Site icon suprovatsatkhira.com

জানাযায় হাজারো মানুষের ঢল : কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি

শেখ শাওন আহমেদ সোহাগ ও জামাল উদ্দিন, কালিগঞ্জ: কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান কেএম মোশারফ হোসেনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
রোববার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে কৃষ্ণনগর কৃষাণ মজদুর ইউনাইটেড একাডেমি মাঠ প্রাঙ্গণে জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাযা শেষে মোশারফ হোসেনের প্রতিষ্ঠিত দারুল এহছান জামে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে তার ছোট ভাইয়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়েছে।
এর আগে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর নিহতের লাশ কৃষ্ণনগর একাডেমি মাঠ প্রাঙ্গণে নেওয়া হলে হাজার হাজার মানুষ ভীড় জমায়। এসময় এক হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। জানাজা শুরু হলে মাঠে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।
এদিকে, জানাযার নামাজের আগে মোশারাফ হোসেনের খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের সাবেক এমপি এইচ এম গোলাম রেজা, সাবেক এমপি শাহাদাৎ হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ ওয়াহেদুজ্জামান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মৌতলা ইউপি চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী, কালিগঞ্জ সার্কেলের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ইয়াছিন আলী, অফিসার ইনচার্জ হাসান হাফিজুর রহমান, উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ধলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান গাজী শওকাত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ও বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজ উদ্দীন, রতনপুর ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল হোসেন খোকন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শেখ মোজাহার হোসেন কান্টু, নিহত চেয়ারম্যানের বড় ভাই সোহরাব হোসেন, চেয়ারম্যান প্রতিষ্ঠিত মসজিদের সভাপতি আবু সাঈদ।
এসময় বক্তারা মোশারফ হোসেনের হত্যার সাথে জড়িত ও ষড়যন্ত্রকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি জানান। দাবি বাস্তবায়ন না হলে পরবর্তীতে বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধনসহ কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে বলেও প্রশাসনকে হুশিয়ারি দেন তারা।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, তারালী ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হোসেন ছোট, চাম্পাফুল ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক গাইন, কুশুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মেহেদী হাসান সুমন, দক্ষিণ শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান প্রশান্ত সরকার, মথুরেশপুর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান গাইন। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ কয়েক হাজার মানুষ জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। তার জানাজার নামাজের ইমামতি করেন মাওলানা আবুল হায়াত।
উল্লেখ্য, ব্যাক্তি জীবনে কেএম মোশারফ হোসেন দীর্ঘ ১০ বছরেরও বেশি সময় কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি জাতীয় পার্টির কালিগঞ্জ উপজেলার সাধারণ সম্পাদক ও পরে সাতক্ষীরা জেলার সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ইউনিয়নের উন্নয়নের যাদুকর হিসেবে পরিচিত। তিনি দারুল এহছান জামে মসজিদ, মোশাররফিয়া হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা এবং সহিলউদ্দীন অ্যান্ড করিমুন্নেছা শিশু একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৩ কন্যা সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
প্রসঙ্গত, শনিবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ১১টার দিকে কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা জাতীয় পার্টির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কেএম মোশাররফ হোসেনকে (৫২) কৃষ্ণনগর বাজারে অবস্থিত আওয়ামী যুবলীগ কার্যালয়ের সামনে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের মৃত ছৈলুদ্দীন কাগুচির ছেলে।
রোববার সন্ধ্যায় থানা সূত্রে জানা যায়, পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তাছাড়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি বলে পুলিশ।
তবে, রোববার সকালে চেয়ারম্যানের সমর্থক ও এলাকাবাসী খুনীদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলের প্রস্তুতি নিলে পুলিশ খুনীদের গ্রেফতারপূর্বক শাস্তি প্রদানের আশ্বাস দিয়ে তাদেরকে শান্ত করেন।
কালিগঞ্জ থানার ওসি হাসান হাফিজুর রহমান জানান, ঘটনাস্থল থেকে দুই রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। হত্যাকারীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
তিনি আরো জানান, হত্যার কারণ এখনও উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি।
এদিকে, এই হত্যার নেপথ্য কারণ নির্ণয়ে মাঠে নেমেছে পুলিশ।
ওসি জানান, স্থানীয় সাপখালি খাল উন্মুক্ত করা নিয়ে তার সাথে বিরোধ রয়েছে অনেকের। তার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবদুল জলিলের সাথে চরম বিরোধ চলছিল চেয়ারম্যানের। এ ছাড়া সম্প্রতি স্থানীয় মহসীন ডাকাতকে কে বা কারা কৃষ্ণনগর বাজারে কুপিয়ে জখম করে। মহসীন ডাকাত চেয়ারম্যান মোশাররফ বিরোধী লোক। এলাকায় চেয়ারম্যানের সাথে অনেকের রয়েছে রাজনৈতিক বিরোধ। ওসি জানান, এসব বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত কাজ চলছে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version