এস.এম. নাহিদ হাসান: বর্তমান সরকারের সাড়ে চার বছরে সাতক্ষীরা জেলায় বিদ্যুৎখাতে বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। এই সময়ে জেলার নতুন ২ লক্ষ ১৩ হাজার ১৮৭টি পরিবার/শিল্প প্রতিষ্ঠান/সেচ/অন্যান্য গ্রাহককে বিদ্যুতায়নের আওতায় এনেছে সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। একই সাথে সিস্টেম লস কমিয়ে ১১ দশমিক ৩৬ ভাগে নিয়ে এসেছে সংস্থাটি। বিদ্যুৎ বিল আদায়ের হার উন্নীত হয়েছে ৯৯ ভাগে। সব মিলিয়ে জেলার ৮৬ ভাগ মানুষ বিদ্যুতায়নের আওতায় এসেছে। যা ২০১৯ সালের মধ্যে ১০০ ভাগে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।
সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জানায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১৯৮২ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৩১ বছরে জেলার ১ লক্ষ ২৬ হাজার ৯০৭টি পরিবার/শিল্প প্রতিষ্ঠান/সেচ/অন্যান্য গ্রাহককে বিদ্যুতায়নের আওতায় নিয়ে আসে। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সালের মে মাস পর্যন্ত মাত্র সাড়ে চার বছরে নতুন সংযোগ দেওয়া হয়েছে ২ লক্ষ ১৩ হাজার ১৮৭টি পরিবার/শিল্প প্রতিষ্ঠান/সেচ/অন্যান্য গ্রাহককে।
১৯৮২ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহের গড় চাহিদা ছিলো ১৫ মেগাওয়াট। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালে যা বেড়ে দাড়ায় ২৮ মেগাওয়াটে।
১৯৮২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৩১ বছরে ৩৩ কেভির বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে ৯৫ কিলোমিটার এলাকা বিদ্যুতায়নের আওতায় আসে। যা ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালে বেড়ে ১৬৫ কিলোমিটারে উন্নীত হয়। অর্থাৎ গ্রাহক পর্যায়ে সংযোগ ও বিদ্যুৎ লাইন সম্প্রসারণে গত সাড়ে চার বছরের (২০১৪ থেকে ২০১৮) অর্জন বিগত ৩১ বছরের (১৯৮২ থেকে ২০১৪) চেয়ে বেশি।
সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ ৩১ বছরে সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি আবাসিক পর্যায়ে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার ৪৮৯টি পরিবারকে বিদ্যুৎতায়নের আওতায় নিয়ে আসে। যেখানে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল- চার বছরে সংস্থাটি আবাসিক পর্যায়ে নতুন ১ লক্ষ ৬২ হাজার ৯৯৪টি পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে। ১৯৮২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সাতক্ষীরা জেলায় পল্লী বিদ্যুতের উপকেন্দ্র ছিলো ছয়টি। পরের সাড়ে চার বছরে নতুন তিনটি উপকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর ৩১ বছরে সংস্থাটি ৩০৫০টি সেচ সংযোগ দিলেও ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালে সাড়ে চার বছরে নতুন ১ হাজার ১৩৬টি সেচ সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
সবমিলিয়ে বর্তমানে জেলার ৩ লক্ষ ৪০ হাজার ৯৪টি পরিবার/শিল্প প্রতিষ্ঠান/সেচ/অন্যান্য গ্রাহক বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করছে।
এদিকে, ২০০৮ সাল পর্যন্ত সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় সিস্টেম লস হতো ১৫ দশমিক ৬১ ভাগ। যা ২০১৩ সালে নেমে আসে ১৪ দশমিক ৮১ ভাগে। এ হার কমে ২০১৮ সালের মে মাস পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩৬ ভাগে এসে দাড়িয়েছে।
মানুষের মাঝে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রাখার প্রবণতাও কমেছে। ২০০৮ সাল পর্যন্ত সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় ৯২ ভাগ বিদ্যুৎ বিল আদায় হতো। ২০১৩ সালে এই হার বেড়ে ৯৫ ভাগে উন্নীত হয়। আর বর্তমানে বিদ্যুৎ বিল আদায় হচ্ছে শতকরা ৯৯ ভাগ।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বল্লী ইউনিয়নের নারায়নপুর গ্রামের নতুন গ্রাহক মো. রবিউল ইসলাম গাজী বলেন, আমি ও আমার পরিবার নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত। বিগত বছরগুলো গরমের সময় অত্যন্ত কষ্ট হতো। কিন্তু বর্তমানে সেই কষ্ট অনেকাংশে লাঘব হয়েছে। এখন ফ্যান, লাইটসহ অন্য সব জিনিস ব্যবহার করতে পারছি। শুধু আমি নয় আলোকিত হয়েছে গোটা গ্রাম।
একই গ্রামের ডা. মিজানুর রহমান বলেন, আগে মোবাইল চার্জ দিতে বাজারে যেতে হতো। কিন্তু এখন বাড়িতে সব হয়। তিন মাসে আমাদের গ্রামের ১২টি পরিবার এবং এক বছরে ২৫টি পরিবার বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী গ্রাম আমতলার কয়েকটি পরিবারের মাঝে বিদ্যুতের নতুন সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে আমরা খুশি। সরকারে এই অগ্রযাত্রাকে সাধুবাদ জানাই।
আশাশুনির বলাবাড়িয়া গ্রামের কৃষক বিনয় মণ্ডল বলেন, দেশ স্বাধীনের ৪৬ বছর পরে শেখ হাসিনার সরকার আমাদের গ্রামসহ হাঁসখালি, গাইয়াখালি, ঠাকুরাবাদ গ্রামে বিদ্যুৎ দিয়েছে। এতো বছর পরেও যে আমরা বিদ্যুৎ পেয়েছি- এতেই আমরা খুশি। এখন আর আমাদের ভ্যান চার্জ দিতে অন্য গ্রামে যেতে হয় না। রাতে আর ঘরবাড়ি অন্ধকার থাকে না। ছেলেমেয়েরা বিদ্যুতের আলোয় লেখাপড়া করছে।
সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার রবীন্দ্রনাথ দাস সুপ্রভাত সাতক্ষীরাকে বলেন, সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তত্ত্বাবধানে ৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬০৭ কিলোমিটার এলাকায় লাইন সম্প্রসারণ করে ৩২ হাজার ৬৮০টি সংযোগ দিয়ে দেবহাটা উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা হয়েছে। তালা ও সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনার কাজ চলমান। কলারোয়া ও কালিগঞ্জ উপজেলার শেষ হবে ডিসেম্বর নাগাদ। শ্যামনগর ও আশাশুনিতে প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার এলাকায় লাইন সম্প্রসারণের কাজ করা হবে। নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ দ্রæত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি ২০১৯ সালের মধ্যে সাতক্ষীরা জেলা শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, ১৯৮২ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৩১ বছরে যে কাজ হয়নি, বর্তমান সরকার গত সাড়ে চার বছরে তার থেকে বেশি কাজ করেছেন।