Site icon suprovatsatkhira.com

তালার বিভিন্ন স্পটে চলছে মাদক বেচাকেনা : খলিলনগরে ইউপি সদস্যের বাড়িতে মাদকের আখড়া, অভিযান জোরদারের দাবি

ডেস্ক রিপোর্ট: তালার খলিলনগর ইউনিয়নসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে চলছে মাদক বেচাকেনা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত মাদক বিরোধী অভিযান চালানো হলেও কোন কিছুতেই যেন লাগাম টানা যাচ্ছে না মাদক বিক্রেতাদের। এক প্রকার প্রশাসনের নাকের ডগায় বিক্রি হচ্ছে ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। সহজলভ্য হওয়ায় তালার যুব সমাজ ঝুঁকছে মাদকে।
অভিযোগ, কিছু কিছু মাদকসেবী ও বিক্রেতার ক্ষেত্রে নমনীয়তা দেখানো, মাদক ব্যবসায়ীদের প্রশ্রয় দেওয়া এবং এর সাথে কিছু রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধির সম্পৃক্ততায় এলাকা থেকে মাদক নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে না।
সূত্র জানায়, তালার মাগুরা এলাকায় হেরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিল, দেশীয় মদ এবং গাঁজা সেবন ও বিক্রয় চলছে বহুদিন ধরে। তালা থানা পুলিশ সেখানে প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছে এবং মাদক সেবী ও বিক্রেতাদের আটক করছে। কিন্তু কিছুদিন পরেই তারা জেল থেকে জামিনে এসে বা লঘু শাস্তির সুযোগ নিয়ে আবারও পুরানো পেশায় বা নেশায় ফিরে আসছে। এ কারণে মাগুরা এলাকা থেকে মাদক নির্মূল সম্ভব হয়নি।
তালা সদরের বারুইহাটি, জাতপুর, মোবারকপুর এলাকায় অনুরূপ মাদক সেবন ও বিক্রি হচ্ছে। পিছিয়ে নেই ইসলামকাটি, খেশরা ও জালালপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্পট। এসব ইউনিয়নের নাংলা নতুন বাজার, সুজনশাহা, ইসলামকাটী, গোপালপুর, জেঠুয়া, জালালপুর, বালিয়া ও হরিহরনগর এলাকায় একাধিক মাদক বিক্রেতা ইয়াবা, ফেনসিডিল ও গাঁজা বিক্রি করে। উঠতি বয়সের যুবকরাসহ অনেক মধ্যবয়সী ব্যক্তি এসব স্থানে মাদক কেনাবেচা করছে। এছাড়া তালার খলিলনগর ইউনিয়নের একাধিক স্থানে গড়ে উঠেছে মাদক বিকিকিনির নিরাপদ স্পট! খলিলনগরের নলতা, প্রসাদপুর, হাজরাকাঠি, খলিলনগর বাজার এলাকায় মাদক কেনাবেচা হচ্ছে। এই ইউনিয়নের দুজন ইউপি সদস্য, ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সচিবসহ একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তির ছত্রছায়ায় এখানে মাদক কেনাবেচা হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনিসহ আশপাশের এলাকার অনেক মাদক সেবী ও বিক্রেতারা খলিলনগর ইউনিয়নকে নিরাপদ স্থান মনে করে। তবে তালা থানা পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকায় মাদক সেবী ও বিক্রেতারা মাঝে মাঝে স্থান পরিবর্তন করছে।
জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তালা থানার এসআই মো. আজগর হোসেন চলতি সপ্তাহে খলিলনগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বিশ্বজিৎ মন্ডলের বাড়িতে ইয়ায়া সেবনের আখড়ায় হানা দেয়। এসময় মাদক ব্যবসায়ী ও সেবী ইউপি সদস্য বিশ্বজিৎ, মাদক সেবী ইউপি সদস্য হাসান আলী পাড়, খলিলনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সচিব বর্তমানে সরুলিয়া ইউপি সচিব রেজাউল ইসলামসহ ক্ষমতাসীন দলের তালা উপজেলার এক নেতা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পুলিশের অভিযান বুঝতে পেরে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যান। তবে পুলিশ ইউপি সচিব রেজাউল ইসলাম এর ব্যবহৃত মটরসাইকেল এবং ইয়াবার আলামত জব্দ করে। পরবর্তীতে পুলিশ মাদক সেবী রেজাউল ইসলাম এর মটরসাইকেলটি খলিলনগর ক্যাম্প থেকে ছেড়ে দেয়। অভিযোগ রয়েছে, ইউপি সদস্য বিশ্বজিৎ মন্ডল মাদক ব্যবসা ও সেবনের সাথে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। এছাড়া অপর ইউপি সদস্য মেহেদী হাসান পাড় এবং ইউপি সচিব রেজাউল ইসলামও দীর্ঘদিন ধরে মাদক সেবনসহ এলাকায় মাদক বিকিকিনিতে সহযোগিতা করে আসছে। তালা থানার ওসি মো. মেহেদী রাসেল বিশ্বজিৎ মেম্বরের বাড়ি থেকে ইয়াবা সেবনের আলামত উদ্ধারের কথা স্বীকার করেছেন।
একজন ইউপি সদস্যের বাড়িতে মাদক কেনাবেচার আখড়া তৈরি এবং সেখানে অন্য ইউপি সদস্য ও ইউপি সচিব নিয়মিত যাতায়াত করায় এলাকার মানুষের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এঘটনায় এলাকাবাসী মাদক বিরোধী অভিযান আরো জোরদার করাসহ মাদক কেনাবেচার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশ প্রশাসনের নিকট অনুরোধ জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ইউপি সদস্য বিশ্বজিৎ মন্ডল দীর্ঘদিন ধরে মাদক বিক্রি ও সেবন করছেন এবং অপর ইউপি সদস্য মেহেদী হাসান পাড়সহ খলিলনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সচিব রেজাউল ইসলাম মাদক সেবন করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এবিষয়ে জানার জন্য ইউপি সদস্য বিশ্বজিৎ মন্ডল এবং রেজাউল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিক বার ফোন দিলেও ঘটনার পর থেকে বন্ধ থাকায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে ইউপি সদস্য মেহেদী হাসান পাড় বলেন, ঘটনার দিন তিনি বিশ্বজিৎ মেম্বরের বাড়িতে একটি সালিস করতে গিয়েছিলেন। সালিস শেষ করে চলে আসার পর সেখানে পুলিশ যায়। তিনি নিজে মাদক সেবনের সাথে কখনও জড়িত নন বলে দাবি করে বলেন, বিশ্বজিৎ মেম্বরের বাড়িতে মাদক কেনাবেচা হয় বলে তার জানা নেই।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version