাই সুযোগ চাই যেন মানুষের পাশে থেকে আরও বেশি কাজ করতে পারি, সরকারের সেবাগুলো মানুষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে পারি। আমি বিশ্বাস করি দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।
ডা. শহীদুল আলম বলেন, আমি এলাকায় এলাকায় ঘুরে মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প করেছি। যেখানে বিনামূল্যে তাদের স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। বিশেষ করে বলতে হয়, এলাকার মানুষ তাদের যে কোন সমস্যায় যখন যে সাহায্য চেয়েছে হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয়- আমরা যাতে জনগণের কাছে না যেতে পারি সেজন্য আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে, আমাদের নেতা-কর্মীদেরকে জেলে ভরে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে, আর এখনো হচ্ছে। আমাদের পরিবার থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছে। এমনকি আমরা হিন্দু ধর্মবালম্বীদের পূজার মতো গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানেও যেতে পারিনি। মানুষের মাঝে এই যে একটা তীব্র ক্ষোভ রয়েছে- এই জায়গা থেকে বলতে পারি, আমার হয়তো কাজের পরিমাণ কম কিন্তু যদি সুযোগ দেওয়া হতো তবে আরও ভালো কিছু করা সম্ভব হতো। কিন্তু সত্যি বলতে আমি সেই সুযোগ পাইনি। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হলেও আমাদেরকে নানাভাবে দোষারোপ করা হয়। কিন্তু আসলে এর বিচার হবে ভোটের মাধ্যমে। তাই আমরা চাই দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি। চাই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। তবেই আমার মনোনয়ন পাওয়া স্বার্থক হবে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে আরও বেশ কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। এটাকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মীদের মধ্যে দূরত্ব বা মতবিরোধ তৈরি হয়- এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসলে নির্বাচন নিয়ে আমাদের নিজস্ব কোন কথা বলার নেই। দলের হাইকমান্ড যা নির্দেশ দেবে তা মেনেই নির্বাচন করা হবে। তবে আমাদের কারও সাথে কোন বৈরিতা নেই। নিজেদের মধ্যে একতা রেখেই আমরা চাই এই এলাকার মানুষের উন্নয়নে কাজ করতে। মানুষ যেন সঠিক সুযোগ পেয়ে সঠিকভাবে নিজেদের অধিকারগুলো সহজে পায়। এজন্যে আমাদের মধ্যে অর্থাৎ নেতার সাথে কর্মীর কোন দূরত্ব সৃষ্টি হবে না। দলের হাইকমান্ড থেকে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে সেই দলের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবে এবং এই এলাকার মানুষের উন্নয়নে সহযোগী ভূমিকা রাখবে।
বর্তমানে জনগণের দুর্ভোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের একটি আদর্শিক রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা মানুষের উন্নয়নে কাজ করেছি। আমরা চাই মানুষের পাশে থাকতে। সেক্ষেত্রে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হলে আমরা অবশ্যই জয়ী হয়ে মানুষের জন্যে কাজ করবো। তবে আমার এই এলাকার মানুষের সবচেয়ে যে সমস্যাগুলো বেশি ভোগান্তি দেয়- তার মধ্যে অন্যতম স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে তারা অনেক পিছিয়ে আছে। ভালো স্বাস্থ্য সেবা পায় না। এলাকার মানুষের একটি বড় জীবিকা অর্জনের মাধ্যম চিংড়ি চাষ। এই ব্যবসাকে কেন্দ্র করে আমাদের এলাকায় কোন চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। এসব নিয়েও তারা নিত্যদিন সমস্যায় পড়ে। এছাড়া আমার এলাকার মানুষ আইনি জটিলতায় পড়ে বিভিন্ন সময় কষ্টে ভুগে থাকে। আমি চাই আমার আসনের সব মানুষ যেন আইনের সুশাসন নিয়ে বেঁচে থাকে। তারা যেন ন্যায় বিচার পায়। একই সাথে তাদের মধ্যে রাজনীতিবিদদের উপর আস্থার অভাব রয়েছে। আমি চাই তাদের সেই আস্থার জায়গা ফিরিয়ে আনতে।
দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করলে কোন কাজগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে আমরা তো চাই একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। আর সেই নির্বাচনে আমি আমার দলের প্রতিনিধি হয়ে জয়লাভ করলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির চেষ্টা করবো। যেন আমার আসনের সকল মানুষ তার মৌলিক অধিকারগুলো পেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। এর পরেই আমি চাই আমার এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে। মানুষ যেন সহজেই এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে পারে। বিশেষ করে নদী ভাঙনের কিছু দৃশ্য আমাদের খুবই ব্যথিত করে। আমি যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো করে তোলার সাথে সাথে আমার আসনে যেন আর কোথাও কোন নদী ভাঙনে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেব। এছাড়া মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদমুক্ত একটি এলাকা গড়তে চাই। যারা আমার এলাকায় এসব কর্মকা- চালাবে তাদের জন্যে অশনি সংকেত হিসেবে কাজ করতে চাই। আমি চাই আমার এলাকার মানুষ যেন আইনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকে।