Site icon suprovatsatkhira.com

সাতক্ষীরা-৩ : আইটি পার্ক, বিশ্ববিদ্যালয়, রেললাইন ও পূর্ণাঙ্গ স্টেডিয়াম স্থাপন করতে চাই

আরিফুল ইসলাম রোহিত:
প্রফেসর ডা. আ ফ ম রুহুল হক। ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেন কালিগঞ্জের নলতা হাইস্কুল এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন নটরডেম কলেজ থেকে। ১৯৬২ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র ইউনিয়নে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে হাতেখড়ি তার। ১৯৬৯ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভিপি নির্বাচিত হন। দায়িত্ব পালন করেছেন ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়েও। সেসময় আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার যাবতীয় কাজে তার অক্লান্ত প্রচেষ্টা ছিল। শত শত আহত মুক্তিযোদ্ধাকে তিনি নিজের হাতে সেবা-শুশ্রুষা করে সুস্থ করেছেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে উচ্চতর শিক্ষার (এফআরসিএস করেন লন্ডন থেকে) জন্য লন্ডনে চলে যান। পরে দেশে ফিরে আবারও চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত হন। ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থোপেডিকস বিভাগের অধ্যাপক। পরে আইভি রহমানের হাত ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ২০০১ সালে সাতক্ষীরা-৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও অল্প ভোটে হেরে যান। ২০০৮ সালে ফের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে সাতক্ষীরা-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দায়িত্ব পান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। মন্ত্রী হিসেবে দাপ্তরিক দায়িত্ব পালন ছাড়াও কাজ করেছেন দেশের জন্য, দশের জন্য। এছাড়া ২০১৪ সালে আবারও একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া সর্বশেষ তিনি আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন।
সাতক্ষীরা জেলাকে দেশের মাঝে নতুন করে পরিচিত করে তুলেছেন ডা. রুহুল হক। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ডা. আ ফ ম রুহুল হক সাতক্ষীরা-৩ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী।
সংসদীয় আসনের বিভিন্ন সমস্যা-সম্ভাবনা আর দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন সুপ্রভাত সাতক্ষীরার সাথে।
রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সাতক্ষীরাকে একটি সমৃদ্ধ জেলা হিসেবে গড়ার ইচ্ছে ছিল। আর সেই ইচ্ছে থেকেই আমার রাজনীতিতে আসা। সাতক্ষীরার জন্য সবচেয়ে বড় চাওয়া-পাওয়া ছিল মেডিকেল কলেজ। সেটি নির্মাণ করেছি। সাতক্ষীরা শহরের বিনেরপোতা থেকে মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত বাইপাস নির্মাণ করেছি। কালিগঞ্জের নলতায় একটি আইএসটি ম্যাটস ও মেডিক্যাল অ্যাসিসট্যান্ট ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। এছাড়া আশাশুনিতে বাইপাস সড়ক নির্মাণ করেছি। ভোমরা স্থল বন্দর উন্নয়ন করেছি, আশাশুনির বড়দল ব্রিজ তৈরি করেছি, মানিকখালি বড় ব্রিজটির কার্যক্রম চলছে, তেতুলিয়া ব্রিজ তৈরি করেছি, বাশতলা ব্রিজ তৈরি করেছি। কোলা-ঘোলা রাস্তা সংস্কার করেছি। বর্তমানে আবারও প্রায় ১০০ কোটি টাকার একটি বাজেট পাশ করিয়ে এনেছি। ওই রাস্তাকে সংস্কারের জন্য। কর্মসংস্থানের জন্য প্রায় দুই হাজার জন বেকার যুবক-যুবতীর চাকুরীর ব্যবস্থা করেছি, পুরো আসনে ৫৩টি সাইক্লোন শেল্টার করেছি, দেবহাটা উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় এনেছি, অন্যান্য উপজেলাকে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ ভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া অসংখ্য মাদরাসা, ব্রিজ, কালভার্ট, স্কুল-কলেজ নির্মাণ করেছি। এত সব উন্নয়ন শুধুই মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার জন্যে করেছি। আর বর্তমানে এই আসনে আমার কোন প্রতিদ্বন্দ্বী আছে বলে আমি মনে করি না। দলীয় সভানেত্রী আমার উপর বিশ্বাস রেখেছেন। আর আমি সেই বিশ্বাস নষ্ট করিনি। নিশ্চয়ই আমার জেলাবাসী আমার উন্নয়নের কারণে আমাকে নির্বাচিত করবেন।
