বিএম. জুলফিকার রায়হান, তালা: জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় আটকে আছে তালা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপনের কাজ। উপজেলার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় সহায়তার অভাবে তালায় অদ্যাবধি নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। অথচ ভৌগলিক অবস্থান, জনবসতির ঘনত্ব এবং একাধিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার স্বার্থে এখানে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ অতি জরুরী।
সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্পের অধীনে তালা উপজেলায় একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। স্থানীয় (তালা-কলারোয়া) সংসদ সদস্য, তালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের উপ-পরিচালক সম্মিলিতভাবে তালার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মহাবিদ্যালয় এলাকার পেট্রোল পাম্পের পার্শ্বে একটি জমি নির্ধারণ করেন। কিন্তু জমি মালিকের পরিবারের সদস্যকে উক্ত স্টেশনে চাকরি প্রদানের শর্ত, জমির উপর উচ্চ ভোল্টের বৈদ্যুতিক তার থাকাসহ জমির আয়তন ও সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে দীর্ঘদিনেও সেখানে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ সম্ভব হয়নি। এ কারণে তালা থানার পাশে অবস্থিত সরকারি জমিতে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ করার জন্য একটি দায়িত্বশীল মহল উদ্যোগ নিলেও উপজেলা প্রশাসনের যথাযথ সহায়তার অভাবে সেখানেও স্টেশন নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। এই দুটি স্থান বাদে অন্য কোথাও প্রয়োজনীয় একবিঘা জমি পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় অদ্যাবধি তালায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ সম্ভব হয়নি। এর ফলে বছরের পর বছর ধরে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সেবা পাওয়া থেকে তালাসহ নিকটবর্তী পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলার মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে।
তালা উপজেলা একাধিক ইউনিয়নসহ খুলনা জেলার পাইকগাছা এবং কয়রা উপজেলার কোথাও অগ্নিকাÐ হলে খুলনার ডুমুরিয়া অথবা সাতক্ষীরা থেকে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ঘটনাস্থলে আসতে হয়। এতে অনেক ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে আসার আগেই সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। খুলনার কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলা ভৌগলিকভাবে খুলনা ও ডুমুরিয়া এবং সাতক্ষীরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থেকে অনেক দূরে অবস্থিত এবং তালা উপজেলার নিকটবর্তী। এ কারণে তালা উপজেলা সদরে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ অতি জরুরী। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে তালায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ না হলে তা এই অঞ্চলের জন্য হবে উদ্বেগের বিষয়!
তালার রেন্ট-এ-কার ব্যবসায়ী সৌমেন মজুমদার জানান, তালায় একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ করা আমাদের প্রাণের দাবি। সরকারি বা ব্যক্তিগত জমি যাই হোক, জনগণের স্বার্থে আমাদের এ কাজ অতি দ্রæত সম্পন্ন করতে হবে।
এ ব্যাপারে তালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সনৎ কুমার বলেন, তালা অনেক বড় একটা উপজেলা হওয়া সত্তে¡ও এখানে কোন ফয়ার সার্ভিস স্টেশন নেই। উপজেলাটিতে অনেক বহুতল ভবন, এনজিও, শিল্প কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কোন দুর্ঘটনা ঘটলে সাতক্ষীরা সদর অথবা খুলনা থেকে ফায়ার সার্ভিস ডাকতে হয়, এতে অনেক সময় লাগে। খেশরা, খলিলনগর, জালালপুর, খলিশখালী, ইসলামকাটী, তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের অনেক দুর্গম এলাকায় ফায়ার সার্ভিস পৌছতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগে। এজন্য ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ পূর্বক জমি অধিগ্রহণের কাজ করেছিলাম। তালার শিবপুর পেট্রোল পাম্পের পাশে একটি জমির মালিকের সাথে কথা বলে এমপি মহাদয়ের মাধ্যমে সেটা নির্ধারণ করা হয়েছিল। জমির মালিকও সরকারি বিধি অনুযায়ি জমি দিতে রাজি ছিলেন। কিন্তু সেই সময়কার উপজেলা নির্বাহী অফিসার’র নেগলেজেন্সির কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। কিন্তু বর্তমানে আবারও সেই জমিতে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের জন্য প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা ফায়ার স্টেশনের উপপরিচালক নজরুল ইসলাম জানান, আমরা তালাতে গিয়ে এমপির সহায়তায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের জন্য একটি জমি ফাইনাল করলেও সেটা লোকাল প্রশাসনের সহায়তা না পাওয়ায় বিষয়টি আটকে আছে। এটি নির্মাণের জন্য ৩৩ শতক বা এক বিঘা জমির প্রয়োজন। শুধু জমি অধিগ্রহণে জটিলতা থাকার কারণে তালা ফায়ার স্টেশনটি নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
আটকে আছে তালা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ!
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/