আরিফুল ইসলাম রোহিত:
রহমাতুল্লাহ পলাশ। সাতক্ষীরা জেলার প্রথম মন্ত্রী প্রয়াত অ্যাডভোকেট মনসুর আলীর ছেলে তিনি। ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠালগ্নে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম গঠিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। বিভাগীয় শহর খুলনায় বেড়ে ওঠা তার। পড়াশুনা শুরু খুলনার সেন্ট জোসেফ স্কুল অ্যান্ড কলেজে। পরে ঝিনাইদাহ ক্যাডেট কলেজ থেকে খুলনা বিএল কলেজ। বি এল কলেজ থেকেই বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে রাজনীতি শুরু করেন তিনি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের এজিএস ও জিএস নির্বাচিত হন। যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ১৯৮১ সালের ডাকসু নির্বাচনে। পরে এরশাদ সরকার ক্ষমতায় আসলে ১৯৮৪ সালে কানাডায় চলে যান তিনি। সেখানে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কানাডার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিষ্ঠা করেন কানাডা বিএনপির। ১৯৯২ সালে দেশে ফিরে পিতার সাথে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। সহযোগী হয়ে কাজ শুরু করেন। ২০০৩ সালে বাবা মারা যাওয়ার পরে ২০০৪ সালে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। আর ২০১৩ সালে মনোনীত হন জেলা বিএনপির সভাপতি। এরপরে আবারও কমিটি পুর্নগঠিত করা হয়। ২০১৭ সালে তাকেই আবার সভাপতি মনোনীত করা হয়। মানুষের পাশে সহমর্মিতার হাত বাড়াতে সামাজিক দায়িত্বও পালন করছেন তিনি। তিনি কালিগঞ্জের আলহাজ্ব তফিলউদ্দীন মহিলা দাখিল মাদরাসার পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও রোকেয়া মুনসুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। নিজ বাড়িতেই একটি শিশু সদন করে প্রায় ২০ জন এতিম ছাত্রের ব্যয় নির্বাহ করছেন।
দলের সংকটকালে দীর্ঘদিন ধরে জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনরত রহমাতুল্লাহ পলাশ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-২ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। তার সংসদীয় আসনের বিভিন্ন সমস্যা-সম্ভাবনা আর দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে কথা বলেছেন সুপ্রভাত সাতক্ষীরা’র সাথে।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরাকে রহমাতুল্লাহ পলাশ বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতিতে আমি সাতক্ষীরার অত্যন্ত আস্থাভাজন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। কানাডা থেকে দেশে ফিরে এসেছি শুধু রাজনীতি করতে। মানুষের সেবা করতে। পিতার অবর্তমানে যেন আমিই তার কাজ করতে পারি। এছাড়া আমি দলের দুঃসময়ে মিছিল-মিটিং করেছি। যখন যেভাবে পেরেছি ছোট করে হোক বা বড় করে হোক চেষ্টা করেছি আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে। তাই আমার আট বছরের কর্মকা-ের বিবেচনায় আমিই মনোনয়ন প্রত্যাশী। এছাড়া বিএনপির মধ্যে কিছু মানুষ বিভিন্ন বিভাগ তৈরি করেছে। এক্ষেত্রে আমিই শুধুমাত্র একজন যার কোন গ্রুপিং নেই। আমি চাই সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করতে। যেন মানুষের উন্নয়ন হয়। কারণ আমার পিতার রাজনীতি যেমন ছিল মহৎ তেমনি আমিও চাই রাজনীতিতে সৎ থাকতে। আমাকে মনোনয়ন দিলে কোন ধরণের গ্রুপিং তৈরি হবে না। কোন ধরণের হঠকারিতা কেউ করবে না। এ কারণে আমি বিশ্বাস করি আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। এছাড়া যারা মনোনয়ন চাইছে তারা তো এখনো কেউ ইউপি চেয়ারম্যান, কেউ নতুন। কিন্তু জনসম্পৃক্ততার কথা চিন্তা করলে আমাকেই মনোনয়ন দিতে হবে। আর আমার দল আমার উপর আস্থা রাখবে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে আরও বেশ কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন- এটাকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মীদের মধ্যে দূরত্ব বা মতবিরোধ হতে পারে- এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসলে নির্বাচন নিয়ে আমাদের নিজস্ব কোন কথা বলার নেই। দলের হাইকমান্ড যা নির্দেশ দেবে তা মেনেই নির্বাচন করা হবে। তবে আমার কারও সাথে কোন বৈরিতা নেই। দলের হাইকমান্ড থেকে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে সেই দলের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবে এবং এই এলাকার মানুষের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
