Site icon suprovatsatkhira.com

তালা-কলারোয়ায় মুস্তফা লুৎফুল্লাহকে ১৪ দলের প্রার্থী ঘোষণা মেননের

তালা প্রতিনিধি: সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি বলেছেন, জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। তাদের সাত দফা দাবিও অযৌক্তিক ও অসাংবিধানিক। তাই এই দাবি মেনে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, সংবিধান অনুসারে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে সংসদ ভেঙ্গে দেওয়া কিংবা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের প্রশ্নই ওঠে না। বরং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এসব দাবি তুলে নির্বাচনে আসার পথ নিজেরা রুদ্ধ করছে। তারা নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছেন।
মন্ত্রী রোববার বিকালে সাতক্ষীরার তালা উপজেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সম্মেলন পূর্ব উদ্বোধনী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমি নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি আগামী নির্বাচনে বিএনপি জামায়াত ক্ষমতায় আসতে পারবে না। নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা ছোট করার বিষয়টি সাংবিধানিক বিধান নয়। তারপরও প্রধানমন্ত্রী সেটি চাইলে করতে পারেন। এটা সম্পূর্ণ তার নিজের এখতিয়ার। তিনি বলেন, গতবারের নির্বাচনে বিএনপিকে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভা ছোট করেছিলেন। এবার তার আর প্রয়োজন নেই।
তালা উপজেলা ওয়ার্কার্স পার্টি সম্পাদক প্রভাষক সরদার রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে উপজেলা পরিষদ চত্বরে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এমপি, কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য দীপংকর সাহা দীপু, জেলা সম্পাদক উপাধ্যক্ষ মহিবুল্লাহ মোড়ল, সম্পাদকম-লীর সদস্য অধ্যাপক সাবীর হোসেন, উপাধ্যক্ষ ময়নুল ইসলাম, অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু, স্বপন কুমার শীল প্রমুখ।
মেনন আরও বলেন, ২০১৩ সালে জামায়াত এই সাতক্ষীরাকে জিম্মি করে রেখেছিল। সে সময় জনগণের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ। আমরা সেদিন বীজ বপন করেছিলাম জানিয়ে তিনি বলেন, আজ দেখুন সংগঠনের চোহারা। ২০১৪ এর নির্বাচনে বিএনপি জামায়াতের আগুন ও বোমা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তিপ্রিয় জনগণের নেতৃত্ব দিয়ে আপনাদের ম্যান্ডেট লাভ করেছিলেন মুস্তফা লুৎফুল্লাহ। আবার নির্বাচন এসেছে। তিনি গত পাঁচ বছরে অনেক উন্নয়ন করেছেন। তিনি কোনো দুর্নীতি করেন নি। তিনি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও ভঙ্গ করেন নি। নিজের আদর্শকে ধারণ করে তিনি অন্যের আদর্শের প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন। মুস্তফা লুৎফুল্লাহ আবারও ১৪ দলের প্রার্থী হবেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ ১৪ দলে বিভেদ সৃষ্টি করতে চাইছে। মুস্তফা লুৎফুল্লাহ আন্দোলন সংগ্রাম করবেন, আবার সংসদেও যাবেন মন্তব্য করে মেনন বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। গত ১০ বছরে মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০৫ সালে আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪২ ডলার। আর এখন তা ১৭৫২ ডলারে উঠেছে। দেশ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি সরকারের অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান বলেছিলেন দেশ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ হলে বৈদেশিক সাহায্য মিলবে না। বাংলাদেশ এখন ৩ কোটি ৬০ লাখ মে.টন চাল উৎপাদন করে। আমরা নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে তা বিদেশে রফতানি করতে পারছি। এমনকি ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকেও আমরা খাওয়াচ্ছি। মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে জানিয়ে তিনি বলেন, গার্মেন্টস শিল্পে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। এখন আর বাংলাদেশের মানুষ বিদেশ থেকে আসা ব্যবহৃত পোশাক ব্যবহার করে না। বরং বিদেশিরা আমাদের গরম কাপড় তাদের দেশে কিনে নিয়ে যায়। খাদ্যের জন্য, ওষুধের জন্য, করুণার জন্য বাংলাদেশ এখন আর কারও দিকে চেয়ে থাকে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১১ তে শেখ হাসিনা যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দেন তখন বিএনপি তা নিয়ে হাসাহাসি করেছিল। তারা দেশের গ্রাম থেকে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল। দুই বছরের মধ্যে দেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করবো। দেশের মানুষের দারিদ্র্য সীমা হ্রাস পেয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সমাজে সমতার অভাব বেড়েছে, বৈষম্য বেড়েছে। দেশের মোট সম্পদের ৩৭ শতাংশ ভোগ করে ১০ শতাংশ মানুষ। তিনি বলেন, তার দল সমতা ভিত্তিক, ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে চায়। যেখানে থাকবে না কোনো সাম্প্রদায়িক হানাহানি। তিনি প্রশ্ন রাখেন আমরা কি গত দশ বছরের উন্নতি অগ্রগতি ধরে রাখবো নাকি বিএনপি জামায়াতের হত্যা খুন মানুষ পোড়ানোর দিকে যাবো। মাত্র একদিনের ভোট আমাদের পাঁচ বছরের ভাগ্য পরিবর্তন করবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে আপনারা আবারও মুস্তফা লুৎফুল্লাহকে বিজয়ী করুন।
রাশেদ খান মেনন বলেন, ড. কামাল হোসেন বলেছেন ৭ দফা না মানলে শাস্তি দেবেন। কী শাস্তি দেবেন তিনি- এই প্রশ্ন রেখে মেনন আরও বলেন, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে শাস্তি দিয়েছেন। ২১ শে আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টায় আইভি রহমানসহ ২৪ জনকে হত্যা করে শাস্তি দিয়েছেন। আরও কী শাস্তি অপেক্ষা করছে তা জানতে চান তিনি। তিনি বলেন, মইনুল হোসেনকে কেনো জেলখানায় পাঠানো হলো তা নিয়ে হুমকি দিচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট। তিনি বলেন, আসলে তারা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে পুনর্বাসন দেওয়ার লক্ষ্যে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে মাঠ গরম করছেন। এতে ভীত হবার কিছুই নেই বলে জানান তিনি। খুনীদের হাতে দেশ যাবে না, জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের হাতেও দেশ যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের প্রজন্ম যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন বাংলাদেশ জঙ্গিদের হাত থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকবে।
সমাবেশে অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এমপি বলেন, তিনি জনগণের সাথে ছিলেন, জনগণের সাথে আছেন এবং থাকবেন। সংসদ সদস্য হয়ে তিনি কোনো দুর্নীতির আশ্রয় নেননি। তিনি বলেন, কপোতাক্ষ খনন হওয়ায় তালার জলাবদ্ধতা দূর হয়েছে, এখন দরকার বেতনা ও শালতা নদী খনন।
অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এমপি আরও বলেন, জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা রুখতে জীবন দিতে হয়েছে। বিএনপি জামায়াত ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। দেশের আইন শৃংখলা বাহিনীর মধ্যেও জামায়াত শিবির প্রবেশ করেছে দাবি করে তিনি বলেন, তাদেরকে চিহ্নিত করা হয়েছে। জাতি যুদ্ধাপরাধী, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী ও ২১ আগস্টের ঘাতকদের বিচার দাবি করেছিল। তাদের বিচার হয়েছে। রায় কার্যকর হয়েছে। এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে চলছে সামাজিক লড়াই।
ড. কামাল হোসেন এখন বিএনপির নেতা হয়েছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সাতক্ষীরার আলাউদ্দিন হত্যা মামলায় তিনি ছিলেন আসামিদের পক্ষে। আমি ও আমার দল কোনো দুর্নীতি করেনি। যারা দুর্নীতি করে তাদের কোনো আদর্শ নেই। ঢাকা মহানগর নাট্য মঞ্চ থেকে ঘোষণা দিয়ে ড. কামাল, আ স ম রব, মান্না শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামাতে চায়। এটা সহজ নয় জানিয়ে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
সমাবেশে অন্যান্য বক্তারা বলেন, এখন সার নিতে গিয়ে কৃষকদের গুলি খেতে হয় না। বিএনপি জামায়াত জোট সরকারকে সাম্প্রদায়িক সরকার উল্লেখ করে তারা বলেন, এদেশের জনগণ তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আগামীতে তারা যাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় না আসতে পারে সেজন্য সকলকে কাজ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তারা। ঐক্যফ্রন্ট গঠনের সমালোচনা করে তারা বলেন, জাতি এতে ভীত সন্ত্রস্ত নয়। আগামী সংসদ নির্বাচন প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বেই হবে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version