আরিফুল ইসলাম রোহিত: দুর্নীতি বিরোধী প্রচারণায় সাংবাদিকদের ইতিবাচক ভূমিকা শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের শহিদ স ম আলাউদ্দীন মিলনায়তনে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সনাক সদস্য কল্যাণ ব্যানার্জি।
সনাকের সহ-সভাপতি ভারতেশ্বরী বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সভায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সনাক সদস্য ও সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মো. ওলিউর রহমান।
টিআইবির এরিয়া ম্যানেজার আবুল ফজল মো. আহাদের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট এ কে এম শহীদুল্লাহ, প্রফেসর আব্দুল হামিদ, ড. দিলারা বেগম, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, সাংবাদিক এম কামরুজ্জামান, মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল, মমতাজ আহমেদ বাপ্পী প্রমুখ।
সভায় অ্যাডভোকেট এ কে এম শহীদুল্লাহ বলেন, যেখানে আইন বেশি, সেখানে দুর্নীতি বেশি। তিনি শেক্সপিয়রের কথা তুলে ধরে বলেন, মানুষ ভুল করে অনুতপ্ত হয়, আবার সেই ভুল কাজ করতে এগিয়ে যায়। তিনি সাংবাদিকদের কাজের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব, নির্মূল করা নয়। সকলের একতাই পারে এটা প্রতিরোধ করতে।
প্রফেসর আব্দুল হামিদ বলেন, সাংবাদিক ও সনাক-টিআইবি একসাথে কাজ করলে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব। সনাক-টিআইবি সদর হাসাতালের দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা করেছে। সমাধানের চেষ্টা চলছে। সেখানে সদর হাসপতাল কর্তৃপক্ষের অসহায়ত্বের কথাও এসেছে। তবে সর্বক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি পেতে সময়ের প্রয়োজন। তিনি সংবাদকর্মীদের সহযোগিতা চেয়ে বলেন, যে কোন কাজে সনাক-টিআইবি যথাসম্ভব তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবে।
সাংবাদিক সুভাষ চৌধুরী বলেন, সনাক এবং টিআইবি যদি মাসিক কোন পরিসংখ্যানমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করে তবে সংবাদকর্মীদের কাজ করতে সুবিধা হবে। তিনি বিভিন্ন সময় সংবাদকর্মীদের দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রমের অংশ তুলে ধরে বলেন, নানা জায়গায় যে দুর্নীতি হচ্ছে তার তথ্য কিন্তু টিআইবি-সনাকের আগেই সাংবাদিকরাই পেয়েছে এবং গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে। তিনি টিআইবি ও সনাককে কাজে আরও গতিশীলতা আনার আহবান জানান।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, দিন দিন দুর্নীতির মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। আর এতে মানুষের মাঝে আস্থার জায়গা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে সমাগ্রিকভাবে সকলের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারলে দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব।
সাংবাদিক এম কামরুজ্জামান বলেন, সদর হাসপাতালে টিআইবি-সনাক কাজ করছে। কিন্তু কতটুকু সমাধান হয়েছে সেটাই দেখার বিষয়। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, সাংবাদিকরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশে ভয় পায় না। টিআইবি-সনাক সহযোগিতা করলে কাজ সহজ হবে। তিনি সনাক-টিআইবিকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বলেন, বিভিন্ন জায়গায় যে দুর্নীতি হচ্ছে তা দেখুন। আর সংবাদকর্মীদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন।
সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল বলেন, টিআইবি-সনাক যেসব বিষয় নিয়ে কাজ করছে সেসব বিষয়ে দুর্নীতি হচ্ছে। তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে টিআইবি কিছু প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে উল্লেখ থাকে কোন কোন সরকারি দপ্তর দুর্নীতিগ্রস্ত। আর সেটা নিয়ে দেশের মানুষ বেশ হৈচৈ করে। কিন্তু সেই দুর্নীতি কিভাবে বন্ধ করা যায় তা নিয়ে কেউ কথা বলে না। সাংবাদিক উজ্জল সাতক্ষীরার বিভিন্ন দুর্নীতির বিষয় তুলে ধরে বলেন, সচেতনতা বাড়াতে টিআইবি-সনাককে কাজ করতে হবে। তিনি দুর্নীতিমুক্ত সাতক্ষীরা গড়ার কাজে সকলের একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহবান জানান।
সাংবাদিক মমতাজ আহমেদ বাপ্পী বলেন, সনাক-টিআইবির অনেক কাজ হচ্ছে। কিন্তু ফলাফল কী? তিনি বলেন, জেলার শুধুমাত্র স্বাস্থ্য খাত নিয়ে দুর্নীতির আলোচনা করলে তা হবে ভয়াবহ। যে হারে দুর্নীতি চলছে তা বন্ধে কোন ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। তিনি দুর্নীতি প্রতিরোধে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বলেন, প্রতি মাসে ফলোআপ প্রতিবেদন প্রকাশ করলে সংবাদ কর্মীদের কাজ আরও বেশি ফলপ্রসু হবে।
সভায় ভারতেশ্বরী বিশ্বাস বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সকলের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সাংবাদিক, সনাক টিআইবিকে সমন্বিত কাজ করতে হবে। তবে টিআইবি সনাকের সীমাবদ্ধতা আছে, কিন্তু সাংবাদিকদের কোন সীমাবদ্ধতা নেই। সাংবাদিকরা লেখনীর মাধ্যমে সমাজের অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরতে পারেন। আর তাতে সাধারণ মানুষ সচেতন হবে। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে সকলের একত্রিত কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর সকলে একত্রিত হলেই দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়া সম্ভব।