Site icon suprovatsatkhira.com

সাতক্ষীরা-১: কৃষি নির্ভর শিল্প প্রতিষ্ঠা, অর্থনৈতিক জোন ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এবং জেলা বাজেট তৈরির উদ্যোগ নেবো

আরিফুল ইসলাম রোহিত:
অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ। রাজনীতিতে আসার আগে ছিলেন সাংস্কৃতিক কর্মী। প্রগতি সংঘের সাধারণ সম্পাদক, জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ও সাতক্ষীরা জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘবছর ধরে। কিন্তু এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় মিছিলে সাংস্কৃতিক কর্মী হত্যার প্রতিবাদে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাথে বিক্ষোভ করেন। পরে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের জন্য ছাত্রমৈত্রীর মাধ্যমেই রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। সাতক্ষীরায় জেলা ছাত্রমৈত্রীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে কাজ করেন তিনি।
১৯৮০ সালে চাকরি পেয়েছেন সমাজকল্যাণ বিভাগে, চাকরি পেয়েছেন সেনাবাহিনীর অফিসার পদে কিন্তু কিন্তু তার পিতা ভাবতো চাকরিতে স্বাধীনতা নষ্ট হয়, এজন্যে চাকুরীর ক্ষেত্রে অনীহা ছিল তার। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক, একই কলেজ থেকে ১৯৮১ সালে মানবিক বিভাগে স্নাতক (ডিগ্রী) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এই নেতা আইন নিয়ে জানার জন্য ভর্তি হন খুলনা সিটি কলেজে ‘ল’ বিভাগে। পরে ১৯৯০ সালে বার কাউন্সিল থেকে অনুমোদন নিয়ে নিয়ে সাতক্ষীরা জজ কোর্টে আইন পেশায় নিযুক্ত হন।
এই সংগ্রামী নেতা ১৯৮৯ সালে কমিউনিস্ট লীগের সাতক্ষীরা জেলা সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে ১৯৯১ সালে ওয়ার্কার্স পার্টিতে যোগ দেন। শুরুতেই সাতক্ষীরা জেলার সাধারণ সম্পাদক, ২০০৪ সালে বিকল্প সদস্য, ২০০৮ সালে পূর্ণ সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। ২০১৪ সালে ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য নির্বাচিত এই রাজনীতিবিদ বর্তমানে দলের সাতক্ষীরা জেলা সভাপতি ও জেলা ১৪ দলীয় জোটের সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৪ সালে দলীয় ও মহজোটের মনোনয়ন নিয়ে সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ পুনরায় সাতক্ষীরা-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। কাজ করছেন তৃণমূলে। চালাচ্ছেন প্রচারণা।
এ বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন দৈনিক সুপ্রভাত সাতক্ষীরা’র সাথে। তিনি বলেন, আমি সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। ১৯৮৭ সাল থেকেই শ্রমিকদের নিয়ে আন্দোলন করছি। বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনে আমার সরব উপস্থিতি আছে। এছাড়া কপোতাক্ষ নদী দখলের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। জলাবদ্ধতা দূরীকরণে আন্দোলন করেছি। মানুষের সাঁড়া পেয়েছি। আমি বরাবরই বেশি আন্দোলন করেছি জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হওয়ার পরে ১৪ দল গঠন হলো। পরে আমি আমার দলের লোকজনকে সাথে নিয়ে মাঠে জামায়াত নির্মূলে আন্দোলন করেছি। ২০১২ ও ২০১৩ সালে জামায়াত-বিএনপি যে আন্দোলন করলো এবং যে সহিংস করলো- রাস্তা কাটলো, গাছ কাটলো, আমি এলাকায় থেকে সরাসরি তা মোকাবেলা করেছি। আমি দেখেছি আওয়ামী লীগের কোন নেতা-কর্মী এলাকায় নেই। সবাই এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। রবিউল, জর্জ, আজিজুল মারা গেছে। জামায়াত-শিবির তাদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। শেখ হাসিনার একটা চ্যালেঞ্জ ছিল- এই দেশ ৭১ এ পরাজিত শক্তির কাছে তুলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করবে, না কি তাদের সাথে চ্যালেঞ্জ করবে। তার নির্দেশেই আমি এলাকায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে চেয়েছি এবং তা পেরেছি। