Site icon suprovatsatkhira.com

কলারোয়ায় হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে অর্থোপেডিক সার্জারি! রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন

মোজাহিদুল ইসলাম, কলারোয়া: কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থিত শাওন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে অপারেশনের সময় এলাকাবাসী হাতেনাতে হাতুড়ে ডাক্তার ও প্যাথলজি মালিককে আটক করেছে। আটককৃত হাতুড়ে ডাক্তারের নাম আব্দুল হান্নান।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় হাসেম আলী ক্লিনিক ব্যবসায়ী থেকে নিজেকে এমবিবিএস ডাক্তার পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তার সহযোগী তৌহিদুর রহমানকে নিয়ে যত্রতত্র অপারেশনের নামে রোগীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছেন।
কলারোয়া ক্লিনিক মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম জানান, কলারোয়া উপজেলার বয়ারডাঙ্গা গ্রামের জায়াদ আলীর ছেলে ইমরান হোসেনের সাথে তার হাতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে অপারেশনের জন্য শাওন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক হাসেম আলী ওষুধ বাদে ১০ হাজার টাকা চুক্তি করেন। শুক্রবার এই অপারেশনের দিনক্ষণ ঠিক হয়। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী ডাক্তার না এনে ভুয়া ডাক্তার হান্নান ও তার সহযোগী তৌহিদুর রহমানকে দিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাফি কক্ষে অপারেশন করানো হয়। এ সময় তারা ইমরানের হাতের আঙ্গুল কেটে ফেলেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে শাওন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গেলে প্রথমে সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। পরে আল্ট্রাসনোগ্রাফি রুমে প্রবেশ করে দেখা যায় হাতুড়ে ডাক্তার হান্নান ও তৌহিদুর রহমান তখনও অপারেশনে ব্যস্ত। একটি কাঠের চৌকিতে রোগী ইমরান চিৎকার চেচামেচি আর যন্ত্রণায় কবুতরের মতো ছটপট করছে।
ছেলের আত্মচিৎকার শুনে আল্ট্রাসনোগ্রাফি রুমের বাইরে তার বাবা-মা ভেতরে প্রবেশের জন্য ছটফট করছে। নোংরা একটি ঘর, ফ্যানের ব্যবস্থা নেই, খালি হাতেই করা হচ্ছে অপারেশন। এমনকি সেখানে পর্যাপ্ত তুলাও নেই।
সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে পেছনের দরজা দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন ডাক্তার হান্নান ও তৌহিদুর রহমান। এসময় এলাকাবাসী তাদের আটক করে।
তখন রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন। ক্লিনিক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ও সাংবাদিকদের সহযোগিতায় রোগীকে কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক কলারোয়া হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শফিকুল ইসলাম প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করান। তিনি জানান, রোগীর শরীর থেকে খুব বেশি রক্তক্ষরণ হয়েছে। তার অবস্থ সংকটাপন্ন।
এদিকে, আটককৃতদের স্থানীয় ক্লিনিক মালিক অ্যাসোসিয়েশনের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।
এ সময় সাংবাদিকদের ধারণ করা ভিডিও চিত্র ও এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে কলারোয়া হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শফিকুল ইসলাম জানান, অভিযুক্ত প্যাথলজি ও এই ভুয়া ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে আমরা অনেকগুলো অভিযোগ পেয়েছি। এ ঘটনায় একটি তদন্ত টিম গঠনপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন তৌহিদুর রহমান জানান, কলারোয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা পরিকল্পনা কর্মকর্তা কামরুল ইসলামকে তদন্ত টিম গঠনপূর্বক ভুয়া ডাক্তারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কলারোয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শরিফুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version