বাহলুল করিম: পেঁপে এক ধরণের ফল বা সবজি। পাকা পেঁপে সকলের কাছে খুবই প্রিয়। ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, হৃদরোগে, কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায়, কৃমি দূর করতে, কোলেস্টোরেল কমাতে, দাদ ও একজিমা সমস্যায় কাঁচা ও পাকা পেঁপে খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়া দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে, ত্বকের লাবণ্য ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে, হজম শক্তি বৃদ্ধিতে, চুলের গোড়া শক্ত করতে, ব্রণের দাগ দূর করতে পেঁপে ওষুধের মতো কাজ করে থাকে। পাঁকা পেঁপে পাখিসহ অন্যান্য পশুপাখি খেয়ে থাকে।
রাস্তার আশেপাশে, বাড়ির আঙিনায়, বাড়ির ছাদে, মাঠে, বাগানে পেঁপে গাছ দেখতে পাওয়া যায়। পেঁপে গাছ ১০-২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এটি আকারে খুব বেশি বড় হয় না। এর ভেতরটা ফাঁপা থাকে। এর পাতা লম্বা বোটাযুক্ত ছাতার মতো হয়ে থাকে। পাতা দেখতে সবুজ রঙের হয়। পাতার অগ্রভাগ সুচালো।
পেঁপে দেখতে গোলাকার বা লম্বাকার বা ডিম্বাকৃতির হয়ে থাকে। কাঁচা অবস্থায় এর বাইরের আবরণ সবুজ বা হালকা সবুজ রঙের হয়ে থাকে। ভিতরের অংশ সাদা রঙের হয়। এটি পাকলে বাইরের আবরণ গাঢ় কমলা বর্ণ ধারণ করে। পাকা অবস্থায় ভিতরের অংশ লাল বা গাঢ় কমলা বর্ণের হয়। কাঁচা অবস্থায় পেঁপের বাইরের আবরণ শক্ত। কিন্তু ফল পাকলে নরম ও রসালো হয়।
পেঁপের দানা বা বীজ অপরিণত অবস্থায় সাদা রঙের হয়। কিন্তু ফল পাকলে এর বীজ কালো বর্ণ ধারণ করে। বীজের বাইরে অংশ এক ধরণের তরল আবরণ দ্বারা আবৃত থাকে। পেঁপে কাটলে সাদা আঠা বা কষ বের হয়।
প্রায় সারা বছর পেঁপে পাওয়া যায়। সাতক্ষীরাসহ বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র পেঁপে চাষ করতে দেখা যায়। এর স্থানীয় নাম পেঁপে। ইউনানী নাম পাপিতা, আরানড খরবূযা। আয়ুর্বেদিক নাম অমৃততুম্বী।
সাতক্ষীরা অঞ্চলের মানুষ এটিকে পেঁপে নামে চেনে। এটি অধিকাংশ মানুষ কাঁচা সবজি হিসেবে রান্না করে খায়। আবার অনেকে পাকা পেঁপেও খেয়ে থাকে। কেননা পেঁপেতে রয়েছে নানবিধ ওষুধী গুণাগুণ। পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে থাকে।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. কফিল উদ্দীন বলেন, “পেঁপে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ একটি সবজি জাতীয় খাদ্য। এটি আবার অনেকে পাকিয়ে ফল হিসেবেও খায়। কাঁচা পেঁপে রান্না করে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভাল উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া দাদ এবং একজিমা সমস্যায় ও পেটের কৃমি দূর করতে পেঁপে ওষুধের মতো কাজে দেয়। এতে প্রাকৃতিক ফাইবার হিসেবে পুষ্টি ও ভিটামিন এ, সি, ও কে রয়েছে। এছাড়া এতে নিয়াসিন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম ও প্রোটিন রয়েছে। শরীর ভাল রাখতে নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত।”
