Site icon suprovatsatkhira.com

আলোচনা আড্ডায় ‘ইন্দুলেখা আগুনের ফুলকি হবে’ : কবি মৃন্ময় মণ্ডলের কাব্যগ্রন্থে সমাজ পরিবর্তনের প্রত্যাশা

ডেস্ক রিপোর্ট: পড়ন্ত শারদ বৈকালিক শুভ্র আকাশের ফাঁকে মেঘলা প্রকৃতির মাঝে কবিতা কথা আলোচনায় যেনো নতুন প্রাণ স্পন্দন জেগে উঠেছিল। কখনও ছন্দে কখনও গদ্য ভাষায় বারবার উথলে উঠছিল আলোচনার পরিমণ্ডল। সাথে কবিতা আবৃত্তির স্পন্দনে নিজেকেও কবি হয়ে উঠতে পুলকিত করে তুলছিল। আলোচনা আবৃত্তি আর আড্ডায় নিমগ্ন হয়ে পড়েছিলেন সাহিত্য প্রেমীরা।
শুক্রবার বিকালে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ প্রফেসর নিমাই মণ্ডলের (মৃন্ময় মণ্ডল) কাব্যগ্রন্থ ‘ইন্দুলেখা আগুনের ফুলকি হবে’ নিয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রাজ্ঞজনরা বলেন, কবি সৃষ্টি, কবি নতুনের পূজারী, কবিতা দ্রোহ, কবিতা আন্দোলন, কবিতা সংগ্রাম, কবিতা মানবতার। এই কবিতাই আমাদের নিয়ে যায় এক আলোকিত জীবনে যেখানে আছে প্রশান্তি, যেখানে নেই কোনো অনিয়ম, বিশৃংখলা, আছে যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তির জন্য নিরন্তর সংগ্রাম।
সাহিত্য ও সংস্কৃতিপ্রেমীদের অংশগ্রহণে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক অধ্যাপক গাজী আজিজুর রহমান। এতে জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় অংশ নেন ভাষাবিদ প্রফেসর কাজী মুহাম্মদ অলিউল্লাহ, প্রফেসর আবদুল হামিদ, প্রফেসর কালিদাস চন্দ্র চন্দ, কবি কিশোরী মোহন সরকার, কবি শুভ্র আহমেদ, কবি আশুতোষ সরকার, হাফিজুর রহমান মাসুম, ইবাইস আহমেদ, বাবলু ভঞ্জ চৌধুরী, শাহজাহান সিরাজ, সায়েম ফেরদৌস মিতুল, স ম তুহিন প্রমুখ।
কবি মনিরুজ্জামান ছট্টুর সঞ্চালনায় আয়োজক সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন অ্যাডভোকেট ফাহিমুল হক কিসলু। অনুষ্ঠানে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন কবি মৃন্ময় মণ্ডল। এতে কবিতা আবৃত্তি করেন মনজুরুল হক, দিলরুবা, মন্ময় মনির, তনিমা, অনিষাসহ অনেকেই।
কবি সাহিত্যিকদের ভিড়ে আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যক্ষ (অব.) সুভাষ সরকার, সাংবাদিক সুভাষ চৌধুরী ও কল্যাণ ব্যানার্জি, কবি শহিদুর রহমান, স্বদেশ পরিচালক মাধব দত্ত, বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী আবদুল জলিল, ইঞ্জিনিয়র আবিদুর রহমান, কবি কবির রায়হান, প্রভাষক ইদ্রিস আলি প্রমুখ।
আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রাজ্ঞজনরা বলেন, প্রমিত ভাষায় রচিত কবিতাগুলো যেমন শক্তিশালী তেমনি এর লেখকও শক্তিমান। অস্ট্রেলিয়ার প্রবাস জীবনে বসে বহু কবিতা যখন লিখছিলেন তখনই তার ‘ইন্দুলেখা আগুনের ফুলকি হবে’ প্রকাশিত হয়। তিনি নিজের লেখায় হতাশা থেকে আশার পথ দেখিয়েছেন। নির্যাতিত মানুষের জাগরণের কথা বলেছেন। তার কবিতায় অনুপ্রাস নেই, আছে উপমা। কবিতায় তিনি কল্পনার গাঁথুনি গেঁথেছেন, অভিজ্ঞতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন, স্বতন্ত্র স্বাদ বিন্যাস করে পাঠকের সামনে তা তুলে ধরেছেন। তার কবিতার ছন্দে তিনি তুলে এনেছেন বাঙালির জাতীয় সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, গণআন্দোলন, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের ইতিহাস। শ্রদ্ধা জানিয়েছেন শহীদ সন্তানদের প্রতি। তিনি তার কবিতায় সমাজ পরিবর্তনের প্রত্যাশা করেছেন, আমাদের উন্নত জীবনের ছায়া শীতল বটবৃক্ষ রচনা করেছেন। ভবিষ্যতের মানুষকে তিনি আলোকিত মানুষ হিসাবে দেখতে চেয়েছেন। কবি তার কবিতায় শব্দচয়নে, বাক্যের বিন্যাসে, ভাষার মাধুর্য রক্ষায় নিজের সব উজাড় করে দিয়েছেন। একজন পাঠক হিসাবে যে কেউ এই কবিতাগুচ্ছকে নিজের কথা, মনের কথা, মানুষের কথা, সমাজের কথা এবং সর্বোপরি মানবতার কথা হিসাবে হৃদয়ে ধারণ করবেন।
আলোচনায় কবি সাহিত্যিকরা আরও বলেন, একজন শিক্ষক কেবল শিক্ষাঙ্গনে পাঠ্যসূচির শিক্ষাই দেন না। তিনি তার নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে রচনা করেন কাব্যের ভূবন। সেই কাব্যই হয়ে ওঠে আমাদের পথ প্রদর্শক, অন্ধকার থেকে আলোর পথ। কবি মৃন্ময় মণ্ডল তার কবিতাগুচ্ছ দিয়ে এভাবেই রচনা করেছেন ভবিষ্যতের পথের ঠিকানা। সাথে সাথে তিনি প্রকৃতিকে ভালবেসেছেন, দেশপ্রেমের পরীক্ষায়ও উর্ত্তীণ হয়েছেন।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version