Site icon suprovatsatkhira.com

সৌদি আরবে পাচার হওয়া মেয়েকে ফিরে পেতে দিনমজুর বাবার সংবাদ সম্মেলন

ডেস্ক রিপোর্ট: সৌদি আরবে পাচার হয়ে নির্যাতিত মেয়েকে ফিরে পেতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এক দিনমজুর।
বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সদর উপজেলার মাগুরা কর্মকার পাড়ার আল-আমিন শেখের ছেলে শেখ নুরুল ইসলাম মিন্টু এই সংবাদ সম্মেলন করেন।
লিখিত বক্তব্যে নুরুল ইসলাম মিন্টু জানান, তার মেয়ে খুকুমনি জান্নাতি (২২) কে হাসপাতালে ৪০ হাজার টাকা মাসিক বেতনে নার্সের চাকুরি দেওয়ার নাম করে গত পহেলা ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে নিয়ে যায় আন্তর্জাতিক নারী পাচার সিন্ডিকেটের সদস্য প্রতিবেশী নাছিমা খাতুন ও তার সহযোগী খুলনা শহরের টুটপাড়ার কামরুজ্জামান ওরফে সোহাগ বাবু। ঢাকার কলাবাগানের তানিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে জান্নাতিকে সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়ার পরপরই সেখানকার দালাল ফরহাদের মাধ্যমে সমুদ্র বন্দর ‘দাম্মাম খাবজি’ এর নিকটবর্তী দুম্বা খাটালের মালিক ‘হায়ান ম্যাডাম অরফা’ এর কাছে চার লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়। এর আগে প্রকৃত জন্মসনদ বাদ দিয়ে তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান লিপুর কাছ থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে জন্মসনদ সংগ্রহ করে পাসপোর্ট তৈরি করেন নাছিমা ও সোহাগ বাবু। প্রথম দিন থেকেই জান্নাতিকে ১০ থেকে ১১ জন পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে বাধ্য করা হয়। অপারগতা প্রকাশ করায় সারা দিনে মাত্র একটি রুটি ও পানি খাইয়ে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। সে যাতে বাড়িতে যোগাযোগ করতে না পারে সেজন্য তার মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেওয়া হয়। সম্প্রতি বাড়িওয়ালীর ইমো মোবাইল ফোন থেকে জান্নাতি তার উপর নির্যাতনের কাহিনী পরিবারের সদস্যদের জানায়। সেখানে শুধু সে নয়, বাংলাদেশি আরো কয়েকজন নারীকে এনে একইভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে বলে জানিয়ে জান্নাতি।
গত ২৩ আগস্ট আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী দলের সদস্য খুলনার সোহাগ বাবু তাদের বাড়িতে এসে বড় মেয়েকে সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়ার জন্য ইতিপূর্বে দাবিকৃত এক লাখ টাকা ও পাসপোর্ট বই নিতে আসেন। ওই দিন কৌশলে তাকে ছেড়ে দিয়ে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে র‌্যাব এর সহযোগিতায় গত ২৮ আগস্ট সন্ধ্যায় খুলনা সোনাডাঙা বাসস্ট্যা-ে এসে এক লাখ টাকা ও বড় মেয়ের পাসপোর্ট দেওয়ার কথা বলে সোহাগ বাবুকে আটক করা হয়। র‌্যাব এর কাছে সোহাগ বাবুর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পরদিন মাগুরার কর্মকারপাড়া থেকে দালাল নাছিমাকে গ্রেফতার করে সদর থানার পুলিশ। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে ২৯ আগস্ট রাতেই নাছিমা ও সোহাগ বাবুর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা চার জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক অনুপ কুমার দাস সোহাগ বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন জানালেও নাছিমাকে রিমান্ডের জন্য আবেদন করেননি। এমনকি গত ৪ সেপ্টেম্বর রিমান্ড শুনানীকালে দুুর্বল উপস্থাপনার কারণে আদালত তা মঞ্জুর করেনি। এরপরপরই গ্রেফতারকৃত সোহাগ বাবুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দু’টি তার বাবার কাছে দিয়ে দেওয়ার পর মেয়েকে নতুন করে নির্যাতন করা হচ্ছে। গ্রেফতারকৃতদের আবারো রিমান্ডের আবেদন জানাতে বললেও দারোগা উদ্যোগ নিচ্ছেন না। তাদের আশংকা, আসামিরা জামিন পেয়ে গেলে তার মেয়েকে আর জীবন্ত অবস্থায় দেশে ফেরানো সম্ভব হবে না।
বহু পুরুষের শয্যাসঙ্গিনী হতে আপত্তি করায় ইতিমধ্যেই মেয়ের দু’স্তন, উরু, পা ও হাত গরম ইস্ত্রি দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ডান চোখটি ঘুষি মেরে ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। দু’পাচারকারী গ্রেফতার হওয়ার পর নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে গেছে। তাদেরকে নিঃশর্ত মুক্তি না দিলে মেয়েকে যে কোন সময় মেরে ফেলা হবে বলে তাকে জানানো হয়েছে।
শরীরে দগদগে ক্ষত নিয়ে প্রতিদিন যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া মেয়েকে জীবন্ত অবস্থায় দেশে ফিরিয়ে আনতে সৌদি আরবস্থ বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, মানবাধিকার সংগঠন ও বিচার বিভাগের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার উপ পরিদর্শক অনুপ কুমার দাস জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version