সাতক্ষীরা-৩ আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন- এটাকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মীদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে- এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাকে মনোনয়ন দিলে কারো সাথে কারো বিরোধ তৈরি হবে- এমনটা আমি মনে করি না। আমার সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারবে এমন কেউ নেই। কারণ আমি যে কাজ করেছি তার কথা মানুষ জানে। আমি সেই কাজের জন্যই মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়েছি। সুতরাং কেউ আমার সাথে বৈরি সম্পর্ক রাখবে না বলে আশা করছি।
নির্বাচনী এলাকার মানুষ বর্তমানে কোন কোন সমস্যায় ভোগান্তিতে রয়েছেন- এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের আরও কিছু পাওয়ার আছে। আমাদের বেশ কিছু রাস্তা-ঘাট রয়েছে, যা এখনো সংস্কার হয়নি। এ কারণে মানুষ খুবই কষ্টে আছে। আমাদের রেল লাইনটি এখনো তৈরি হয়নি। আমাদের এই অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি ছিল একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। সেটিও আমাদের প্রাপ্য। কিন্তু আমার তা পাইনি। এছাড়া আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থাকা প্রয়োজন, প্রয়োজন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের। কারণ আমাদের এখানে কৃষির খুবই উন্নতি হয়েছে। মাছ রপ্তানির পাশাপাশি আম রপ্তানি করেছি। সর্বোপরি আমাদের এই জেলা অনেক দিক থেকে উন্নত। কিন্তু আমাদের বড় কষ্ট হলো আমাদের স্বীকৃতি আমরা পাইনি। এই স্বীকৃতি আমাদের আনতে হবে।
এছাড়া জেলায় এখনো একটা আইটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা প্রয়োজন। আমাদের ছেলে-মেয়েরা বিভিন্ন দিক থেকে ভালো করছে। তাদেরকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের ক্রীড়াঙ্গনে মুস্তাফিজ, সৌম্য সরকার, সাবিনারা রয়েছে। তারা ছাড়াও যারা খেলাধূলায় ভালো করতে চায় তাদেরকে এগিয়ে নিতে আমাদের সহযোগিতা করতে হবে। আমরা তাদের যথেষ্ট সহযোগিতা করতে পারছি না। তারা যেন খেলাধূলা চর্চা করতে পারে সেই জায়গা তৈরি করে দিতে হবে।
জামায়াত-বিএনপির সহিংসতার কারণে আমাদের এই অঞ্চলের মানুষের একটা বদনাম রয়েছে, এই দুর্নাম ঘোচাতে হবে। এই পরিচিতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তাহলে আরও উন্নয়ন আমাদের হবে।
মনোনয়ন পেয়ে পুনরায় নির্বাচিত হলে কোন কাজগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করতে চান জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেলার মানুষের প্রথমত চাওয়া নাভারণ থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত রেল লাইন করা। আমি সেই কাজটি শেষ করতে চাই। দ্বিতীয়ত চাই জেলায় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, একটি আইটি পার্ক, একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করতে। আর তৃতীয়ত জেলার ক্রীড়াক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের এগিয়ে আনতে খেলার উপযোগী একটি পূর্ণাঙ্গ স্টেডিয়াম নির্মাণ করতে চাই।
সাতক্ষীরার স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ হযরত খানবাহাদুর আহসানউল্লাহ (রহ.) আমার দাদুজান। তিনিই আমার নাম রেখেছিলেন। তার স্মৃতি সবসময় আমাকে নাড়া দেয়। আমি চাই মানুষের কল্যাণে কাজ করতে। আমার সব উন্নয়ন দেশের মানুষের জন্য। সাতক্ষীরার মানুষের জন্য। জেলার মানুষের উদ্দেশ্যে বলতে চাই- যে সরকার আমাদের এই জেলাকে উন্নয়নে সহযোগিতা করেছে, তার সাথেই থাকবেন।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version