বর্তমানে কোন কোন সমস্যায় মানুষ দুর্ভোগে আছে জানতে চাইলে রহমাতুল্লাহ পলাশ বলেন, প্রথমত, সাতক্ষীরার রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই বেহাল। জেলার সাথে বাইরের সকল সড়ক-মহাসড়কগুলোর অবস্থা আরও নাজুক। সারাদেশে রেল সংযোগ হলেও আমাদের এই অঞ্চলে এখনো রেল পথ চালু করতে পারিনি। ভোমরা বন্দর দিয়ে আজও বেনাপোলের মতো আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চালু হয়নি। এসব অভাব আমাদের নিত্যদিন ভোগায়। এছাড়া আমার আসনের বেশিরভাগ মানুষের আয়ের উৎস চিংড়ি চাষ কিন্তু তেমন কোন অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হয়নি। এটা নিয়ে মানুষের মাঝে দারুণ ক্ষোভ রয়েছে। এলাকায় বেকার সমস্যা রয়েছে। কর্মসংস্থানের অভাবে অনেকেই নানাভাবে কষ্টে দিনাতিপাত করছে। এসব ছাড়াও আমাদের এলাকায় পর্যটন নিয়ে আরও বেশি কাজ করার সুযোগ ছিল। এসব নিয়ে কাজ করলে এলাকার মানুষের অভাব দূরীভুত হবে। স্বাস্থ্য সেবার কথা না বললেই নয়, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের চিত্র আগের থেকে পাল্টে এখন আরও বেশি দুর্ভোগের কারণে পরিণত হয়েছে। মাঝে মাঝে পত্র-পত্রিকায় তা নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে। স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে মানুষের দুর্ভোগ এখনো চলছে। এসব কষ্ট থেকে মানুষের বের করে আনতে হবে। তবেই উন্নয়নের স্বার্থকতা আসবে।
দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করলে কোন কাজগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করতে চান- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আগে আমরা চাই তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। তার পরে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। যে নির্বাচনে সকল ভোটার সুষ্ঠুভাবে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবেন। আর সেই নির্বাচনে আমরাই জয়লাভ করবো। তখন সর্বপ্রথম যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাবো। যেন সাতক্ষীরা থেকে সহজেই দেশের যে কোন স্থানে যাওয়া যায়। রেল সংযোগ আনার ব্যাপারেও কাজ করবো। ভোমরা বন্দরকে পূর্ণাঙ্গ স্থল বন্দরে রূপান্তরিত করতে চাই। শিল্প-কারখানা স্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। যেখানে মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এছাড়া আমাদের এই জেলা পর্যটন শিল্পে বিখ্যাত হতে পারতো। কিন্তু সেই ধরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আমি পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে চাই। যার মাধ্যমে সারা দেশের মধ্যে শুধু নয় বিশ্বের মাঝে সাতক্ষীরার নাম উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। বলে রাখা ভালো- ক্ষমতায় থাকতে আমরা মানুষের উন্নয়নে কাজ করেছি। এখনো মানুষের পাশে আমরা আছি। তবে সত্যিই আমি সুস্থ চিন্তার মানুষ। কিন্তু এখন রাজনীতিতে যা হচ্ছে তা নিয়ে আমি শঙ্কিত। আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই একটি সুস্থ ধারার রাজনীতি ফিরে আসুক। তবেই মূলত দেশের মানুষের উন্নয়ন হবে। অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। দেশের মানুষ শান্তিতে থাকতে পারবে।
সাতক্ষীরা-২: পর্যটনখাতের উন্নয়ন ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলবো
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/