Site icon suprovatsatkhira.com

দু’জন ডাক্তারে ধুকছে চিকিৎসা সেবা

বি. এম. জুলফিকার রায়হান, তালা: তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের সামনে উপজেলার চরগ্রামের ময়েজ উদ্দিন তার মুমূর্ষু স্ত্রীকে নিয়ে ছুটাছুটি করছেন। চিকিৎসা করানোর জন্য ডাক্তার খোঁজাখুঁিজর একপর্যায়ে ডা. রাজীব সরদার আসলেন এবং ভালোভাবে না দেখেই তিনি রোগীকে খুলনা অথবা সাতক্ষীরায় নেওয়ার পরামর্শ দিলেন। মাছিয়াড়া গ্রামের শহিদুল গাজী তার শিশু কন্যাকে নিয়ে এসেছেন ডাক্তার দেখানোর জন্য, কিন্তু ডাক্তার না পেয়ে তিনি সাতক্ষীরার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। তালার আটারই গ্রাম থেকে এসেছেন জুলেখা বিবি তার সন্তান সম্ভবা মেয়েকে নিয়ে, কিন্তু ডাক্তার না থাকায় প্রাইভেট ক্লিনিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। এমন দৃশ্য প্রতিদিনের। এভাবে প্রতিদিন শতাধিক রোগী তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সরকারি চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ছুটছেন স্থানীয় প্রাইভেট ক্লিনিক অথবা খুলনা বা সাতক্ষীরার হাসপাতালগুলোতে।
তালা উপজেলার প্রায় চার লক্ষ মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্য সরকারি এ স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে রয়েছেন মাত্র দুই জন ডাক্তার। ফলে প্রতিদিন শত শত রোগী চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জনবল সংকটে নষ্ট হচ্ছে এক্স-রে, ইসিজি, আল্ট্রা¯েœাগ্রাম, জেনারেটরসহ কোটি কোটি টাকার অপারেশন থিয়েটারের সরঞ্জাম।
অপরদিকে, তালা হাসপাতালে স্থানীয় প্রভাবশালী কতিপয় কর্মচারীর দাপটে অসহায় ডাক্তাররা বেশীদিন টিকতে পারেন না বলেও জনশ্রæতি রয়েছে। হাসপাতালে ডাক্তার সংকট, ঔষুুধ সংকট, নি¤œমানের খাবার পরিবেশন, নোংড়া শৌচাগার, খাবার পানির সংকট, লাইট ও ফ্যান নষ্ট ইত্যাদি সমস্যা নিত্যদিনের।
এর সাথে যোগ হয়েছে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের নির্ধারিত ফি’র অধিক ভাড়া আদায়ের অভিযোগ। কিলোমিটার প্রতি ১০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা থাকলেও সুযোগ বুজে কিলোমিটারে ২০-২৫ টাকা পর্যন্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। এ কারণে জটিল রোগী আসলেই প্রাইভেট অ্যামবুলেন্সে খুলনা মেডিকেল কলেজ অথবা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিতে হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানাগেছে, তালা উপজেলা সদরের ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ডাক্তার সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩৪ জন ডাক্তারের পদ থাকলেও আছেন মাত্র ৩ জন, তার মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জেলা সদরে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকায় বর্তমানে দুই জন ডাক্তার কোন রকমে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন।
হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে ৩নং বেডে ভর্তি রোগীর অভিভাবক খালেদা অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালের বাথরুম ব্যবহারে অযোগ্য। সময় মত কোন কিছুই পাই না। এখনও (সন্ধ্যা পর্যন্ত) কোন ডাক্তার আসেনি।
তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কুদরত-ই-খূদা জানান, মাত্র দুই জন ডাক্তার দিয়ে একটা হাসপাতাল চালানো কিভাবে সম্ভব। তবে ডাক্তার স্বল্পতার কারণে চিকিৎসা সেবায় কিছুটা বিঘœ হলেও, আমরা যথাসাধ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version