Site icon suprovatsatkhira.com

প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চান বঙ্গবন্ধুর দাফনে অংশ নেওয়া সাতক্ষীরার রজব আলী

ডেস্ক রিপোর্ট: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ চান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দাফনে অংশ নেওয়া সাতক্ষীরার মওলানা রজব আলী মোল্লা। রজব আলীর একটাই প্রত্যাশা, ‘আমি শুধু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সামনে যেতে চাই, তার সঙ্গে দেখা করতে চাই, বলতে চাই আমার হাতে বঙ্গবন্ধুর বুকের ছোঁয়া, আমার কানে এখনও বঙ্গবন্ধুর কথা বাজে, ‘কিরে তোরা আসছিস না কেন?’
সাতক্ষীরা শহরতলীর মেহেদীবাগের মওলানা রজব আলী মোল্লা সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে জানান, তিনি ১৯৭৫ সালে গোপালগঞ্জের গোবরা কওমী মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। কিছুদিন বাদে তিনি গোবরা ছেড়ে একই এলাকার গওহরডাঙা মাদ্রাসায় ভর্তি হন।
১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার একদিন পর টুঙ্গিপাড়ায় একজন দফাদার এসে সবাইকে খবর দেয় গোপালগঞ্জ শহর আর্মিতে ভরে গেছে। আপনারা কেউ কোন কথা বলবেন না। আর্মি যা বলে তাই শুনবেন। এর আগেই রেডিওতে তিনি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দুঃসংবাদ শুনতে পান।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, গোসল শেষে আর্মিতে ঘেরা ময়দানে বঙ্গবন্ধুর নামাজে জানাযায় ২৫ থেকে ৩০ জন মুসল্লি উপস্থিত ছিলেন। তাতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন গওহরডাঙা মাদ্রাসার কলাখালি হুজুর। এরপর তার কবর খোড়া হয়। সেখানেই শায়িত হন মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
রজব আলী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে গোসল দেওয়ার কাজে আমি সাহায্য করেছিলাম। মনে আছে তিব্বত ৫৭০ সাবান এনে পাশের ডোবার পানি দিয়ে গোসল করানো হয়েছিল তাকে। আমি বঙ্গবন্ধুর গায়ে জমাট বাধা রক্ত ভেজা গেঞ্জি দেখেছিলাম। গুলিতে ঝাঝরা হয়ে গিয়েছিল তার বুক। সে এক দুঃসহ স্মৃতি।
রজব আলী মোল্লা জানান, বঙ্গবন্ধুর মৃতদেহ গোসলের কাজে অনেকের মধ্যে আরও যারা সহায়তা করেছিলেন তারা হলেন, গোপালগঞ্জের দিঘলিয়ার মো. জালাল উদ্দিন এবং পাটগাতি গ্রামের বেলায়েত হোসেন। এই জালাল উদ্দিন সাতক্ষীরার কামালনগর মসজিদের ইমাম ছিলেন। আর বেলায়েত হোসেন ছিলেন সাতক্ষীরা আনসার ক্যাম্প মসজিদের ইমাম। দুজনেই আজ প্রয়াত।
তাদের স্মরণ করে তিনি বলেন, আমরা সবাই একসাথে থাকতাম। একসাথে বঙ্গবন্ধুর বাবা শেখ লুৎফর রহমান ও তার মায়ের কুলখানিতে অংশ নিয়েছিলাম ১৯৭৩ সালে। আমরা ছাত্র হিসাবে সেখানে পৌঁছানোর পর বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে শুনেছিলাম ‘কি রে তোরা খেয়েছিস? খেয়ে নে’।
অত্যন্ত ভরাক্রান্ত হৃদয়ে মওলানা রজব আলি মোল্লা স্মৃতির অতল তলে হাতড়ে এখনও আপন মনে সেকথা ভাবেন। আজও সেই দুঃসহ দৃশ্যের স্মৃতি ভুলতেই পারেন না তিনি। কথাগুলো বলতে বলতে তিনি আবেক আপ্লুত হয়ে পড়ছিলেন। অঝরে কাঁদাছিলেন।
সেদিন সেনা সদস্যরা এসেই বলেছিল, ‘সময় কম, খুব তাড়াতাড়ি দাফন কর’। আমরা বলেছিলাম, গোসল না করিয়ে দাফন করানো যায় না। খুব কম সময়ের মধ্যে গোসল আর দাফন শেষ দেখে সেনা সদস্যরা কপ্টারে ফিরে গেল। কপ্টারের সেই আওয়াজ শুনে আমরাও ফিরে এলাম গহরডাঙ্গা মাদ্রাসায়।
আমি তখন গোপালগঞ্জের সিঙ্গিপাড়ায় একটি বাড়িতে লজিং থাকতাম। বাড়ির মালিকের ছেলের নাম ছিল আতাউল গনি বাদশা। তিনি একসময় সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও পরে খুলনার পুলিশ সুপার ছিলেন। শুধু সিঙ্গিপাড়া নয় একই এলাকার নওশের মোল্লার বাড়িতে আমি লজিং থাকতাম। সেখানে বাড়ির ছেলেমেয়েদের কিতাব পড়াতাম। মসজিদ আর বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ছিল পাশাপাশি। বঙ্গবন্ধুকে সেই এলাকাই দাফন করা হয়।
বঙ্গবন্ধুকে গোসল করানোর কথা রজব আলী কখনও প্রকাশ করেছেন, আবার কখনও চেপে গেছেন। বিশেষ করে ৭৫ পরবর্তী দীর্ঘদিন এবং পরে জোট সরকারের আমলে বিষয়টি নিয়ে খানিকটা আতংকেও ছিলেন তিনি। তা সত্ত্বেও মাঝে মাঝে সাহস করেই ১৫ আগস্টের নানা কর্মসূচিতে রজব আলী মোল্লা বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুকে গোসল করিয়েছিলাম। গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া তার রক্তভেজা বুকের দৃশ্য এখনও আমার চোখে ভাসছে’। ৭৯ বছর বয়সে জীবন সায়াহ্নে আসা রজব আলী এসব নিয়ে এখনও কষ্ট বোধ করেন। দুঃখে ভারী হয়ে ওঠে তার মন।
তিনি বলেন, আগস্ট যায়, আগস্ট আসে, আসুক আগস্ট, কিন্তু ১৫ই আগস্ট যেন আর দেখতে না হয় এই জাতিকে।
স্মৃতিচারণ করতে যেয়ে রজব আলী আরও বলেন, ১৯৮০ সালে তিনি দাওরায়ে হাদিস শেষ করে কুষ্টিয়ায় দুই বছর শিক্ষকতা করেন। এরপর চলে আসেন সাতক্ষীরায়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতাউল গনি বাদশার সহযোগিতায় পুলিশ লাইনস মসজিদে ইমামতির দায়িত্ব পান তিনি। টানা ৩২ বছর ইমামতির পর তিনি অবসরে গেছেন। এখন তার বড় ছেলে মাওলানা মাহমুদুল হাসান সাতক্ষীরার সদর থানার ইমাম ও ছোট ভাই মাওলানা শরিফুজ্জামান পুলিশ লাইন মসজিদে ইমামতি করেন।
সাতক্ষীরা শহরের মেহেদীবাগে থাকেন শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়লিনী ইউনিয়নের ৯নং দাতনেখালি গ্রামের মৃত কলিম উদ্দিনের ছেলে রজব আলী মোল্লা।
তার ইচ্ছা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সাথে দেখা করে তাকে সেই দুঃসহ স্মৃতির কথা বলবেন।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version