Site icon suprovatsatkhira.com

গুড়পুকুরে বিশ্বকর্মা ও মনসা পূজা : মেলা শুরু ২১ সেপ্টেম্বর

dav

ফাহাদ হোসেন: নানা আয়োজনে সাতক্ষীরা শহরের ঐতিহ্যবাহী গুড়পুকুরে অনুষ্ঠিত হলো বিশ্বকর্মা ও মনসা পূজা। সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টায় শহরের পলাশপোলের গুড়পুকুরস্থ বটবৃক্ষের নিচে সর্প দেবী মনসা ও শ্রী শ্রী বিশ্বকর্মা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পূজায় যোগ দেন হাজার হাজার ভক্ত। এ সময় পুরোহিত্য করেন পরিতোষ চক্রবর্তী। যদিও এ বছর গুড়পুকুরের মেলা শুরু হবে ২১ সেপ্টেম্বর।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পলাশপোল পূজা মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমীর কুমার বসু, সাতক্ষীরা মহাশ্মান কমিটির সাধারণ সম্পাদক তপন হালদার, তাপস প্রমুখ।
পূণ্যার্থীরা জানান, প্রতিবছর ভাদ্র মাস যাওয়ার দিন শহরের পলাশপোল এলাকার বটতলায় মনসা পূজা পালন করা হয়। হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয় এখানে। কেউ মানত করে, কেউ মা মনসাকে পূজা করে, কেউ দুধ-কলা-বাতাসা উৎসর্গ করে আবার কেউ দূর দূরান্ত থেকে আসে মা মনসাকে গান শোনাবার জন্য।
পূজা প্রাঙ্গণে মনসামঙ্গল পাঠ করেন নগরঘাটার কালি মাসির গানের দল, ভৈরবনগরের সন্ধ্যা রানী মন্ডল ও সবিতা রানী, নগরঘাটার নিমতলার সরলা সরকার এবং রথখোলার পুষ্পবাটি সরকার।
কালিমাসি বলেন, আমি চার বছর ধরে এখানে নাচ গান করি। হাজার হাজার মানুষ এখানে এসে পূজা-আর্চনা করে। মা মনসাকে দুধ-কলা দেয়। অনেক বছর আগের থেকে এ মেলা চলে আসছে। আগে সারা শহর জুড়ে এ মেলা হত।
প্রসঙ্গত, সাতক্ষীরার তিনশ বছরের ঐতিহ্য গুড় পুকুরের মেলা নিয়ে নানা রকম জনশ্রুতি আছে। কেউ বলে, মোগল আমলে একজন রাজকর্মচারী আজকের সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোলের মনসাতলায় (বটবৃক্ষতলে) বিশ্রাম নিতে গিয়ে তন্দ্রাছন্ন হয়ে পড়েন। দিনটি ছিল বাংলা সনের ৩১ ভাদ্র। হঠাৎ তিনি জেগে দেখেন, একেবারে কাছেই একটি সাপ ফণা তুলে তাকে ছায়া দিচ্ছে যাতে ঘুমাতে পারেন। সেই থেকে তিনি ওই বটতলায় সাপের দেবী মনসার উদ্দেশ্যে পূজা শুরু করেন এবং অন্যদেরও মনসা পূজা করতে বলেন। এ পূজার প্রসাদ পুকুরে ফেলে দেয়ায় এর পানি মিষ্টি হয়ে যায়। এ কারণে ওই পুকুরের নাম হয়ে যায় গুড়পুকুর।
অন্যরা বলেন, পুকুরে বেশি দিন পানি থাকত না। পরে স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে স্থানীয়রা সেখানে ১০০ ভাড় গুড় ঢেলে দিলে পুকুরে পানি ওঠে, তাই এমন নামকরণ। আবার শোনা যায়, আশপাশের খেজুর গাছের রস থেকে গুড় তৈরির পর তা বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থেই পুকুরটি খনন করা হয়েছিল।
আরেকটি মত হচ্ছে, গৌর বর্ণের ব্রাহ্মণরা পুকুরটির মালিক ছিলেন। এ থেকেই গৌরদের পুকুর। কালক্রমে বিবর্তনের ধারায় গুড়পুকুর।
নামের শানে-নজুল যা-ই হোক, পুকুরের নামেই মেলা হয়ে আসছে কয়েক শতাব্দী ধরে। সম্ভবত দ্বাদশ শতাব্দীর প্রথম দিক থেকে হয়ে আসছে মনসা ও বিশ্বকর্মা পূজাও। এলাকার অনেকেই বলেন, ওই দুই পূজা ঘিরেই মূলত গুড়পুকুর মেলা। যা সাতক্ষীরার সবচেয়ে বড় সামাজিক ও লোকজ উৎসব।
তবে, ২০০২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গুড় পুকুরের মেলার সার্কাস প্যান্ডেল ও সাতক্ষীরার রকসি সিনেমা হলে জঙ্গি হামলায় তিনজন নিহত ও অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়। সেই থেকে ঐতিহ্য হারাতে বসে এ মেলা। এরপর থেকে মেলার আয়োজন সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version