Site icon suprovatsatkhira.com

মাদক সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে জড়িত পুলিশ সদস্যদের ছাড় নয়: ড. জাবেদ পাটোয়ারী

sdr

আরিফুল ইসলাম রোহিত/ফাহাদ হোসেন/বাহলুল করিম: বাংলাদেশ পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, আজকের বাংলাদেশ শেখ হাসিনার সরকারের নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সূচকে আমাদের অবস্থান এশিয়া মহাদেশের অনেক দেশের চাইতে ভালো। কিন্তু দেশের উন্নয়নের পথে এখন বাধা মাত্র তিনটি। মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ। এগুলো নির্মূল করা না গেলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়। আর এগুলো নির্মূল করা পুলিশের একার পক্ষে অসম্ভব। এজন্য জনগণকে সচেতন হয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামে মাদক, জঙ্গি ও সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ কোন স্বপ্ন নয়, বাস্তব। পুলিশ এবং জনগণের সমন্বয়েই এই ডিজিটাল বাংলাদেশ মাদকমুক্ত করতে হবে। আপনারা মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলুন, না হলে মাদক আপনাদের ধ্বংস করে দেবে।

dav

ড. পাটোয়ারী হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, পুলিশের কেউ যদি মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত থাকে, তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। এজন্য আপনারা তথ্য দিন, ৯৯৯ এ ফোন করুন, সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ড. জাবেদ পাটোয়ারী খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের নির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘কোন নিরীহ মানুষ যেন পুলিশের দ্বারা হয়রানি না হয়।
সমাবেশে প্রধান অতিথি আরও বলেন, আপনারা আপনাদের সন্তানদেরকে পরিবার থেকেই শিক্ষা দিন। পরিবারের শিক্ষাই বড় শিক্ষা। একটি সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়তে আমাদের সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন, যে বাংলাদেশের স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন, আমরা সকলেই সেই বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক হতে চাই।
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমর্থক উল্লেখ করে পুলিশ প্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধুকে না জানলে বাংলাদেশকে জানা যাবে না। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবা না। ঠিক তাই বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। বাংলাদেশ এখন ২১০০ সালের ডেল্টা প্লানের স্বপ্ন দেখছে- হয়তো আমরা তা দেখে যেতে পারবো না। কিন্তু নতুন প্রজন্ম তা উপভোগ করতে পারবে। এজন্য সমাজ থেকে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে হবে।
বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদ এখনো পুরোপুরি নির্মূল হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ নির্মূলের চেষ্টা চলছে।
আমরা সেই পুলিশের উত্তরসূরী যে পুলিশ ১৯৭১ সালে প্রথমে রাজারবাগে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। এখন আমাদের সমন্বিতভাবে মাদক সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, ২০১৩ ও ২০১৪ সালের সহিংসতায় পুলিশেরও দেড় শতাধিক সদস্য হতাহত হয়েছে। সাতক্ষীরার অবস্থা তো আপনারা জানেনই। এজন্য এ ধরণের সহিংসতার সুযোগ আর দেওয়া হবে না। তবে, শুধু পুলিশ একা জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করতে পারবে না। এটা সম্ভব সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মাধ্যেমে।
সমাবেশে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মো. সাজ্জাদুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহম্মেদ বলেন, সাতক্ষীরার আইনশৃঙ্খলা আগের চাইতে এখন অনেক ভালো। তবে কেউ যেন ভুল তথ্য দিয়ে এখানে জঙ্গি কার্যক্রম সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে সকলের খেয়াল রাখতে হবে। যারা মাদক আর সন্ত্রাসের সাথে জড়িয়ে গেছে তাদেরকে বুঝিয়ে ফিরিয়ে আনতে হবে।
নৌ পুলিশের ডিআইজি শেখ মারুফ হাসান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় এই পুলিশ বাহিনীই প্রথম পাকিস্তানিদের মোকাবেলা করেছিল। আর এখন এদেশ থেকে মাদক, জঙ্গি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মোকাবেলা করছে। এই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ, এই বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধাদের বাংলাদেশ। আর তাই বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ থেকে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গি দূর করতেই হবে।
