Site icon suprovatsatkhira.com

সার্কিট হাউজ-কাথণ্ডা সড়ক যেন মৃত্যু ফাঁদ, দুর্ভোগে লক্ষাধিক মানুষ

গাজী আসাদ ও এসএম নাহিদ হাসান: দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে সাতক্ষীরা সার্কিট হাউজ-কাথণ্ডা সড়কের বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে। খানাখন্দে ভরা এ সড়কে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না কোন যানবহন। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কের বড় বড় গর্তে পানি জমে নালায় পরিণত হয়। ফলে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে সাতক্ষীরা পৌর এলাকাসহ লাগোয়া কয়েকটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সার্কিট হাউজ মোড় থেকে কাথ পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার সড়কে কার্পেটিং, ইট, বালু ও খোয়া উঠে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কে চলাচলা করা স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণির পেশার মানুষ প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতে সড়কটির বড় বড় গর্ততে পানি জমে কোথাও নালা কোথাও পুকুরে পরিণত হচ্ছে। ঘটছে ছোটবড় দুর্ঘটনা। এ সড়কের জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন অফিসের সামনে, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক কার্যালয়ের সামনে, বকচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে, আনিসুরের দোকানের সামনে, বর্তমান আগরদাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজনুর রহমানের বাড়ির সামনে, জুয়েলের চাতালের সামনে, বকচরা পশ্চিম পাড়া মসজিদের সামনে, পরানদহ বাজার, বারপোতা, পয়রাডাঙ্গা, তেতুলতলা, আড়–খালী, মৃগিডাঙ্গাসহ ঘোনা, কাথণ্ডা, বৈকারী পর্যন্ত সড়কে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। পুরো রাস্তাটির কোথাও পিচের চিহ্ন নেই। পিচ ও ইট উঠে ভরে গেছে খানাখন্দে। বৃষ্টি হলেই বাধে বিপত্তি। বড় বড় গর্তে রাস্তার চিহ্ন থাকে না। গর্তের মধ্যে পানি জমে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটে। প্রায় এক যুগ ধরে সংস্কার না হওয়ায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে সড়কটি। কাদা-পানিতে ভরা এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন মাইক্রোবাস, মটরসাইকেল, সাইকেল, ভ্যান, ইঞ্জিনভ্যান, ইজিবাইকসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ও সাধারণ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে সাতক্ষীরা পৌর এলাকার বকচরা, মেহেদীবাগ, সবুজবাগ, শিবপুর ইউনিয়নের তেতুলতলা, পয়রাডাঙা, বারোপোতা, আড়–য়াখালী, মৃগিডাঙ্গা, ঘোনা, কাথন্ডা, বৈকারি, আগরদাঁড়ি, শিবপুর, আবাদের হাটসহ আশপাশের ৩০টি গ্রামের মানুষ চলাচল করে। কিন্তু দীর্ঘ দিন সংস্কার না হওয়ায় সড়কটি মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
ভ্যানচালক ইয়াসিন শেখ বলেন, পরাণদহা বাজার থেকে ভ্যানে চারজন যাত্রী নিয়ে সার্কিট হাউজ মোড়ে যেতে যেন দিন কেটে যায়। ভ্যানে মালামাল বহন করতে বেগ পেতে হয়। এখন বৃষ্টির সময় দেখবেন কিছুদূর পর পর বড় বড় পুকুর হয়ে আছে। অনেকে রাতে গাড়ি নিয়ে এ পুকুরের মধ্যে পড়ে।
আনিসুর রহমান বলেন, অনেক দিন ধরে সড়কটি খারাপ। আমাদের চলতে খুব কষ্ট হয়। নানা প্রয়োজনে সব সময় শহরের সাথে যোগাযোগ রাখতে হয়। কিন্তু সড়কের যা অবস্থা তাতে অসুস্থ রোগী হাসপাতালে যাওয়ার আগেই সড়কে যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
পায়রাডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা কলেজ ছাত্রী মোমেনা খাতুন বলেন, এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন কলেজে যেতে হয়। রাস্তা এতো খারাপ যে চলাচল করা যায় না। রাস্তা দিয়ে যানবাহন না, গরুর গাড়িও চলা দুষ্কর। এই ভাঙা রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে না পারায় বাধ্য হয়ে শহরে হোস্টলে থাকতে হচ্ছে। রাস্তাটি দ্রæত সংস্কার করা দরকার।
আগরদাঁড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মজনুর রহমান জানান, এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ লোক চলাচল করে। অথচ দীর্ঘ দিন রাস্তাটি নষ্ট হয়ে আছে। জনগণ অভিযোগ করলেও করার কিছু নেই। রাস্তাটি এলজিইডি’র আওতায়।
শিবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মজিদ জানান, রাস্তাটি দীর্ঘ দিন খারাপ হয়ে আছে। এলাকার জনগণ সব সময় রাস্তাটি ঠিক করার জন্য বলে। কিন্তু রাস্তা খারাপ জেনেও আমাদের করার কিছু নেই। এটা এলজিইডির রাস্তা। আমি কয়েক বার এলজিইডিকে রাস্তা সম্পর্কে অবহিত করেছি। তারা দ্রুত সংস্কার হবে বলে আশা দিচ্ছি।
সদর উপজেলা এলজিইডি বিভাগের প্রকৌশলী মো. শফিউল আলম জানান, রাস্তাটি সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে সার্কিট হাইজ থেকে ৪ দশমিক ২ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার করা হবে। এর জন্য এক কোটি দশ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া শেষ। বর্ষার পর কাজ শুরু হবে। পরে রাস্তার অন্য অংশটুকু সংস্কার করা হবে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version