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর কপোতাক্ষের দুপাশ জুড়ে জলাবদ্ধতা দূরীকরণে কাজ করেছি। বর্তমানে জলাবদ্ধতা আর হচ্ছে না। আমার আসনে প্রায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ শেষ করেছি। অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়েছি। এলাকায় সামাজিক নিরাপত্তা দিয়েছি। কৃষকদের কৃষি উপকরণ দিয়ে সহায়তা দিয়েছি। চাঁদাবাজি, দলবাজি, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির কোন দুর্নাম আমার নেই। আমার সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ ভাল রয়েছে। সর্বত্র সড়ক সংস্কার করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় যে পাওয়া তা হলো- আমার আসনে রাজনৈতিক কোন হত্যাকা- হয়নি। কৃষকরা তাদের অধিকার নিয়ে আজ সচেতন। সর্বোপরি জামায়াতের সাথে কোন আপোষ আমি করিনি। কোন ধরণের নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে আমার নামে কোন অভিযোগ নেই। সরকারের উন্নয়ন নিয়ে উঠান বৈঠক করা হয়েছে, মা সমাবেশ করা হয়েছে, অভিভাবক সমাবেশ করা হয়েছে। অভিভাবকদের নিয়ে সমস্যা আর সম্ভাবনার কথা বলেছি। এতসব উন্নয়ন হয়েছে এই সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়েছে বলে। আমি আশা করি সরকারের উন্নয়ন আর সেবা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌছে দিতে আমাকে আবারও মনোনয়ন দেওয়া হবে।
উন্নয়নের অভিযাত্রায় বাংলাদেশ। পর পর দুবার শেখ হাসিনা সরকার প্রধান। তবুও মানুষের বর্তমান ভোগান্তি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় অর্থনৈতিক জোন তৈরি করতে পারিনি। আমি জাতীয় সংসদে কয়েকবার বলেছি। এটা না হলে এই এলাকার বেকারত্ব দূর করা যাবে না। অর্থনৈতিক জোনের ক্ষেত্রে কৃষি শিল্প নির্ভর প্রতিষ্ঠান স্থাপনের অগ্রাধিকার দিতে হবে। এই এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও ভালো করতে প্রয়োজন দেখা দিয়েছে রেল লাইনের। সেই কাজের জন্য বার বার সংসদে বলেছি। কাজও শুরু হয়েছে। তবে আমাদের দাবি ছিল একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার। কিন্তু আমরা তা পারিনি। আমাদের আশেপাশে বিভিন্ন জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু আমরা তা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমাদের পর্যটন খাতে আরও বেশি কাজ করতে হবে। তবে আমাদের জন্য সবেচয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল জেলা ভিত্তিক বাজেট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে নির্দেশও দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনো তা এই এলাকার মানুষ পায়নি। আমরা যদি জেলা ভিত্তিক বাজেট পাই তবে আমাদের জন্য অনেক উন্নয়নের সুযোগ হবে। এছাড়াও জলাবদ্ধতা দূর ও সড়ক সংস্কারে আরও কাজ করতে হবে। এসব সমস্যার কারণে মানুষ এখনো প্রকৃত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়ে আছে। তবে মানুষ আজ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় আছে। এটাই বড় শান্তি। জামায়াত-বিএনপির অস্থিতিশীল পরিবেশ মানুষকে দিন-রাত কাঁদিয়েছে। আমি চেষ্টা করেছি তা থেকে মুক্তি দিতে। তা পেরেছিও।
মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে জিতলে কোন কাজগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমত, এখানে অর্থনৈতিক জোন তৈরি করা প্রয়োজন। যেখানে থাকবে কৃষি ভিত্তিক শিল্পের অগ্রাধিকার। কারণ আমাদের কৃষি ফসল সবেচেয়ে বেশি হয়। দ্বিতীয়ত, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করবো আর তৃতীয়ত আমাদের উন্নয়নের জন্য চাই জেলা ভিত্তিক বাজেট। সেই জন্য আবারও কথা বলবো। তবেই আমাদের উন্নয়ন স্বার্থক হবে। বেকারত্ব আর থাকবে না। হাজার হাজার মানুষকে আর ভাটায় কাজ করতে জেলার বাইরে যেতে হবে না।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version