মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি: নানা সংকটে জর্জারিত মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। স্বাস্থ্য সেবার মান বর্তমানে তলানিতে। অনিয়মÑদুর্নীতি, জনবল, সংকট অব্যবস্থাপনা ও কর্তব্যরতদের স্বেচ্ছাচারিতার মধ্য দিয়ে চলছে উপজেলার পাঁচ লক্ষাধিক জনগোষ্ঠীর একমাত্র স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ফলে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি ও সেবা বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
সূত্র জানায়, দেশের অন্যতম বৃহত্তম মণিরামপুর উপজেলা ১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। যার বর্তমান লোকসংখ্যা প্রায় পাঁচ লক্ষ। এ জনপদের সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্য সেবার জন্য ৫০ শয্যা বিশিষ্ট মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ৩৯জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বাস্তবে কর্মরত চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র নয় জন। ৩৯ জনের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োজিত থাকার কথা ২২জন চিকিৎসক। সেখানে প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ চিকিৎসক রয়েছেন সাত জন।
উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে রয়েছে একটি করে স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র। বাস্তবে প্রতিষ্ঠান থাকলেও সেখানে নেই কোন প্রয়োজনীয় জনবল। সূত্র আরো জানায়, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সহকারি ১৭টি পদের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র দুই জন। স্বাস্থ্য সহকারি পদে ৬৫ জনের বিপরীতে রয়েছেন ৩৮জন। স্বাস্থ্য পরিদর্শকের চারটি পদই শূন্য। সহকারি স্বাস্থ্য পরিদর্শকের ১৩টি পদের বিপরীতে রয়েছেন তিন জন। জরুরী রোগী বহনের জন্য একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সটিও দীর্ঘদিন অকেজো অবস্থায় গ্যারেজে পড়ে আছে। একদিকে জনবল সংকট, অন্যদিকে এমনই অব্যবস্থাপনার মধ্যে দিয়ে চলছে মণিরামপুর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সেবার কার্যক্রম।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে ভুক্তভোগীদের রয়েছে নানা অভিযোগ। বৃহৎ জনসংখ্যা অধ্যুসিত এ উপজেলায় সাত জন চিকিৎসক কর্মরত থাকলেও তাঁদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিভিন্ন অভিযোগ। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটিতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন ডা. আব্দুল গফ্ফার। তিনি এখানে কর্মরত থাকলেও পাশ্ববর্তী অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া শিল্প শহরে তাঁর ডক্টরস ক্লিনিক নামের একটি নিজস্ব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তিনি।
ডেন্টাল সার্জন পদে রয়েছেন ডা. আব্দুল¬াহ আল মামুন। তিনিও যশোর জেলা শহরে নিজের প্রতিষ্ঠান ডেন্টিস্ট পয়েন্ট নিয়ে থাকেন সার্বক্ষণিক ব্যস্ত। মাঝে মধ্যে কর্মস্থলে গেলেও তা থাকেন অল্প সময়ের জন্য। গাইনী চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন ডা. রেবেকা সুলতানা। তিনিও যশোর শহরের একটি খ্যাতনামা প্রাইভেট হাসপাতালে ব্যস্ত সময় পার করেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্যাথলজিস্ট আনিচুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ হাসপাতালে প্যাথলজিস্ট বিভাগে জনবল পাঁচজন জন। কিন্তু দীর্ঘদিন লোকবল না থাকায় একমাত্র আমিই চালাচ্ছি এ বিভাগটি।
সম্প্রতি (১৪ আগস্ট) মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে এক নবজাতক পাচারের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে প্রাথমিকভাবে দুইজন নার্সকে সাময়িকভাবে কাজকর্ম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। নবজাতক পাচারের ঘটনা নিয়ে এলাকার জনগণের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসার পাশাপাশি খাদ্য বিতরণেও রয়েছে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি। রোগী প্রতি ১’শ ২৫ টাকা বরাদ্দ থাকলেও খাদ্য দেওয়া হয় নামমাত্র।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগী শাহিদুর রহমান বলেন, তিন বেলা আমাদের যে খাবার দেওয়া হয় তা খুবই নি¤œমানের। যার আনুমানিক মূল্য ৫০/৬০ টাকা হবে।
স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা উপজেলার ভরতপুর গ্রামের আব্দুল গণি জানান, দাঁতের যন্ত্রণায় ছটফট করছি। দুই দিন ধরে এসেও ডাক্তার দেখাতে পারলাম না। আর হাসপাতালে আসবো না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. আব্দুল গফফার বলেন, হাসপাতাল ঠিকঠাক মতই চলছে, অনিয়ম ও দুর্নীতির কোন প্রশ্নই আসে না। তবে জনবল সংকটের কারণে স্বাস্থ্য সেবার কিছু ত্রæুটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে বলে তিনি দাবি করেন।
অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় সংকটে মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/