Site icon suprovatsatkhira.com

গোঁড়ামি দূর করার আহবানে শেষ হলো নজরুল সম্মেলন

আরিফুল ইসলাম রোহিত: ‘গাহি সাম্যের গান, যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাঁধা ব্যবধান। যেখানে মিশেছে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান’- সাম্যের এই গানে উজ্জীবিত হয়ে সাতক্ষীরায় তিন দিনব্যাপী নজরুল সম্মেলনের সমাপ্তি ঘটেছে। শুক্রবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার ও প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করেন সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, নজরুল ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আবদুর রাজ্জাক ভূঞা, নজরুল ইন্সটিটিউটের সচিব আব্দুর রহিম, কবি আসলাম সানী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তরফদার মাহমুদুর রহমান, নজরুল গবেষক রেজাউদ্দিন স্ট্যালিন প্রমুখ।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির সদস্য সচিব মুশফিকুর রহমান মিল্টনের পরিচালনায় প্রধান অতিথি সাংসদ মীর মোস্তাক আহমেদ রবি বলেন, ‘নজরুল চর্চার মাধ্যমেই সব গোঁড়ামি দূর হবে। নজরুলের এই সম্মেলনের মাধ্যমেই অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। এই লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় কবির স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোতে এ সম্মেলনের আয়োজন করতে হবে।
এমপি রবি নজরুলকে প্রেমের কবি আখ্যা দিয়ে বলেন, নজরুল একাধারে বিদ্রোহী কবি, জাতীয় কবি। এতকিছুর পরেও নজরুল নিজেই ছিলেন নিজের শিক্ষক। আর তাই নজরুল আমাদের প্রেরণা। নজরুল আমাদের চেতনা।
সাংসদ মীর মোস্তাক আহমেদ নজরুলের বিভিন্ন কর্মকা-ের স্মৃতি উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, নজরুলের বাংলাদেশে আসার পিছনে বঙ্গবন্ধুর অবদান সবচাইতে বেশি। বঙ্গবন্ধু নজরুলের প্রতিভার দিক বুঝতে পেরেই এই দেশের নাগরিকত্ব দিয়েছেন। এটা এই দেশের জন্য অনেক বেশি সম্মানের, অনেক বেশি অর্জনের।
কবি নজরুল ইন্সস্টিটিউট ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি কবি আসলাম সানী বলেন, ‘নজরুল আমাদের চেতনায়। আমাদের প্রেরণায়। তার বেড়ে ওঠা এমন পরিবেশের মধ্যদিয়ে যেখানে আসলেই প্রত্যেক ক্ষেত্রে তার প্রতিভার ছাপ রয়েছে।’
আসলাম সানী আরও বলেন, ‘নজরুল ছিলেন একাধারে কবি, পত্রিকার সম্পাদক, প্রাবন্ধিক, মসজিদের ইমাম, রুটির দোকানের কর্মচারী ও সৈনিক। এছাড়া তিনি ফরিদপুর এলাকা থেকে সংসদ নির্বাচনও করেছেন। সুতরাং তার মতো প্রতিভাধর ব্যক্তির সান্নিধ্য পাওয়া সত্যিই আমাদের জন্য ভাগ্যের।’
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের আজ অর্থনৈতিক সম্মৃদ্ধি হয়েছে, মানবসম্পদ উন্নত হচ্ছে, আকাশ জয়ের জন্যে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন করা হয়েছে। কিন্তু একটা দেশের সর্বক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্যে এটাই যথেষ্ট নয়। সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সংস্কৃতি চর্চাকে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। তবেই মানুষের মাঝে অসাম্প্রদায়িক চেতনা জেগে উঠবে। দেশের মানুষ সচেতন হবে। আর দেশের মাঝে সংস্কৃতি চর্চা অব্যাহত থাকলে অপরাধও কম হবে।’
সমাপনী অনুষ্ঠানে স্থানীয় কবিদের অংশগ্রহণে কবিতা আবৃত্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়া নজরুলের গান, নৃত্যের উপরে ৫০ জন প্রশিক্ষইার্থীদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করা হয়।
সন্ধ্যায় নজরুলের ইসলামী গানের সুরে মেতে ওঠে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তন। বিভিন্ন শিল্পীরা এই গান পরিবেশন করেন।
এদিকে এর আগে সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে ‘জাতীয় কবি ও জাতির পিতা’ বিষয়ে আলোচনা করেন, কবি নজরুল ইন্সস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আব্দুর রাজ্জাক ভূঞা। জেলা প্রশাসক মো. ইফতেখার হোসেনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনা করেন, সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল খালেক, সরকারি মহিলা কলেজের সহকারি অধ্যাপক মো. সিরাজুল ইসলাম।
প্রসঙ্গত, সাতক্ষীরা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে গত সেপ্টেম্বর নজরুল সম্মেলন শুরু হয়।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version