মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি: মণিরামপুরে গরুর ক্ষুরা (জ্বরা) রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এতে খামারীদের চোখে মুখে অজানা আতংক বিরাজ করছে। প্রাণিসম্পদ দপ্তরে সাহায্য চেয়েও পাচ্ছেন না খামারীরা। প্রাণিসম্পদ দপ্তর বলছে- তাদের দপ্তরে প্রয়োজনীয় ভ্যাক্সিন নেই। বাধ্য হয়ে বাজার থেকে চড়া দামে ভ্যাক্সিন কিনছে খামারীরা।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় গরু মোটাতাজাকরণের খামারের সংখ্যা ৭২৫টি। অনুরূপ গাভী পালনের খামারের সংখ্যা ৭৪টি। সব মিলিয়ে দেশীয় ও শংকর জাতের গরুর সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৫ হাজার ৫০৮টি। এর মধ্যে দেশীয় প্রজাতির গরুর সংখ্যা ১ লাখ ১৯ হাজার ২০৮টি এবং শংকর জাতের ৮৫ হাজার ৩০৮ টি। এর মধ্যে নিবন্ধিত চলমান খামারের সংখ্যা ১৪টি। এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির মোট ছাগলের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজার ৭০৮টি।
সম্প্রতি বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বাটবিলা, রোহিতা, আমিনপুর, ফতেয়াবাদ, বিজয়রামপুর, মুড়াগাছাসহ অধিকাংশ গ্রামে গরুর ক্ষুরা (জ্বরা) রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
ফতেয়াবাদ গ্রামের খামারী সোহেল বলেন, তার খামারের চারটি গরুই ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এখন চিকিৎসা চলছে। কিন্তু মোটা অংকের অর্থ বিনিয়োগ করে আসন্ন ঈদে বিক্রি করতে না পারলে তিনি আর্থিক ক্ষতির আশংকা করছেন। এছাড়া উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসে পর্যাপ্ত ভ্যাক্সিনও পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে বাজার থেকে চড়া দামে ভ্যাক্সিন কিনতে হচ্ছে। উপজেলার মুজগুন্নী গ্রামের গাড়ি চালক আব্দুস সাত্তার বলেন, প্রায় বছরখানেক ধরে নিজের পেশার পাশাপাশি বাড়তি আয়ের আশায় বিদেশি জাতের গরু মোটাতাজা করে আসছিলেন। কোরবানির ঈদের কয়েকদিন আগ পর্যন্ত নিজেদের কাছে রাখতে হবে এই শর্তে সপ্তাহখানেক আগে গরুটি ১ লাখ ৪ হাজার টাকায় স্থানীয় এক ব্যাপারীর কাছে বিক্রিও করা হয়েছিল। কিন্তু দুই দিন আগে হঠাৎ ক্ষুরারোগ দেখা দেয়ায় ব্যাপারীকে পুরো টাকাটায় ফেরত দিয়েছেন তিনি।
আসন্ন কোরবানি ঈদকে টার্গেট করে যেসব ছোট-বড় খামারিসহ প্রান্তিক চাষীরা গরু মোটাতাজাকরণ করে আসছিলেন এ রোগের প্রাদুর্ভাবে তাদের মাঝে আতংক দেখা দিয়েছে। বড় খামারে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা না দিলেও রোগটি ছোঁয়াচে হওয়ায় খামারীদের আতংকে আছেন।
উপজেলার মুড়াগাছা গ্রামের শাহিন আলম জানান, তার সাতটি গরু রয়েছে। গ্রামে গরুর ক্ষুরা রোগ দেখা দেয়ায় তিনি আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। একই সাথে উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসের কেউ খোঁজ রাখেন না বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা আবুজার সিদ্দিকী বলেন, প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এ রোগের ভ্যাক্সিনের পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় সংকট দেখা দিয়েছে। তবে, প্রতি চার মাস অন্তর গরুর ভ্যাক্সিন (এফএমডি) ফুট এন্ড মাউথ দেয়ার নিয়ম থাকলেও সেটি না করায় এ রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। জনবল সংকটের কারণে বৃহৎ এ উপজেলায় প্রান্তিক চাষী ও খামারীদের সেবা দেয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। তারপরও খবর পাওয়া মাত্রই আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
মণিরামপুরে গরুর ক্ষুরা রোগের প্রাদুর্ভাব, শংকায় খামারীরা
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/