Site icon suprovatsatkhira.com

সাতক্ষীরা-২: উন্নত স্বাস্থ্যসেবা, বিশ্ববিদ্যালয় ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী নান্দনিক সাতক্ষীরা উপহার দেব

ফাহাদ হোসেন:
বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি। সময় তখন ১৯৬৮ কি ১৯৬৯। লেখাপড়া করেন সাতক্ষীরা পিএন বহুমুখি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে ক্লাস নাইনে অধ্যয়নরত অবস্থায় মহাকুমা ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে রাজনীতিতে হাতেখড়ি তার। ছাত্রবেলা থেকেই স্কাউট লিডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৩ সালে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনিই প্রথম নির্বাচিত ভিপি। এ কারণে বঙ্গবন্ধু তাকে ডেকে নিয়ে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সমাজ কল্যাণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে অংশ নিয়েছেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। প্রশিক্ষণের সময় দক্ষতার জন্য নেভাল কোর্সে প্রথম হয়েছিলেন তিনি। নৌ কমান্ডো হিসেবে বিভিন্ন সময় সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি।
বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন এই বীর সেনানী ২০১৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে অংশ নেন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করে সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি সাতক্ষীরা-২ আসন থেকে পুনরায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী।
সংসদীয় আসনের বিভিন্ন সমস্যা-সম্ভাবনা আর দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন সুপ্রভাত সাতক্ষীরার সাথে।
তিনি বলেন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আওয়ামী লীগ কর্মীদের বিশেষ করে তৃণমূল কর্মীদের সংগঠিত করার মাধ্যমে আমি আমার কাজ শুরু করেছিলাম। আমি যখন নির্বাচনে জয়ী হয়েছি তখন জেলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছিল। আমি অভয় দিয়ে তাদের এলাকায় থাকার পরিবেশ সৃষ্টি করেছি। আমার নির্বাচনী আসনে ৫১টি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার চার তলা বিশিষ্ট ভবনের কাজ শুরু করেছি। এর মধ্যে ২১টি বিদ্যালয়ের কাজ সম্পূর্ণরুপে শেষ হয়েছে। সদর উপজেলার ৯০ ভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ শেষ করেছি। এছাড়া আমার আসনের অভ্যন্তরে প্রায় ২০০টি উঠান বৈঠকের মাধ্যমে নারীদের সচেতন করেছি। যারা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন ছিল না। এছাড়া নারীদের সর্বত্র এগিয়ে নিয়ে আসার জন্যে নারী সমাবেশ করেছি। সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- নিয়ে পাড়ায়-পাড়ায় গিয়ে সমাবেশ করেছি। জানিয়েছি এই দেশের প্রধানমন্ত্রীর কথা। যিনি সব উন্নয়নের রূপকার। মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চেয়েছি নৌকা প্রতীকের। বলতে পারি সকল কার্যক্রমের সবচেয়ে বড় ফলাফল হলো- আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা জোরদার করেছি, দল এখন অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে শক্তিশালী। দলটাকে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ আরও বেশি সুসংগঠিত হবে। শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধীদের সাথে কোন আপোষ করতে রাজি নই।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সবার জন্য কাজ করছেন। জনগণ যদি সুযোগ দেয় তাহলে অবশিষ্ট কাজগুলো শেষ করতে পারবো। মাছখোলা নদীর ওপারে বিদ্যুৎ, কালভার্ট, রাস্তা করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে জনগণ খুশি। কিছু কাজ বাকি আছে যেগুলো করতে হবে। অতীতের সাতক্ষীরা থেকে বর্তমান সাতক্ষীরা অনেক ভাল। মানুষ নিজের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ। এলাকার মানুষ একের অধিকবার অনুদান পেয়েছে। আমি নিজে প্রতিবন্ধীদের জন্য স্কুল নির্মাণ করেছি। পাশে থাকতে চেয়েছি সর্বস্তরের মানুষের। যখন যেভাবে পেরেছি মানুষের জন্য কাজ করেছি। এছাড়া ৬০টির মত নতুন রাস্তা তৈরি ও পুরাতন রাস্তা সংস্কার, ৪৫টি ব্রিজ/কালভার্ট নির্মাণ, ২৫টির মত বাজারে সোলার লাইট স্থাপন করা হয়েছে। এতসব উন্নয়ন সাতক্ষীরার মানুষের চোখের সামনে আজ দৃশ্যমান। তারা দেখছে। তাদের ভালোবাসা আমি পেয়েছি। কাজ করেছি বলেই ভালোবেসেছে তারা। এজন্য আমি চাই আবারও মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ পেতে। আমি বিশ্বাস করি আমার দল আমাকে সেই সুযোগ দেবে। আমার দল সাতক্ষীরার কঠিন সময়ে আমার উপর যে আস্থা রেখেছিল, আবারও সেই আস্থা রাখবে। এ বিশ্বাসটুকু প্রধানমন্ত্রীর উপর আমার আছে।
