গাজী আসাদ: সাতক্ষীরা পৌরসভাকে ১৯৯৮ সালে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দেওয়া হয়। কিন্তু, নামে প্রথম শ্রেণির হলেও সেবাদানে তৃতীয় শ্রেণির পৌরসভারও ধারে কাছে যেতে পারছে না পৌরসভাটি। পৌর এলাকার রাস্তাঘাটের জরাজীর্ণ অবস্থাই তার প্রমাণ। রাতে পৌর এলাকার অধিকাংশ ল্যাম্পপোস্টের বাতি জ্বলে না। সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে নাকাল পৌরবাসী। নেই পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা। অধিকাংশ এলাকায় ড্রেন না থাকায় সারা বছরই জলাবদ্ধ থাকতে হয় সংশ্লিষ্ট পৌরবাসীকে। বছরের পর বছর পৌর কর দিয়েও মিলছে না কাক্সিক্ষত সেবা। ফলে নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পৌরবাসী।
১৮৬৯ সালে ৩১.১০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে খুলনা বিভাগের প্রথম পৌরসভা হিসেবে যাত্রা শুরু করে সাতক্ষীরা পৌরসভা। এ পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণিভুক্ত হয়েছে দু’দশক হয়ে গেলো। অথচ সাধারণ মানুষ কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। অথচ মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিলো পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হলে হয়তো নাগরিক সেবার মান বাড়বে। কিন্তু দু’দশক পেরিয়ে গেলেও তাদের প্রত্যাশা আজও পূরণ হয়নি। নির্বাচনের সময় প্রতিশ্রæতির ফুলঝুড়ি দিলেও নির্বাচনের পর সেই প্রতিশ্রæতির ছিটেফোটাও বাস্তবায়ন করেন না জনপ্রতিনিধিরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পৌরসভার উত্তরে লাবসা, পূর্বে ধুলিহর-ব্রহ্মরাজপুর, দক্ষিণে ফিংড়ী এবং পশ্চিমে আগড়দাঁড়ি ও আলিপুর ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত সাতক্ষীরা পৌরসভা। ৯টি ওয়ার্ডে বাস করে কয়েক লক্ষ মানুষ। পৌরবাসী তাদের পৌরকর পরিশোধ করলেও সেবা পাচ্ছে না বিন্দুমাত্র। পৌরসভার ভেতরের অধিকাংশ রাস্তার খারাপ। রাস্তাগুলো দীর্ঘদিন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়লেও সংস্কারের নেই কোন উদ্যোগ। রাস্তাগুলোর পিচ ও ইট উঠে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। পৌর এলাকার রাজারবাগান, সুলতানপুর, পুরাতন সাতক্ষীরা ঘোষপাড়া, বাগানবাড়ি, কবিরাজবাড়ি, আলিয়া মাদ্রাসা এলাকা, বদ্দিপুর কলোনি, কাঠিয়া সরকার পড়া, মধ্য পাড়া, লস্কর পাড়া, মাঠপাড়া, মুন্সিপাড়া, মুনজিতপুর, পলাশপোল, কামালনগর, কোর্ট এলাকা, পলাশপোল বউবাজার, রসুলপুর, মিলবাজার এলাকা, কুখরালি, পারকুখরালি, ইটাগাছাসহ পৌর এলাকার অধিকাংশ এলাকার রাস্তার বেহাল দশা। শুধু রাস্তা নয়, এই সব এলাকার অধিকাংশ এলাকায় নেই ড্রেনেজ ব্যবস্থা। আর যেসব এলাকায় ড্রেন আছে সেগুলো কোথাও ভেঙে গেছে, কোথাও ময়লা ভরে গিয়ে ময়লা পানি রাস্তায় ছাপিয়ে পড়ছে। নামে প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও পৌর এলাকার অনেক জায়গাতেই রয়েছে রাস্তা কাঁচা। নেই ড্রেনেজ ব্যবস্থা।
পৌরসভার যেসব এলাকায় সড়কবাতি রয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে রাতের বেলায় ভুতুড়ে হয়ে পড়ে পৌরসভার অধিকাংশ এলাকা।
