Site icon suprovatsatkhira.com

প্রাণ ফিরে পাচ্ছে কপোতাক্ষ নদ

মনজুরুল হাসান বাবুল, খেশরা (তালা): ‘সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে/সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে’। ‘কপোতাক্ষ নদ’ নিয়ে কবিতাটি লিখেছিলেন মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। কবিতাটি পড়ে যদি কেউ কপোতাক্ষ নদীটি দেখতে যেত তাহলে তাকে নিশ্চিত মন খারাপ করে ফিরে আসতে হতো। সেই চকচকে পানিভরা কপোতাক্ষ নদের শূন্যতা অনুভব করতে হতো। কিন্তু বর্তমানে কিছুটা হলেও সেই শূন্যতা পূরণ হবার আশা দেখা যাচ্ছে। প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করেছে তালা উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এক সময়ের খর¯্রােতা কপোতাক্ষ নদ।
খোঁজ নিয়ে জানায় যায়, সময়ের পরিক্রমায় নাব্যতা হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছিল নদটি। সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী ১৮৭৪ সালে যশোরের তৎকালীন কালেক্টর ভৈরবের নাব্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এর পানি প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য চৌগাছার তাহিরপুরে কপোতাক্ষের উৎস মুখে একটি বাঁধ নির্মাণ করেন। সেখান থেকে কপোতাক্ষের ¯্রােত কমতে থাকে। পরবর্তীতে দর্শনার ‘কেরু এন্ড কোম্পানির’ নিকট বাঁধ নির্মাণ করায় কপোতাক্ষ এবং ভৈরব উভয়ের ¯্রােত কমতে থাকে। গঙ্গা নদীর উপর ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের প্রভাবও কপোতাক্ষের উপর পড়ে। সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় ৬০ এর দশকে সবুজ বিপ্লবের নামে কপোতাক্ষের দুইধারে বাঁধ নির্মাণের ফলে। তখন থেকে মূলত পলিবালি জমে কপোতাক্ষ ভরাট হতে শুরু করে। এককালের খর¯্রােতা এই নদটি যখন হুমকির মুখে তখন ভূমিদস্যুরা কপোতাক্ষের বুকে রাজত্ব শুরু করে। তারা নদের জমি দখলের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। কপোতাক্ষ নদের শোচনীয় অবস্থায় পরিণত হবার অন্য কারণগুলো হচ্ছে, অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট, সেতু, ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ। তবে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রায় ২৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে নদটির প্রায় বাইশ কিলোমিটার খননসহ বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে। ফলে নদটির যৌবন ফিরতে শুরু করেছে। গতকয়েক দিনের ভারী বর্ষণে কপোতাক্ষ পানিতে ভরে উঠেছে। প্রতিদিন জোয়ার-ভাটা হচ্ছে। নৌকা চলছে। পাওয়া যাচ্ছে নানা রকম দেশীয় প্রজাতির মাছ। মাছ ধরে জেলেরা জীবিকা নির্বাহ করছে।
স্থানীয়রা জানান, এক সময়ের খরস্রোতা কপোতাক্ষ পলি জমে নাব্যতা হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছিল। এর ফলে কপোতাক্ষের দুই ধারে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রতি বছর মারাত্মক জলাবদ্ধতা ও বন্যা দেখা দিত। বহু বছর ধরে প্রায় বিশ লক্ষ মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে নদী খনন ও শালিকা টিআরএম প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে স্বাভাবিক রূপে ফিরতে শুরু করেছে নদটি। গত কয়েক বছর বন্যা ও জলাবদ্ধতা দেখা যায় নি। জলাবদ্ধতা না থাকায় নদীটির দুই পাড়ে ফসল ফলতে শুরু করেছে। মানুষের মুখে ফুটে উঠেছে হাসি। মানুষের জীবনযাত্রার অনেক উন্নতি হয়েছে।
উপজেলার জালালপুরের আব্দুল জব্বার শেখ জানান, আমরা এখন খুব খুশি। মরা খালে পরিণত হওয়া কপোতাক্ষ আবার জীবিত হচ্ছে। খননের ফলে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা হয়েছে। এখন আর জলাবদ্ধতা হচ্ছে না। আমরা কৃষি কাজ করতে পারছি। জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে পারছে।
কপোতাক্ষ নদ খনন এবং সুষ্ঠু পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে তালা উপজেলা পানি কমিটির সাধারণ সম্পাদক মীর জিল্লুর রহমান জানান, কপোতাক্ষ নদ খননের ফলে তালা উপজেলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় বিশ লক্ষ মানুষ উপকৃত হয়েছে। কিন্তু এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য কপোতাক্ষ নদ খননের দ্বিতীয় ফেস প্রকল্প (যশোর জেলার সাগরদাড়ি থেকে তাহিরপুর পর্যন্ত) বাস্তবায়ন করা, কপোতাক্ষের সাথে ভৈরব নদীর সংযুক্ত করা, পাখিমারা টিআরএম এর মেয়াদ বাড়ানো এবং বিকল্প হিসেবে নতুন টিআরএম তৈরি করার কার্যক্রম অতি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। কপোতাক্ষ নদ খননের দ্বিতীয় ফেস প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এবং কপোতাক্ষের সাথে ভৈরব নদী সংযুক্ত করা হলে কপোতাক্ষে উজান পানির প্রবাহ নিশ্চিত হবে যার ফলে পলি নিষ্কাশন হয়ে এর স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় থাকবে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version