Site icon suprovatsatkhira.com

সাতক্ষীরা-৩ আসন : প্রচারণায় এগিয়ে ডা. রুহুল হক, মাঠে নামতে পারছে না- অভিযোগ বিএনপির

মীর খায়রুল আলম: বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বশেষ জেলা সাতক্ষীরা। এই জেলায় সংসদীয় আসন চারটি। এর মধ্যে দেবহাটা, আশাশুনি ও কালিগঞ্জ (একাংশ) উপজেলা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-৩ আসন। এ আসনের দেবহাটা উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ভোটার ৯৭ হাজার ৮৭৯ জন। আশাশুনি উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ভোটার দুই লক্ষ ১৪ হাজার ৬৩০ জন। এছাড়া কালিগঞ্জ উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে ভোটার ৭৮ হাজার ২৮৯ জন।
জেলার রাজনীতি ও নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ সাতক্ষীরা-৩ আসনে দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী। শক্ত প্রার্থী রয়েছে বিএনপি ও জামায়াতেরও। মনোনয়ন চাওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীও।
কোন্দল ভুলে জনপ্রিয় প্রার্থী মনোনীত করা, নির্বাচনে বিএনপির আসা-না আসা, বিএনপি নির্বাচনে আসলে জোট-মহাজোটের সমষ্টিগত অবস্থানসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা-৩ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চান বর্তমান সংসদ সদস্য, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা. আ ফ ম রুহুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মুনসুর আহম্মেদ ও নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি খুলনার উপাচার্য ড. আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহসহ কয়েকজন।
আওয়ামী লীগের মনোনয়নের আশায় ব্যানার ফেস্টুন টাঙিয়েছেন আশাশুনি উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল জামায়াত আলী, ছাত্রলীগ নেতা গোলাম রসুল বিপ্লবসহ আরও কয়েকজন।
একইভাবে বিএনপি নির্বাচনে আসলে কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য ডা. শহিদুল আলম যে, সাতক্ষীরা-৩ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হচ্ছেন সেটা ধরেই নিয়েছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা।
এদিকে, কেন্দ্রীয় জামায়াতের সুরা সদস্য ও জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত নায়েবে আমীর মাওলানা রবিউল বাশার সাতক্ষীরা-৩ আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করতে গোপনে কাজ করছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
এক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী হিসেবে অ্যাডভোকেট স ম সালাউদ্দীন মহাজোটের মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।
তবে, একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও আওয়ামী লীগের দু’একজন ছাড়া বাকীরা মাঠে নেই বললেই চলে। এক্ষেত্রে প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে আছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ.ফ.ম রুহুল হক এমপি। পুনরায় দলীয় মনোনয়নের আশায় গণসংযোগে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তিনি। এলাকায় যথেষ্ট জনপ্রিয়তাও রয়েছে তার।
একই আসনে মনোনয়ন চাইতে পারেন সাবেক সংসদ সদস্য প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মুনসুর আহম্মেদ। এলাকায় তারও রয়েছে যথেষ্ট পরিচিতি।
তবে, আওয়ামী লীগের দলীয় পরিচিতি না থাকলেও গণসংযোগের নামে দু’একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে দেখা গেছে নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি খুলনার উপাচার্য ড. আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহকেও।
বাকীরা দলীয় মনোনয়নের কথা বললেও তা সীমাবদ্ধ রয়েছে ব্যানার ফেস্টুনে।
এদিকে, নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা শুরু না করলেও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ডা. শহিদুল আলমের চিকিৎসক হিসেবে এলাকায় বেশ পরিচিতি রয়েছে।
তবে, স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, তারা গ্রেফতার আতংকে বাড়ি ছাড়া। মামলা দিয়ে হয়রানি করায় কেউ এলাকায় ফিরতে পারছেন না।
সাতক্ষীরা-৩ নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মনোনয়নের আশায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা তাদের কর্মী সমর্থকদের চাঙ্গা করতে মাঠে নেমেছেন। তবে, সাধারণ ভোটাররা মনে করেন, এ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও ভোট যুদ্ধ হবে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীর মধ্যে।
তবে, জয়ের জন্য আওয়ামী লীগের প্রতিটি উপজেলায় বিদ্যমান কোন্দল নিরসনের বিকল্প নেই বলে দাবি করেছেন নেতা-কর্মীরা। কোন্দল কমলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিপুল ভোটে জয় লাভ করবে বলে মনে করেন সাধারণ ভোটাররা।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয় প্রত্যাশী সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক আ ফ ম রুহুল হক এমপি’র কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি সাতক্ষীরা-৩ আসনসহ গোটা জেলার উন্নয়নে কাজ করেছি। মানুষের চাহিদার কোন অংশে বাকি নেই। প্রধানমন্ত্রী আমাকেই মনোনয়ন দেবেন- এতে আমি আত্মবিশ^াসী।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি খুলনার উপাচার্য ড. আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ জানান, আমি সাতক্ষীরার সন্তান। সাতক্ষীরায় অনেক মতের মানুষের জন্ম, তাই এই জেলায় জন্মগ্রহণ করে অনেক গর্ববোধ করি। এই জেলার মানুষ হৃদয় নিঙড়ে ভালবাসতে জানে। সহজ সরল প্রিয় এই মানুষদের জন্য কিছু করতে পারাটা যে কত আনন্দের সেটি ভাষায় প্রকাশ করার না। আমার দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন এলাকার মানুষের জন্য কিছু করা। সময় এসেছে এই মাটি মানুষের জন্য কিছু করার। সে কারণে সাতক্ষীরা-৩ আসনে আগামী দিনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে নেত্রীর কাছে মনোনয়ন চাইবো।
নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে
জেলা বিএনপি’র সভাপতি রহমতুল্লাহ পলাশ জানান, সাতক্ষীরাসহ সারা দেশে প্রার্থীর মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করবে। তবে সাতক্ষীরা-৩ আসনে ডা. শহিদুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম নামের দুই জন মনোনয়নের দাবি করছেন বলে আমার জানা রয়েছে।
মাঠে নির্বাচনী প্রচার নিয়ে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, মাঠে অবস্থা তো আপনারা ভালো জানেন। আমাদের নেতা-কর্মীদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করায় অনেকে বাড়ি ছাড়া। তবে ভোট সুষ্ঠু হলে বিএনপি প্রার্থীর বিজয় কেউ ঠাকাতে পারবে না।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version