দেবহাটা প্রতিনিধি: দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া নিশ্চিন্তপুর গ্রামে অসহায় ভিক্ষুক নারীকে দিয়ে ফাঁসিয়ে মিটিয়ে দেওয়ার নামে টাকা না পেয়ে যুবকের মামির কানের দুল খুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মাতব্বরদের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটে শনিবার (২৭ অক্টোবর) রাত ১১টার দিকে পারুলিয়া ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামে।
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পাওনা টাকা চাইতে গেলে এক যুবককে অবৈধ সম্পর্কের মিথ্যা অপবাদ দিয়ে খুঁটির সাথে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি মিমাংসার নামে ৫০ হাজার টাকার দাবি করা হলে যুবকের পরিবার দিতে অস্বীকার জানায়। কিন্তু পরে দশ হাজার টাকা জামানতে ছেড়ে দেওয়ার সিন্ধান্ত নেয় পারুলিয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম ও স্থানীয় কয়েকজন শালিসদার। তবে, যুবকের পরিবার নগদ টাকা দিতে না পারায় তার মামির কানের স্বর্ণের দুল খুলে নিয়ে বন্ধক রাখেন ইউপি সদস্যের কাছে।
ভুক্তভোগী যুবকের মা জানান, আমার পুত্র সাহাজুল ইসলাম (সাজু) কয়েক মাস পূর্বে প্রতিবেশী স্বামী পরিত্যক্তা ভিক্ষুক সুফিয়া বেগম (৫৭) অসুস্থ থাকায় তাকে দুই হাজার টাকা ধার দেয়। শনিবার রাতে উক্ত ধারের টাকা আনতে গেলে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে কাজেম হাজী, বাবর আলীর ছেলে মাদক ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম ও তার ভাই এবাদুল ইসলামসহ কয়েকজন মিথ্যা অপবাদে তাকে আটকে রাখে। এমনকি অবৈধ প্রেমের সম্পর্কের অপবাদ দিয়ে বাঁশের খুটিতে বেঁধে ছবি তুলে কাগজে ছাপিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এ সময় ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম ৫০হাজার টাকা দিয়ে বিষয়টি মিমাংসার কথা বলে। আমরা অপরাগতা প্রকাশ করলে দশ হাজার টাকা আনতে বলে তারা। এসময় আমরা উপায় না পেয়ে মিথ্যা অভিযোগে ফেঁসে গিয়ে টাকা দেওয়ার জন্য একদিন সময় চাই। কিন্তু মাতব্বরা তখনই টাকা দিতে হবে বলে জানায়। টাকা দিতে না পারায় সিরাজুল মেম্বর বন্ধকের নামে আমার ভায়ের বৌ’র কানের স্বর্ণের দুল খুলে নিয়ে সাহাজুলকে মুক্ত করে দেয়।
এ ঘটনায় সুফিয়া বেগম বলেন, কিছুদিন পূর্বে আমি অসুস্থ হলে সাহাজুলের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা ধার নেই। সেই টাকা নিতে আমার বাড়িতে সে আসে। কিন্তু রবিউল পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সাহাজুলকে আটকে রেখে মারপিট করে। সাহাজুল আমার সন্তানের সমতুল্য। কিন্তু মাতব্বরা তাকে নিয়ে বাজে কথা তুলেছে। বিষয়টি আমার জন্য খুবই লজ্জাজনক। আমার পরিবরে কোন পুরুষ সদস্য না থাকায় অসহায়ত্বের সুযোগ পেয়ে এমন বাজে ঘটনা ঘটিয়েছে।
এ বিষয়ে রবিউল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সাহাজুলকে সুফিয়ার বাড়ি থেকে আটক করেছি। সেখানে গ্রামের বহু লোক ছিল। সে মাদক ব্যবসা করে কি না জানতে চাইলে বলেন, আমি মাদক ব্যবসা করি তো ভালো কথা। কিন্তু টাকা বা দুল বন্ধক নেওয়ার বিষয়ে কিছু জানতে হলে কাজেম ভাইয়ের সাথে দেখা করেন।
ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোন বিচার শালিস করিনি। আমি সোনা-দানার বিষয়ে কিছুই জানি না। আমার যা করার দরকার ছিল তাই করেছি। আপনারা আমার বিরুদ্ধে যা পারেন লেখেন, তাতে আমার কিছু যাই আসে না।
এঘটনার বিচারকের দায়িত্ব পালনকারী কাজেম হাজী জানান, শনিবার রাতে একটা ঘটনা ঘটেছিল। আমরা রাতেই মিমাংসা করে দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, আসেন দেখা করি। সব কথা তো মোবাইলে বলা যায় না। তবে কোন নিউজ না করার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
পারুলিয়ায় যুবককে ফাঁসিয়ে সালিশের নামে কানের দুল খুলে নিলো মাতব্বরেরা!
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/