পেঁপে সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়। এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদরের কাটিয়া সরকার পাড়ার বাসিন্দা নারগিস সুলতান বলেন, “পেঁপে একটি সুস্বাদু তরকারি। পেঁপে রান্না করে খেতে বেশ মজা লাগে। এছাড়া পেঁপেতে নানাবিধ খাদ্য উপাদান রয়েছে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। যা আমাদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায়। পেঁপের সাথে টক দই মিশিয়ে চুলে মাখলে চুলের গোড়া শক্ত হয়। এই মিশ্রণটি ত্বকে লাগালে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া পাকা পেঁপে খেলে মুখের রুচি বাড়ে ও হজমে সহায়তা করে থাকে।”
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা শহরের পুষ্টির ফেরিওয়ালা রুহুল কুদ্দুস বলেন, “সাতক্ষীরাতে প্রচুর পরিমাণে পেঁপে চাষ হয়ে থাকে। বেশিরভাগ মানুষ বসতবাড়িতে পেঁপে চাষ করে থাকে। নিয়মিত পেপে খেলে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। পেঁপের ভিটামিন এ, সি এবং ই শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এর চমৎকার উৎস। যা উচ্চ কোলেস্টেরেলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। এছাড়া পেঁপে খেলে চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত পেঁপে খেলে মুখের ব্রণের দাগ দূর করে মুখের উজ্জ্বলতা বাড়ে। পেঁপে পাতার রসে ক্যান্সার বিরোধী উপাদান থাকে। নিয়মিত পেঁপের পাতা রস করে খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক কমে যায়। এছাড়া পেঁপে রান্না করে খেলে লিভার ভাল থাকে।”
বিশ্ব মুক্তকোষ উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, ‘পেঁপের বৈজ্ঞানিক নাম Carica papaya। এটি একটি ছোট আকৃতির অশাখা বৃক্ষবিশেষ। লম্বা বোটাঁযুক্ত ছত্রাকার পাতা বেশ বড় হয় এবং সর্পিল আকারে কাণ্ডের উপরি অংশে সজ্জিত থাকে। প্রায় সারা বছরেই ফুল ও ফল হয়। কাঁচা ফল সবুজ, পাকা ফল হলুদ বা পীত বর্ণের। এটি পথ্য হিসেবেও ব্যবহার হয়। কাঁচা পাকা দু’ভাবেই খাওয়া যায়, তবে কাচা অবস্থায় সবজি এবং পাকলে ফল। কাচা ফল বাইরের দিক গাঢ় কালচে সবুজ এবং পাকলে খোসাসহ কমলা রং ধারণ করে। পেঁপে বাংলাদেশ, ভারত, আমেরিকা, ব্রাজিল ইত্যাদি দেশে হয়ে থাকে।
১০০ গ্রাম পাকা পেঁপেতে প্রোটিন ০.৬ গ্রাম, ফ্যাট ০.১ গ্রাম, মিনারেল ০.৫ গ্রাম, ফাইবার ০.৮ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেড ৭.২ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৩২ কিলোক্যালরি, ভিটামিন সি ৫৭ মিলিগ্রাম, সেডিয়াম ৬.০ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৬৯ মিলিগ্রাম ও আয়রন ০.৫ মিলিগ্রাম খাদ্য উপাদান রয়েছে।
বাংলাদেশের সর্বত্রই সবজি এবং ফলের জন্য চাষ করা হয়। পাতা ও অপক্ক ফল তরুক্ষীর সমৃদ্ধ। এই তরুক্ষীরে প্রচুর পরিমাণে হজমকারী এনজাইম পেপেন বিদ্যমান। পাতায় অ্যালকালয়েড, গ্লুকোসাইড এবং ফলে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন আছে।
রক্ত কাসে, রক্তার্শে, মূত্রনালীর ক্ষতে, দাদ ও সোরিয়াসিস-এ, কোষ্ঠকাঠিন্যে এবং কৃমিতে হিতকর। পাকা পেঁপে অর্শরোগ ও কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে হিতকর। রক্তার্শে, কৃমিতে, একজিমায়, দাদে কার্যকরী।
বিশ্বের জনপ্রিয় ফলগুলোর মধ্যে একটি পেঁপে। স্বাদ ও গুণাগুণের কারণেই মানুষের কাছে এর এতো কদর। এতে প্রাকৃতিক ফাইবার হিসাবে পুষ্টি এবং ভিটামিন এ, সি, এবং কে, যেমন নিয়াসিন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, প্রোটিন রয়েছে।’
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় পেঁপে
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/