শুধু রাস্তা বা ড্রেনেজ ব্যবস্থা নয়, পৌরসভার বেশির ভাগ এলাকায় নেই ডাস্টবিন। তাই পৌর বাসিন্দারা যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলছে। সুষ্ঠুভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে পৌর এলাকায় বেড়েছে মশা-মাছির উৎপাত। মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে পৌরবাসী। জেলা শহর হওয়ায় প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষের আগমন ঘটে, অথচ নেই পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা। যেগুলো আছে, তার অধিকাংশ ব্যবহারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কয়েকটি বন্ধ থাকে সারাক্ষণ। পৌর এলাকায় সুপেয় খাবার পানির তীব্র সংকট রয়েছে। পানির লাইন থাকলেও নেই পানি। অথচ প্রতি মাসে বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে পৌরবাসীকে।
পৌরসভার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম প্রাণসায়ের খালটিও কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে দখল হতে হতে বদ্ধ নালায় পরিণত হয়েছে। শহরের অধিকাংশ ময়লা-আবর্জনা খালে ফেলার কারণে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
তবে, পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি, কেএফডবিøউ’র সিআরআইএম নামে একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়েছে। এ প্রকল্পের মূল্যমান ১৮.১ মিলিয়ন ইউরো যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় দেড়শো কোটি টাকা। এই বিশাল বরাদ্দ দিয়ে সড়ক নির্মাণ, রাস্তা সংলগ্ন ড্রেন নির্মাণ, জলাবদ্ধতা নিরসনে পৃথক ড্রেন নির্মাণ, দরিদ্র জনগোষ্ঠী উন্নয়ন, স্যানিটেশন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করা হবে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প নামে আরো একটি ১৪ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২.১০ লক্ষ টাকা পাশ হয়েছে। খুব শিঘ্রই টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ শুরু করা হবে।
পৌরসভার রাজার বাগান এলাকার শাহানুর রহমান জানান, এটি নামে প্রথম শ্রেণির পৌরসভা, কামে কিছু না। আমরা তৃতীয় শ্রেণির পৌরসভার মতোও সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি না। আমার বাড়ি আসার রাস্তাটি দীর্ঘ দিন খারাপ। বর্ষা হয়ে হাটু সমান পানি জমে যায়। আমাদের এলাকায় কোন ড্রেন নেই। নেই কোন ময়লা ফেলের ডাস্টবিন। পানির লাইনে দীর্ঘদিন পানি আসে না। কোন জনপ্রতিনিধির দেখা পাওয়া যায় না। তারা শুধু ভোটের সময় ভোট নিতে আসে।
পৌরসভার কাটিয়া এলাকার রাকিবুল আলম জানান, পৌরসভার কোনো সুযোগ-সুবিধাই আমরা পাচ্ছি না। রাস্তা খারাপ। ড্রেনে ময়লা জমে থাকলেও পরিষ্কার করার কেউ নেই। মশা-মাছির উৎপাতে আমরা অতিষ্ঠ। অথচ বছরের পর বছর আমরা পৌর কর দিয়ে যাচ্ছি। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি জানান, পৌরসভার উন্নয়নে খুব দ্রæত কাজ শুরু হবে। কেএফডবিøউ’র একটি বৃহৎ প্রকল্পের আওতায় পৌর এলাকার রাস্তা-ড্রেনসহ বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করা হবে। এটি একনেকে পাশ হয়েছে। খুব দ্রæত টেন্ডারে যেয়ে কাজ শুরু হবে। এছাড়া নগর উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমেও রাস্তা ও ড্রেন তৈরীর কাজ করা হবে। এই প্রকল্পে প্রায় দুই কোটি টাকা ছাড় হয়েছে। খুব দ্রæত টেন্ডার আহŸানের মাধ্যমে কাজ হবে। তাছাড়া পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে এবং পৌরসভার কর্মীদের সহযোগিতায় প্রতিদিন বিভিন্ন সেবা প্রদান করা হচ্ছে। কোথাও কোন সমস্যা হলে আমরা আমাদের সাধ্য মত সমাধানের কাজ করছি।
সাতক্ষীরা পৌরসভা: নামে প্রথম শ্রেণির পৌরসভা, সেবায় তৃতীয় শ্রেণিরও কম
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/