মোজাহিদুল ইসলাম, কলারোয়া: নাব্যতা হারিয়ে কলারোয়ার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া একসময়ের প্রমত্তা বেতনা নদী এখন মৃতপ্রায়। দু’পাশে জেগে ওঠা চর দখল করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইটভাটা, কল-কারখানা, ঘরবাড়ি, মাছের ঘের ও ফসলি ক্ষেত। নির্মাণ করা হয়েছে মসজিদ ও পাকা শ্মশান। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে ভূমিদস্যুরা দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
কলারোয়া উপজেলার কুশোডাঙ্গা ইউনিয়ন থেকে পৌরসদরের মুরারীকাটি পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, বেতনা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খালগুলোর সাথে যুক্ত স্লুইস গেটগুলো দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে গেছে। পলিমাটি জমে বেতনা নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে যাওয়ায় বর্ষাকালে বিলের পানি খাল দিয়ে নদীতে পড়তে পারে না। উল্টো নদীর পানি লোকালয়ে বা বিলে এসে পাঁচ মাসেরও বেশি সময় স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নেয়। ফলে বর্ষাকালে কলারোয়া উপজেলার কুশোডাঙ্গা, গোপীনাথপুর, তুলসিডাঙ্গা, মুরারিকাঠিসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। প্লাবিত জমিতে হয় না আমন ধান। বোরো ধান হলেও তা যথেষ্ট নয়। বেতনা নদীর অধিকাংশ স্থান সংকুচিত হয়ে কোথাও ১৫ ফুট আবার কোথাও ১০ ফুট চওড়া রয়েছে। বেতনা নদীর উপর কয়েকটি ব্রিজ নির্মাণ হওয়ায় ওইসব জায়গায় নির্মিত পিলারের গোড়ায় পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। আর এসব ভরাট জায়গা দখলের মহোৎসবে মেতে উঠেছে স্থানীয় ভূমিদস্যুরা।
বেতনা নদী তীরের বাসিন্দা লিটন জানান, উপজেলার কুশোডাঙ্গা ইউনিয়ন থেকে পৌরসদরের মুরারীকাটি পর্যন্ত বেতনা নদীর দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। খরস্রোতা এ নদীতে জাল পাতলে এক সময় জালের দড়ি কেটে যেত। নদীতে চলতো স্টিমার, লঞ্চ ও ব্যবসায়ী নৌকা। নদীপথেই বেতনা নদী থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করা যেত। কিন্তু আজ সেই নদী মরে চর জমেছে। আর তা দখলের কারণে নদী আরও ছোট হয়ে গেছে।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে থেকে নদী শাসনের নামে যত্রতত্র বাঁধ দিয়ে স্লুইস গেট নির্মাণ করার পর থেকেই বেতনা নদী নাব্যতা হারাতে থাকে। দু’পাশে জেগে ওঠে চর। চরের মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হতো ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে। আবার সুযোগ বুঝে এক শ্রেণির সুবিধাভোগী মহল প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ম্যানেজ করে নদীর দু’পাশের কিছু জমি ইজারা নিয়ে মাছের ঘের ও ধান চাষ শুরু করে। অনেকে নদীর বুকে আড়াআড়ি ভাবে নেটপাটা দিয়ে মাছ ধরায় সমস্যার সৃষ্টি হয়। বর্তমানে বেতনা নদীর দু’ধারের চর দখল করে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ১০টির বেশি ইটভাটা। কৃষি জমিতে অপরিকল্পিতভাবে চিংড়ি ঘের করায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। নদীর চরে জেগে ওঠা সরকারি খাস জমির আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটেছে খুনের মত ঘটনাও।
বেতনা বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সভাপতি ইয়ারব হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা জানান, অবিলম্বে বেতনা খননের জন্য দু’ধারের ইজারা বন্ধে জেলা প্রশাসককে আন্তরিক হতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবৈধ নির্মাণ বন্ধে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে। পুরাতন ইজারা বাতিল করে নতুন ইজারা দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী অপূর্ব কুমার ভৌমিক জানান, ২০১৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ২৫ শতাংশ বেতনা খননে কোন সফলতা আসেনি বললেই চলে। নদীর ন্যাব্যতা বাড়াতে পাউবো-১ এর আওতাধীন দেবহাটার টিকেট ও শুকদেবপুর বিলে টিআরএম পদ্ধতিতে পাঁচ বছরের জন্য জলাধার নির্মাণের পরিকল্পনা ডিপিবিতে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই পাঁচ বছর চলে গেলে বয়ারবাতান ও আমোদখালি বিলে টিআরএম গ্রহণ করা হবে। খুব শীঘ্র একনেকে গেলে তা পাশ হলে তিন মাসের মধ্যেই বেতনা খননের টেন্ডার আহবান করা যাবে। দ্রুত শুরু করা যাবে নদী খননের কাজ।
দখল হয়ে যাচ্ছে দু’তীর:অস্তিত্ব সংকটে বেতনা
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/