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার নিশ্চিন্ত কুমার পোদ্দার বলেন, আজকের বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে হলে এখনই মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গি নির্মূল করতে হবে। কারণ আজকের এই যুব সমাজই আগামীতে নেতৃত্বে আসবে। আর তখন মাদক গ্রহণে ব্যস্ত যুব সমাজের কাছ থেকে এই দেশের কল্যাণে ভালো কিছু আশা করা যাবে না। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দূরদর্শিতার মাধ্যমে এই তিনটি বিষয়কে চিহ্নিত করে নির্মূল করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি হচ্ছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে জয় অর্জন সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এসব অর্জন বৃথা হয়ে যাবে যদি আমরা মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গি তৎপরতা বন্ধ করতে না পারি। আর এ জন্য প্রয়োজন নিজ নিজ জায়গা থেকে জোর প্রচেষ্টা।
বিজিবির ৩৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল সরকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাতক্ষীরার সীমান্ত জুড়ে মাদকের অভায়রণ্য। বিজিবি আর পুলিশের শত চেষ্টা সত্ত্বেও এই মাদক বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এর সাথে প্রয়োজন এসব সীমান্তের বাসিন্দাদের সচেতনতা। তিনি আরও বলেন, আমরা মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারি কিন্তু বন্ধ করতে পারি না। এসব সীমান্ত এলাকার জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ নাগরিক যদি সচেতন হয় তবেই বন্ধ হবে মাদকের চালান।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে সকলের কথা বলতে হবে। শুধু পুলিশ দিয়ে নয় সর্বত্র সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, মাদক, সন্ত্রাস আর জঙ্গির বিরুদ্ধে নিজেদেরকে সচেতন হতে হবে। পাশে যারা আছে তাদেরকে সচেতন করতে হবে। যারা ইতোমধ্যে এসব ভুল পথে পা বাড়িয়েছে তাদেরকে শোধরানোর চেষ্টা করতে হবে। তারা যদি না শুধরায় তবে পুলিশের হাতে তাদেরকে তুলে দিতে হবে। একই সাথে সমাজের সকল স্তরে এই মাদক, সন্ত্রাস আর জঙ্গির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে হবে।
সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্য স ম জগলুল হায়দার বলেন, পুলিশের সহযোগিতা ছাড়া আমাদের কোন কাজই সম্ভব না। তাই পুলিশকে সাথে নিয়ে আমাদের মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করতে হবে। সাতক্ষীরায় পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় মাদকের বিরুদ্ধে যে জিরো টলারেন্স জারি রয়েছে তা সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়ে মাদককে একবারেই নির্মূল করতে হবে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়র শেখ মুজিবুর রহমান, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু আহমেদ, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোশারফ হোসেন মশু, পৌর মেয়র তাসকিন আহমেদ চিশতি, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, তালা উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার, কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ স্বপন, দেবহাটা উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল গণি, জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি আবুল কালাম বাবলা, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক জোৎ¯œা আরা প্রমুখ।
এর আগে সকাল ১১টায় একই স্থানে আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী মাদক দ্রব্য ধ্বংসকরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এসময় ১০ হাজার ৬৯৪ বোতল ফেনসিডিল, ২১ হাজার ৪০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৪৪ হাজার ৯৫০ কেজি গাঁজা ধ্বংস করা হয়। একই সাথে জেলা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের শপথবাক্য পাঠ ও পুনর্বাসনে ভ্যান প্রদান করেন তিনি। এসময় ৩৩ জন মাদকসেবীর হাতে পায়ে চালিত ভ্যান তুলে দেন আইজিপি।
এদিকে, বেলা ১১টায় মাদক সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী সমাবেশ উপলক্ষ্যে সাতক্ষীরা সিটি কলেজ থেকে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয়। র‌্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামে গিয়ে শেষ হয়।
প্রসঙ্গত, আজ ২৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার আইজিপি শ্যামনগর থানা পরিদর্শন করবেন এবং শুক্রবার বিকেলেই সাতক্ষীরা ছেড়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version