Site icon suprovatsatkhira.com

তালা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বদলি গুঞ্জন! নেপথ্যে নৈশ প্রহরী নিয়োগে ১৫ কোটি টাকা ঘুষ বাণিজ্য

বি.এম. জুলফিকার রায়হান, তালা: জাতীয় পদকপ্রাপ্ত তালা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. অহিদুল ইসলাম বদলি হয়েছেন বলে উপজেলার সর্বত্র গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ, এই বদলির নেপথ্যে রয়েছে খলিলনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক বহু অপকর্মের হোতা মো. আবুল কাশেমের অনৈতিক কর্মকা- ও রাজনৈতিক নেতাদের নৈশ প্রহরী কাম দপ্তরী নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্য।
জানা গেছে, তালা উপজেলার খলিলনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. আবুল কাশেম সরদারের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের উঠতি বয়সের ছাত্রীদের সাথে অশালীন আচরণ, স্থানীয় কতিপয় মহিলাকে বিয়ের প্রলোভন দেখানো, বিদ্যালয়ে এসে মোবাইলে সার্বক্ষণিক কথা বলা ও ফেসবুক ব্যবহার, ঠিকমত শ্রেণিতে পাঠদান না করানো, একাধিক বিয়ে করাসহ একাধিক অভিযোগে পৃথক পাঁচটি তদন্ত কমিটির তদন্তে অভিযোগগুলো প্রমাণিত হয়। নারী কেলেংকারীর অপরাধে উক্ত শিক্ষককে সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গত ৩০/০১/২০১৮ তারিখ ৩৮.০১.৮৭০০.০০০.১৯.০০৭.১৭/২২২ নং স্মারকে বিভাগীয় উপ-পরিচালক, খুলনার নিকট উপজেলার বাইরে প্রশাসনিক বদলির জন্য প্রস্তাব প্রেরণ করেন। বর্তমানে উক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ০৪/০২/২০১৮ তারিখ ২৪৮ নম্বর এবং ৩০/০৮/২০১৮ তারিখ ১৭৯৮ নম্বর স্মারকে বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে। আর এই তদন্তগুলো সম্পন্ন করেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. অহিদুল ইসলাম। আর এতেই উক্ত মামলার শাস্তি থেকে অব্যাহতি পেতে আবুল কাশেম উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার উপর রাজনৈতিকসহ নানান চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। তাতে কোন লাভ না হওয়ায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়’র সচিব ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর’র মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন দপ্তরে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করে। অভিযোগগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্ত করেন এবং অভিযোগগুলো মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়। কিন্তু রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়ে দীর্ঘদিন চেষ্টা চালিয়ে অবশেষে বদলি করা হলো উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. অহিদুল ইসলামকে। একজন আলোচিত, বহু অপকর্মের হোতা ও বিভাগীয় মামলার আসামি প্রাইমারির সহকারি শিক্ষকের কথামতো জাতীয় পদক পাওয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বদলি করায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সবার আক্ষেপ আবারও শিক্ষক নেতা ও দালালদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে তালা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।
কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, উপজেলায় ১৮২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নৈশ প্রহরী কাম দপ্তরী নিয়োগ প্রক্রিয়া অনেক আগেই শুরু হয়। এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে উপজেলার একাধিক রাজনৈতিক নেতা প্রত্যেক বিদ্যালয় থেকে একটি পদের বিপরীতে ২-৩জন প্রার্থীর কাছ থেকে ৮-১০ লক্ষ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগে নিয়োগ প্রত্যাশীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া প্রায় ১৫ কোটি টাকা হজম করার জন্য শিক্ষা কর্মকর্তাকে বদলী করা হয়েছে। কারণ, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নিরপেক্ষভাবে যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়োগ দানের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। এ কারণে রাজনৈতিক নেতারা বিতর্কিত শিক্ষক আবুল কাশেম’র মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকার মিশন নিয়ে মাঠে নেমে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে বদলি করিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রধান শিক্ষক জানান, দীর্ঘদিন ধরে তালা উপজেলা শিক্ষা অফিসে চলে আসা ঘুষ, দুর্নীতি ও শিক্ষকদের হয়রানি সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে সক্ষম হওয়ায় একজন সৎ, দক্ষ ও কর্মঠ শিক্ষা কর্মকর্তাকে অন্যত্র বদলি করা হলো। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এটা কোনও ভাবে মেনে নেয়া যায় না।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. অহিদুল ইসলাম বলেন, আমি বদলি হবার খবর লোকমুখে শুনেছি তবে দাপ্তরিকভাবে এখনও কোনও পত্র পাই নি।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version