Site icon suprovatsatkhira.com

মানবেতর জীবনযাপন করছে শ্যামনগরের সৈয়দালীপুর আশ্রয়ন প্রকল্পের জনগোষ্ঠী

শ্যামনগর প্রতিনিধি: প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের ঝূঁকিপূর্ণ একটি উপজেলা শ্যামনগর। ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলায় উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৪নং নুরনগর ইউনিয়নও। ২০০৭ সলের দিকে উপজেলা ও ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্তে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত অবহেলিত পরিবারগুলোর আশ্রয়ের জন্য সরকারিভাবে একটি ব্যারাক তৈরি করা হয় নুরনগর ইউনিয়নের সৈয়দালীপুর মৌজায় সৈয়দালিপুর গ্রামে মাদার নদীর চরে একটি একর ২০ শতক জায়গার উপর। একটি শেডে ১০টি ঘর তৈরি করা হয় এবং দুই বিঘার একটি পুকুর খনন করা হয়। যা স্থানীয়ভাবে ১০ ঘর নামে পরিচিত। ২০০৯ সালে ২৫ মে সংঘটিত আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে শ্যামনগর উপজেলার দুইটি ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের ১০টি পরিবারকে এখানে আশ্রয় দেওয়া হয়। আইলা ঘটে যাওয়ার এই দীর্ঘ সময় পরেও নিজেদের বাস্তুভিটায় ফিরে যেতে না পারায় আশ্রয়ন প্রকল্পে অবস্থান করছে পরিবারগুলো। আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর বসবাসের জন্য গৃহায়ন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে পানির সুব্যবস্থা, স্যানিটেশন ও যোগাযোগের রাস্তা করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময় সংস্কার বা মেরামতের অভাবে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর, স্যানিটেশন ব্যবস্থা বর্তমানে নাজুক হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি হলে ঘরের মধ্যে পানি পড়ে, পুকুরের পাড় ও রাস্তা ভেঙে রাস্তা ও ঘর পুকুরের মধ্যে চলে যাচ্ছে। ঘরের মধ্যে ঢুকছে পানি। ব্যবহার্য পায়খানাগুলো ভেঙে গেছে এবং পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এতে ব্যারাকে অবস্থানরত জনগোষ্ঠী দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। এছাড়াও ব্যারাকের জনগোষ্ঠী তথা সৈয়দালীপুর, মানিকখালী ও কল্যাণপুর গ্রামের জনগণের যোগাযোগের রাস্তা কাঁচা হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ সকলের চলাচলের খুব সমস্যা হচ্ছে। এছাড়াও গ্রামটি সদর ইউনিয়ন থেকে দূরে হওয়াতে বিদ্যুৎ সংযোগের বাইরে রয়েছে। নিজেদের আর্থিক সমস্যার কারণে ছেলেমেয়ের পড়াশুনা করানো সম্ভবপর হচ্ছে না। কারণ রাত্রে ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার জন্য অধিকাংশ পরিবারের কেরোসিন ক্রয়ের সামর্থ নেই। এছাড়াও ব্যারাকের জনগোষ্ঠীর মূল সমস্যা হলো তাদের জায়গা স্বল্পতা। এখানে সরকারিভাবে এক একর ২০ শতক জায়গা দেখানো হলেও ব্যারাকের জনগোষ্ঠী ভোগ করতে পারছে মাত্র ২০ শতক জায়গা। আর অন্য জায়গা পার্শ্ববর্তী দুজন প্রভাবশালী ব্যক্তি পুকুর খনন করে ভোগ দখল করছে। পুকুর দুটি প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় আশ্রয়নে বসবাসরত জনগোষ্ঠীসহ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর গোসল, কাপড়-চোপড় পরিষ্কার, থালা-বাসন ধোয়া, কৃষিকাজসহ নানা কাজের খুব সমস্যা হয়। মাঝে মাঝে নদীর পানি ও অন্যের পুকুর ব্যবহার করতে হচ্ছে। সুপেয় পানি দূরের গ্রামের দেড় কিলোমিটার দূর থেকে সংগ্রহ করতে হয়। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় স্থানীয় সরকার ও উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়। সরজমিনে উপজেলা ভূমি অফিস ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস এবং স্থানীয় সরকারের তদন্তে আশ্রয়ন প্রকল্পের জনগোষ্ঠীর জন্য ৬৬ শতক জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে দখলকৃত প্রভাবশালী ব্যক্তি রব্বানী সে অনুযায়ী তার বসতভিটার এবং পুকরের সীমানা নির্ধারণ করে নেন। কিন্তু পুকুরের মধ্যে বাধ নির্মাণ করে নিতে বলেন যা আশ্রয়ন প্রকল্পের জনগোষ্ঠীর পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব নয়। অন্যদিকে এই ৬৬ শতক জায়গার মধ্যে ২৩ শতক আবার অন্যপ্রভাবশালী ব্যক্তি সবুরমোল্লা নিয়ে মাছ চাষ করছে। এতে করে আশ্রয়ন প্রকল্পের জনগোষ্ঠীর অধিকার মর্যাদা এবং জীবন জীবিকার কোন পরিবর্তন আসেনি। সেখানে বসবাসরত ফিরোজা বেগম, আশরাফ ও জ্যোছনা বেগম ও জহুরা বেগমরা বলেন, আমরা অসহায় মানুষ, নিজেদের কোন বসতভিটা না থাকায় এখানে বসবাস করছি। আমাদের সমস্যার কথা কেউ বোঝে না। তাই আর কাউকে বলতে সাহস পাই না। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে আমাদের দাবি, আশ্রয়ন প্রকল্পে আশ্রয় নেওয়া জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যবস্থা করে আমাদের জীবনমান উন্নয়নে ভ‚মিকা রাখুন। তাহলে আমরা আপনাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।
আশ্রয়ন প্রকল্পের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামান বলেন, আশ্রয়ন প্রকল্পের মানুষেরা আমার পরিবারের সদস্যের মত, তাদের সকল সমস্যা সমাধানের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এসময় তিনি পুকুরের বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিক সহকারি কমিশনারের (ভূমি) সাথে কথা বলেন এবং বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য বলেন।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version