ডেস্ক রিপোর্ট: সন্তানের পিতৃত্ব এবং স্বামীর ঘরে তুলে নেওয়ার আকুতিতে সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুরে ধর্ণা দিচ্ছেন ময়মনসিংহের মেয়ে সালমা খাতুন। ১৭ সেপ্টেম্বর দুপুর থেকে সেই যে তার অবস্থান শুরু হয়েছে তার আর শেষ নামছে না কিছুতেই। অমানবিক কষ্ট আর অসহনীয় পরিবেশে ছোট্ট শিশুকে নিয়ে বাড়ির সিঁড়ির নিচে সালমা খাতুনের সময় কাটছে খেয়ে না খেয়ে। সেই সাথে রাতভর মশার কামড়, টয়লেট ব্যবহারের সুযোগ না থাকা, বৃষ্টি ও বৈরি আবহাওয়া সালমাকে কাতর করে তুলেছে। প্রতিবেশীদের কেউ কোনো খাবার দিলে তবে তাই খাচ্ছে। কিন্তু সালমার শ্বাশুড়ি তা দিতে দিচ্ছেন না। বরং যারা দিচ্ছেন তাদের গালাগাল করছেন তিনি। সালমার প্রশ্ন দেশে আইন ও বিচার বলে কি কিছু নেই, মানবাধিকারও কি হারিয়ে গেলো।?
গত সোমবার থেকে শনিবার পর্যন্ত অমানবিক কষ্টে থাকা ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার সালমা খাতুন এভাবেই তার অভিব্যক্তি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, শ^শুর বাড়ির লোকজন এতো নিষ্ঠুর, এতো নির্মম যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আমি একটা মেয়ে। আমার নিরাপত্তার বিষয়কেও তারা গুরুত্ব দিচ্ছে না। আমার এই দুঃসময়ে কেউ সহায়তার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এলে আমার শ্বাশুড়ি তাকে গালাগাল করছেন। তাদের দেখে নেবেন বলে হুমকি দিচ্ছেন। সালমা খাতুন ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার মহিষতাড়া গ্রামের শেখ জামাল হোসেনের মেয়ে। তার সাথে বিয়ে হয়েছিল সাতক্ষীরার সুলতানপুরের সৌদি প্রবাসী দুলাল হাসানের ছেলে অমিত হাসান ফহাদের।
তিনি জানান, ২০১২ সালে ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে সে বছরের ১৪ জুলাই তাদের বিয়ে হয় ময়মনসিংহে। এর মধ্যে তাদের ঘরে আসে মেয়ে অবন্তী হাসান ফারিয়া। কিন্তু ২০১৭ সালে স্বামী অমিত হাসান ফহাদ স্ত্রী ও শিশু কন্যাকে ফেলে চলে যায়। এরপর থেকে আর কোন যোগাযোগ নেই, এমনকি কোন খোঁজখবরও নেয় না। সালমা তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করায় অমিত হাসান ফহাদ এখন জেলে।
সালমা বলেন অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ের কারণে তার ও তার স্বামীর কিছুদিনের জন্য জেল হয়। এরপর তারা প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে ওঠায় নিজেদের স্বামী স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিতে থাকেন। কিন্তু এতে বাধ সাধেন স্বামী অমিত হাসান ফহাদের মা আকলিমা খাতুন। অবশেষে গত ১২ আগস্ট শাশুড়ি আকলিমা সব মেনে নিয়েছেন জানিয়ে তাকে সুলতানপুরে চলে আসতে বলেন। তিনি আরও জানান, এখন বুঝছি তিনি মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আমাকে ডেকে এনেছেন।
সালমা খাতুন জানান, তিনি গত ৬ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরায় পৌঁছান। শ্বাশুড়ি আকলিমা তাকে একটি ভাড়া বাসায় রেখে দেন। এরপর কয়েকদিন আগে তাকে ভাড়া বাসা থেকে তাড়িয়ে দেন আকলিমা। নিরুপায় হয়ে তিনি আকলিমাদের বাড়ির দরজার মুখে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি জানান, মেয়ে ফারিয়াসহ তিনজনের ডিএনএ টেস্ট হয়েছে। প্রমাণ হয়েছে শিশুটি ফহাদের ঔরসজাত। তার কাছে বিয়ের কোন দালিলিক কাগজপত্র নেই। সব কিছু রয়েছে স্বামী অমিত হাসান ফহাদ ও ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের কাছে। এখন তিনি দাঁড়াবেন কোথায়? এই প্রশ্ন রাখেন সালমা খাতুন। দুঃসহ কষ্টে সালমা কেবলই হা হুতাশ করছেন। পাড়ার লোকজন বলছেন তাকে সহায়তা দিতে গেলে অথবা খাবার দিলে আকলিমা খাতুন অকথ্য ভাষায় গালি দিচ্ছেন তাদের।
বিষয়টি সম্পর্কে আকলিমা খাতুন জানান, সালমা যে তার ছেলের স্ত্রী এমন কোনো প্রমাণ সে দেখাতে পারেনি। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর তার ছেলে ফহাদের মামলার দিন। এ মামলার বাদী সালমা খাতুন নিজেই। আমি বলেছি ওইদিন তাকে জেল থেকে জামিনে আনতে পারলে ফহাদের ইচ্ছা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উপায় না পেয়ে সালমা খাতুন এখন মানবাধিকার কমিশনের সহযোগিতা চাইছেন।
সন্তানের পিতৃত্বের দাবিতে খেয়ে না খেয়ে শ্বশুর বাড়ির সিড়ির নিচে দিন কাটছে সালমা খাতুন
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/