আওয়ামী লীগ থেকে তো আরও অনেকেই মনোনয়ন চাইছেন- এটাকে কেন্দ্র করে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হচ্ছে- এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি কারও সাথে বিরোধ চাই না। তবে আজ অনেক যোগ্য নেতা তৈরি হয়েছে। কারণ তারা নেতা হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সাতক্ষীরায় যদি সহনশীল পরিবেশ তৈরি না হতো তবে সকলেই তো পালিয়ে থাকতে হতো। সেই স্থিতিশীলতার জায়গা আজ তৈরি হয়েছে। তবে আমি বিশ্বাস করি, যে উন্নয়ন আমি করেছি, তা মানুষ মনে রাখবে। আর আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি মানুষের ভালোবাসা নিয়ে অবশ্যই জিতবো। তাতে কেই মনক্ষুণœ হবে না বলে আশা করি।
সাতক্ষীরা সদর আসনের মানুষের বর্তমান দুর্ভোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি একটি সুন্দর আর আধুনিক সাতক্ষীরার স্বপ্ন দেখি- যেখানে মাদক, বাল্যবিবাহ, সন্ত্রাস, চোরাকারবারী থাকবে না। অস্থিতিশীল সাতক্ষীরা চাই না। কিন্তু কিছু মানুষ এখনো সচেতন না হওয়ায় এসব সমস্যা এখনো লেগে আছে। তবে সব দিক থেকে সাতক্ষীরা শ্রেষ্ঠ। সাতক্ষীরার মানুষ পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, কলকাতার মেয়র। এজন্যে আমাদের অনেক প্রয়োজন রয়েছে। আমি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা সংসদে কয়েক বার বলেছি। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজকে কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় করার প্রস্তাব রেখেছিলাম। কিন্তু এখনো কোন অগ্রগতি হয়নি। এটা আমাদের জন্যে বেশি কষ্টের। আমাদের ছেলে-মেয়েরা দেশে-বিদেশে ক্রীড়া ক্ষেত্রে ভালো করছে। তাদের এগিয়ে নিতে আমাদের কোন ভালো ক্রীড়াক্ষেত্র তৈরি হয়নি। এছাড়া সবচেয়ে বেশি দুঃখ শহরবাসীর জন্য। ছোটবেলায় দেখতাম প্রাণসায়ের খাল অনেক বড় ছিল। কিন্তু শহরের বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা আর বড় করা সম্ভব না। কিন্তু নান্দনিক করে তোলা সম্ভব। এটা সাতক্ষীরাবাসীর বিনোদনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবে। বলা যায় যে, ঢাকার হাতিরঝিলের মত একটা প্রকল্প হাতে নেয়া যেতে পারে। সেই উদ্যোগ না নিতে পারায় আমাদের শহরের মানুষ অনেক কষ্ট পাচ্ছে। এসব ছাড়াও আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও ভালো করতে হবে। জেলার সাথে খুলনা আর যশোরের যোগাযোগ সহজ করতে হবে। এর জন্যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রেল লাইন। আমাদের প্রাণের দাবি এই রেল লাইন। এটা আমাদের জেলাকে অনেক এগিয়ে নেবে। ভোমরা পোর্টটি অনেক ছোট। এটাও আমাদের ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক দুর্ভোগের কারণ। জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা আরও বাড়ছে। এজন্য আলাদা একটা পাওয়ার প্লান্ট করার উদ্যোগ নিতে হবে। সাতক্ষীরার ছোট সড়কগুলো বড় করতে হবে। সাতক্ষীরায় একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন তৈরি করতে হবে। যা আজ সময়ের সাথে সাথে প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। সুপেয় পানির সরবরাহ বাড়াতে হবে। এখনো কিছু কিছু এলাকায় সুপেয় পানির বড্ড অভাব রয়েছে। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করতে হবে। তাদের পাশে দাড়ানোর মত লোকের বড়ই অভাব।
সাতক্ষীরাকে মাদক, জঙ্গি, সন্ত্রাস ও বাল্য বিবাহ মুক্ত এলাকা এবং সর্বোপরি সাতক্ষীরাকে একটি নান্দনিক শহর হিসেবে গড়ে তোলা আমার স্বপ্ন। সাতক্ষীরার আপামর জনসাধারণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো পরিপূর্ণভাবে সেবাদান উপযোগী করে গড়ে তোলা, সাতক্ষীরার মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে এবং বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে খানপুরে ১০০ একর জমির উপর একটি ইকোনোমিক জোন তৈরি করা, সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলকে বি.এম.আর.ই করে পুনরায় পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করার বিষয়টি পরিকল্পনার মধ্যে রাখতে হবে। এতে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠে এগিয়ে নিতে হবে পুরো জেলাকে। বিশ্বের বুকে পরিচিত হবে- সড়ক পথে সুন্দরবন যেতে হলে, সাতক্ষীরায় যেতে হবে। এসব সমস্যা দূর করা সম্ভব হলে এই জেলা অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাবে।
মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে কোন তিনটি কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমত আমি স্বাস্থ্য সেবাকে আরও বেশি সহজ করতে চাই। বিভিন্ন সংকটের কারণে সদর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে মানুষ কষ্ট পায়। এই দুটো হাসপাতাল ও সকল ইউনিয়নের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর মাধ্যমে সেবাকে সহজ করে তুলতে চাই। দ্বিতীয়ত, জেলার বেকার মানুষকে কর্মসংস্থানের আওতায় আনতে ভোমরা পোর্টকে আরও গতিশীল করবো। যাদের সামর্থ্য আছে তাদের নিয়ে ছোট ছোট শিল্প-কল-কারখানা তৈরি করতে চাই। তৃতীয়ত, সাতক্ষীরাকে একটি আধুনিক আর নান্দনিক শহর হিসেবে মানুষের কাছে উপহার দিতে চাই। যেন মানুষ আমাকে ভালোবাসে। আমি শুধু মানুষের ভালোবাসা চাই।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version