ডেস্ক রিপোর্ট: সাতক্ষীরা জেলা রেজিস্ট্রার ও সদর সাব রেজিস্ট্রারসহ নকল নবিশ আমানুর রহমান সুমনের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও জোর পূর্বক দলিল লেখকদের নিকট থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাম্মী আক্তার তার নিজস্ব কার্যালয়ে ৮৭জন দলিল লেখকসহ যাবতীয় তথ্য প্রমাণাদি ও সাক্ষী নিয়ে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। একই নোটিশে জেলা রেজিস্ট্রার মুন্সি রুহুল ইসলাম, সদর সাব রেজিস্ট্রার রফিকুল আলম ও নকল নবিশ আমানুর রহমান সুমনকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি সাতক্ষীরা সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের ১২০ জন দলিল লেখকদের মধ্যে ৮৭ জন দলিল লেখক অফিসের স্ব-স্ব বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করেন। জেলা প্রশাসক অভিযোগটি পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাম্মী আক্তারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন। এরপর উক্ত নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গত ২৯ আগস্ট উভয়পক্ষকে নোটিশ দিয়ে ৪ সেপ্টেম্বর তার দপ্তরে হাজির নির্দেশ প্রদান করেন।
সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখকরা জানান, কর্মকর্তাদের নির্যাতনের শিকার হয়ে জেলা প্রশাসকের নিকট অভিযোগ দাখিল করার পর থেকে তাদের উপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়া হয়। দলিল প্রতি, নকল প্রতি ও অন্যান্য খাতে ঘুষের পরিমান বাড়িয়ে দিয়ে নির্যাতন আরও বেশি করে করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের পকেট কেটে কোটিপতি বনেছেন এসব কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা।
এদিকে, সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাড. নুরুল আমীন জানান, সাতক্ষীরা সাব রেজিস্টি অফিসের জেলা রেজিস্ট্রার মুন্সি রুহুল ইসলাম, সদর সাব রেজিস্ট্রার রফিকুল আলম, সাবেক সদর সাব রেজিস্ট্রার আ.ফ.ম আব্দুল মুজিদসহ ৯ জনের নামে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেছেন। গত ১৮ আগস্ট প্রদত্ত লিগ্যাল নোটিশে সরকারি ট্যাক্স, স্ট্যাম্প, অতিরিক্ত কোম্পানি আইনের ৬% উৎস কর, রেজিস্ট্রি ফি ও অন্যান্য খাতে রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ এনে এই লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। একই সাথে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ ঘুষ গ্রহণ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে লুটপাট চালানো হচ্ছে। পাশপাশি নকল সিল সই ব্যবহৃত জাল পর্চাসহ অন্যান্য কাগজপত্র বানিয়ে তা দেখিয়ে রেজিস্ট্রি করে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এমনকি সুনির্দিষ্ট ১৩টি বিতর্কিত দলিলের নাম্বার উক্ত লিগ্যাল নোটিশে প্রদান করা হয়েছে।
দলিল নং-৯৬৮/১৮ তাং-৮/২/২০১৮, দলিল নং-১২৯/১৫ তাং-৭/১/২০১৫, দলিল নং ২৫৩৯/১৫ তাং-১/৪/২০১৫, দলিল নং-৯১৩৩/১৫ তাং-২২/১১/১৫, দলিল নং-৯১৬৯/১৫ তাং-২৩/১১/১৫, দলিল নং-৯৪০৬/১৫ তাং-৩০/১১/১৫, দলিল নং-১০১২৪/১৫ তাং-২০/১২/১৫, দলিল নং-১০৪৮৬/১৫ তাং ২৮/১২/১৫, দলিল নং-১০৫৫৩/১৫ তাং-২৯/১২/১৫, দলিল নং-৬১৫১/১৫ তাং-৯/৮/১৫, দলিল নং-৭১৮৮/১৫ তাং- ১৪/০৯/১৫, দলিল নং-৭৩৯৯/১৫ তাং-২১/০৯/১৫, দলিল নং-৭২১৯/১৫ তাং-১৪/০৯/১৫, দলিল নং- ৮৬৪২/১৫ তাং-৫/১১/১৫। এসব দলিল বিভিন্ন সময়ে জাল কাগজপত্র সৃষ্টি করে রেজিস্ট্রি করার অভিযোগ আনা হয়েছে উক্ত লিগ্যাল নোটিশে।
ফলে যথা সময়ে লিগ্যাল নোটিশের জবাব না পেলে জনস্বার্থে দুর্নীতি দমন আইনের পেনাল কোডের ১৬১,১৬৩,১৬৪,১৬৫, ১৬৫ এর ক ধারা অনুযায়ী ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(১) ক,খ,গ,ঘ,ঙ ২ (৩)-২ ও (৪) ধারা অনুযায়ী মামলা দায়ের করার কথা জানানো হয়।
লিগ্যাল নোটিশের অন্যান্য অভিযুক্তরা হলেন, শহরের পলাশপোলের হাসান রেজা লিটন, প্রাণ সায়র এলাকার নাসরিন বেগম, সুলতানপুরের কে এম মুজাহিদুল ইসলাম, শ্যামনগরের ঈশ^রীপুরের এম এম আমজাদ হোসেন, দলিল লেখক ইশতিয়াক আহম্মেদ ও দলিল লেখক মনিরুজ্জামান।
জেলা রেজিস্ট্রার ও সাব রেজিস্ট্রারের দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত আজ
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/