তালা প্রতিনিধি: ছাত্রীদের গায়ে অযাচিতভাবে হাত দেয়া, ছাত্রীদের বেগম বলে সম্বোধন করা, ক্লাস ফাঁকি দিয়ে স্কুলে ঘুমানোসহ নানা অভিযোগ উঠেছে তালার খলিলনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. আবুল কাশেম সরদারের বিরুদ্ধে। ঘটনার প্রতিকারসহ উক্ত শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে অভিভাবকরা ইতোপূর্বে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেন। তার প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্ত শেষে আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করেছেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত শিক্ষক আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের অভিভাবকসহ সচেতন মহল। অনতিবিলম্বে বিতর্কিত শিক্ষক আবুল কাশেমকে উক্ত স্কুল থেকে প্রত্যাহার না করলে আন্দোলন করা হবে বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা।
খোঁজ জানা গেছে, তালার দক্ষিণ নলতা গ্রামের মৃত আমের আলী সরদারের ছেলে মো. আবুল কাশেম সরদার খলিলনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে তিনি বিদ্যারয়ের ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির ছাত্রীদের শরীরে বিভিন্ন অযুহাতে হাত দেন। বিষয়টি ব্যাপকভাবে জানাজানি হওয়ায় ফুঁসে উঠেছেন অভিভাবক এবং বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নেতৃবৃন্দ।
রোববার দুপুরে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে যেয়ে দেখা যায়, শিক্ষক আবুল কাশেম অফিস সংলগ্নের একটি রুমে ঘুমাচ্ছেন। এসময় ন্যাশনাল সার্ভিস’র এক শিক্ষিকার মাধ্যমে সাংবাদিকদের আগমন জানতে পেরে তিনি তড়িঘড়ি উঠে অফিস রুমে আসেন।
অভিযোগের বিষয়ে ৫ম শ্রেণিতে পড়–য়া দু’জন ছাত্রী জানায়, কাশেম স্যার ক্লাসে এসে তাদেরকে “বেগম” বলে সম্বোধন করে। এতে প্রতিবাদ করলেই স্যার মারপিট করে।
আরেক ছাত্রী জানায়, ক্লাসে এসে কাশেম স্যার খারাপ খারাপ কথা বলে, যা বলা যাবে না। এতে প্রতিবাদ করলে স্যার গালে চিমটি দেয়, মুখে খারাপ ভাবে টিপে ধরে এবং হাতের উপরের অংশে ঘুষি মারে।
এবিষয়ে বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ছাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসকে জানানো হয়েছে। এছাড়া কাশেম স্যারকে এসব আচরণ বন্ধ করার জন্য বলা হলেও তিনি তা মানেন না এবং উল্টো নানান হুমকি দেন। তাছাড়া প্রধান শিক্ষকের নির্দেশ অমান্য করে প্রায় সময় তিনি ক্লাস ফাঁকি দেন।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য গোলদার মিজানুর রহমান বলেন, কাশেম স্যারের বিরুদ্ধে উঠতি বয়সের ছাত্রীদের সাথে অনৈতিক আচরণের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তাছাড়া ক্লাস ফাঁকিসহ আরো বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এসব বিষয়ে শনিবার বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভা করা হয়। সেখানে, বিদ্যালয় থেকে কাশেম স্যারকে প্রত্যাহার করার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসে রেজুলেশন করে পাঠানোর প্রস্তুাব ওঠে। তিনি আরোও বলেন, একজন শিক্ষক হয়ে উঠতি বয়সের ছাত্রীদের সাথে অশ্লীল আচরণ এবং তাদের গায়ে হাত দেয়াটা কোনও ভাবে মেনে নেয়া যায় না।
স্থানীয় যুবলীগ নেতা আব্দুর রহমান বলেন, শিক্ষক আবুল কাশেম এর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি করাসহ বিদ্যালয়ে ক্লাস ফাঁকি দেবার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অনতিবিলম্বে তাকে প্রত্যাহার না করলে আন্দোলন করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক জানান, শিক্ষক আবুল কাশেম এর বিরুদ্ধে নারী ঘটিত অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও ক্লাস ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন রুটিন মাফিক ঘুমানো এবং ছাত্রীদের গায়ে হাত দেয়াসহ নানান অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ করা হলেও তাকে এখান থেকে বদলি করা হয়নি। তাকে অবিলম্বে বদলি করা না হলে সন্তানকে অন্য স্কুলে নিয়ে যাবো।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক মো. আবুল কাশেম বলেন, প্রধান শিক্ষকের নির্দেশনা মেনে চলে আমি বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস নিই। তবে শারীরিক অসুস্থতার জন্য অফ পিরিয়ডে মাঝে মাঝে বিশ্রাম নেই। বিদ্যালয়ের সকল ছাত্রীদের “বেগম” বলে সম্বোধন করার কথা স্বীকার করে তিনি আরো বলেন, আমি কোনও ছাত্রীদের সাথে অশ্লীল আচরণ করি না বা তাদের গায়ে হাত দেইনা। তবে আদর হিসেবে ছোট ছোট বাচ্চাদের মুখে বা গায়ে হাত দিই।
এবিষয়ে তালা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. অহিদুল ইসরাম জানান, শিক্ষক আবুল কাশেম এর বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ পূর্বেও উঠেছিল। এর আগে তার এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে দাপ্তরিক ভাবে অবহিত করলে সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মহোদয় আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করেছেন। তিনি আরো বলেন, উঠতি বয়সের ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করার যে অভিযোগ উঠেছে তা তদন্ত করা হবে এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তালার খলিলনগরে শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/