মীর খায়রুল আলম, দেবহাটা: মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ-উল-আযহাকে ঘিরে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে দেবহাটার কামারশালাগুলো। টুং-টাং শব্দে অবিরাম কাজ চলছে কামারশালায়। ঈদকে ঘিরে দা, কুড়াল, বটি, ছুরি, কোদালসহ লোহার যন্ত্রাংশ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে তারা। কামারদের এই ব্যস্ততা জানান দিচ্ছে ঈদুল আযহা অতি সন্নিকটে।
দেবহাটার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কেউ হাতুড়ি দিয়ে লোহা পেটাচ্ছে, কেউ হপার টানছে, কেউবা আবার তৈরি করা সামগ্রীতে শান (ধার) দিচ্ছে। কোরবানীর পশুর চামড়া ছাড়ানো থেকে শুরু করে মাংস কাটার কাজে ব্যবহার করা হবে কামারশালায় তৈরি এসব সামগ্রী।
তবে কামাররা জানান, এবছরের ব্যস্ততা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। কামারশিল্পের কাঁচামাল অনেক দামি হওয়ায় তা ক্রেতাদের ক্রয়সীমার বাইরে চলে গেছে। তাই ক্রেতারা তাদের পছন্দমতো সরঞ্জাম অর্ডার দিতে পারছে না। কেননা নতুন ছুরি তৈরি করতে ৫০-৬০ টাকা, দা ও বটি চার’শ থেকে সাড়ে চার’শ টাকা, কাচি ৫০-৬০ টাকা, ফোড় বা নিড়ানি (ঘাসমারা যন্ত্র) ২৫-৩০ টাকা, কোপা চার’শ থেকে সাড়ে চার’শ টাকা, লাফনাৎ (মাটিকাটা যন্ত্র ) দুই’শ থেকে দুই হাজার পাঁচ’শ টাকা কেজি দরে বিক্রয় হচ্ছে।
অপরদিকে, শান দেওয়া বটি ৪০ টাকা, কাচি ২০ টাকা, দা ৪০ টাকা, কোপা ৮০ টাকা, ছুরি ১৫ টাকা হওয়ায় শানের পরিবর্তে হাতে তৈরি করা যন্ত্রের পরিবর্তে আধুনিক যন্ত্রের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন ক্রেতারা। কিন্তু অনেক কম টাকায় আধুনিক মেশিনের মাধ্যমে তৈরি এসব যন্ত্রপাতি পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে সরঞ্জাম তৈরি করতে এখন কামারদের কাছে কেউ আসতে চাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে সখিপুর কামার পল্লীর সুকুমার কর্মকার বলেন, আমরা চার পুরুষ ধরে এই পেশাকে আকড়ে ধরে জীবিকা নির্বাহ করছি। আগে প্রতিদিন প্রায় হাজার টাকার মতো আয় হতো। কিন্তু বর্তমান তেমন কাজ না থাকায় সপ্তাহে গড়ে এক-দুই হাজার টাকা করে আয় হয়। তবে আমাদের মূল ব্যবসাটা হয় কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র্র করে।
অপর এক কর্মকার স্বপন জানান, তিনি ২০ বছর ধরে এই পেশায় কর্মরত আছেন। কোরবানিকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন দুই একটি অর্ডার আসতে শুরু করেছে। তবে, কাজের চাপ খুববেশি না থাকলেও কয়লার সমস্যার কারণে কাজের ক্ষতি হচ্ছে। কাজ এগোচ্ছে না। যন্ত্র তৈরির জ্বালানি কয়লার দামও অনেক বেশি। গত দুই-এক বছর পূর্বে এক বস্তা কয়লার দাম ছিল পাঁচ’শ টাকা আর এবার তা আমাদের কিনতে হচ্ছে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায়। এছাড়া দিন-রাত সারাক্ষণ আগুনের পাশে বসেই কাটাতে হয়।
কামারেরা আরও জানান, এভাবে যদি লোহা ও কয়লার দাম বাড়তেই থাকে তাহলে কামার শিল্প টিকিয়ে রাখাই কঠিন হবে।
তবে প্রতি বছর কোরবানীর ঈদ এলেই কামারদের কদর কিছুটা হলেও বাড়ে। এরপর থেকে বছরের অবশিষ্ট দিনগুলোতে অধিকাংশ কামারেরাই থাকেন প্রায় কর্মহীন। যেকারণে অভাব অনটনেই চলছে দরিদ্র কামারদের জীবন সংসার। হচ্ছে না তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন। ফলে অনেক কামারই তাদের এই আদিপেশা ছেড়ে বেছে নিচ্ছেন বিকল্প পেশা। ঐতিহ্যবাহী এ পেশাটি বিলুপ্ত হওয়ার আগেই এর পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন অনেকই।
দেবহাটায় কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছে কামারশালা
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/