Site icon suprovatsatkhira.com

মণিরামপুরে ‘জমি আছে বাড়ি নাই’ প্রকল্পের ঘর পেয়ে বেজায় খুশি জাহানারা-নুরজাহানরা

মো. আব্বাস উদ্দীন, মণিরামপুর (যশোর): জাহানারা খাতুন (৪৫) শারীরিক প্রতিবন্ধী। তিনি মণিরামপুর উপজেলার জোঁকা গ্রামের বাসিন্দা। বিশ বছর আগে তার বিয়ে হয়েছিল মণিরামপুরের দীঘিরপাড় গ্রামের আব্দুর রশিদের সঙ্গে। হাঁটাচলা করতে না পারায় স্বামীর ঘরে থাকা হয়নি তার। বিয়ের এক বছরের মাথায় তার সংসার ভেঙে যায়। বাবা সেকেন্দার আলী তাকে বসতভিটায় ঠাঁই দেয়। টিনের ছাবড়ার একটি ঝুপড়িতে আশ্রয় নিয়ে পরের দয়ায় দিন চলে তার। সম্প্রতি তিনি সরকারের আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের অধীনে ‘জমি আছে ঘর নাই’ প্রকল্পের আওতায় একটি ঘর পেয়েছেন। সঙ্গে একটি স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানাও রয়েছে। ঘর পেয়ে বেজায় খুশি জাহানারা। একই প্রকল্পের আওতায় ঘর পেয়েছেন উপজেলার সদর ইউনিয়নের জালঝাড়া গ্রামের দুই পা হারানো বৃদ্ধ আবুল কাশেম (৬৫)। এক সময় কায়িক পরিশ্রমে ভালোভাবেই চলতো কাশেমের সংসার। কিন্তু যুবক বয়সে অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে তার দু’টি পা হারাতে হয়। তবু হাত পাতেননি কারো কাছে। দীর্ঘ ৪০ বছর কলা বেচে সংসার চলেছে কাশেমের। এখন আর তিনি চলাফেরা করতে পারেন না। স্ত্রী আছিরোন্নেছা কাজ করেন অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে। আর একমাত্র ছেলে মতিয়ারের স্বল্প আয়ে চলে কাশেমের পরিবারের সাত সদস্যের সংসার। অভাবের সংসারে সরকারি ঘর পেয়ে তাই কাশেমও মহা খুশি। শুধু জাহানারা আর কাশেম নন, ঘর পেয়ে আনন্দিত উপজেলার ষোলখাদা গ্রামের নূরজাহান, ফতেয়াবাদ গ্রামের নবীজান, হাজরাকাঠি গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা প্রতিবন্ধী হালিমা ও দিনমজুর লুৎফরসহ উপজেলার দুস্থ অসহায় তিনশ পরিবার।
মণিরামপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় ‘যার জমি আছে ঘর নাই তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ উপ-খাতের আওতায় প্রাথমিকভাবে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলার তিন’শ অসহায় পরিবারকে টয়লেটসহ একটি করে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। যার মধ্যে ঝাঁপা ইউনিয়নে ১০৩টি, মনোহরপুর ইউনিয়নে ৫৮টি, চালুয়াহাটি ইউনিয়নে ৪৪টি, হরিদাসকাঠি ইউনিয়নে ৩৮টি, ভোজগাতী ইউনিয়নে ২৫টি এবং মণিরামপুর সদর ও ঢাকুরিয়া ইউনিয়নে ১৬টি করে ঘর রয়েছে। ঘর নির্মাণে ব্যবহৃত হচ্ছে টিন, সিমেন্টের খুঁটি, কাঠ ও ইট।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, যাদের এক থেকে দশ শতক জমি আছে কিন্তু ঘর নেই বা ঘর থাকলেও তা বসবাসের অনুপযোগী এমন তিন’শ দুস্থ ও অসহায় পরিবারকে এক লাখ টাকা করে ব্যয়ে ৩০০টি ঘর তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। আর এসব কাজের দেখভাল করছেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়গুলোর চেয়ারম্যানসহ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস। সূত্র আরও জানায়, ইতিমধ্যে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ঘর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। ইউনিয়নগুলোতে শিগগির আরো ৩৬১টি ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। অন্য ইউনিয়নগুলোর তালিকা তৈরির কাজ চলছে। ধারাবাহিকভাবে এই কাজ পৌর এলাকাসহ বাকি দশটি ইউনিয়নে শুরু হবে। এদিকে, ঘর পাইয়ে দেয়ার কথা বলে উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে। ঘর প্রতি দশহাজার থেকে ত্রিশ হাজার করে টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে এর সত্যতাও মিলেছে। তবে, অভিযুক্ত জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, এসব অভিযোগ সত্য নয়। কারো কাছ থেকে কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। জানতে চাইলে ঝাঁপা ইউপি চেয়ারম্যান সামছুল হক মন্টু বলেন, গরীব অসহায় মানুষদেরকে বেছে বেছে আমরা তালিকা করেছি। তাদের কাছ থেকে কোন টাকা নেয়ার প্রশ্নই উঠে না। এই আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের সদস্য সচিব ও মণিরামপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইয়ারুল হক বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ৬৬১টি ঘর নির্মাণের জন্য ঢাকায় তালিকা পাঠিয়েছিলাম। তিন’শ ঘর নির্মাণের কাজ শেষের দিকে। আশা করছি বাকি ৩৬১টি ঘর নির্মাণের কাজ দ্রুত শুরু হবে। অনিয়মের ব্যাপারে জানতে চাইলে ইয়ারুল হক বলেন, ঘর নির্মাণে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। আমি নিয়মিত তদারকি করছি। কেউ টাকা নিয়েছেন- এমন কোনো অভিযোগ পাইনি। পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version