Site icon suprovatsatkhira.com

বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা

বাহলুল করিম: সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. কাজী হাবিবুর রহমান বলেছেন, মায়ের দুধ পান সুস্থ জীবনের বুনিয়াদ। যেভাবে, যে নিয়মে, যতদিন মায়ের বুকের দুধ বাচ্চাকে খাওয়ানোর কথা তা কিন্তু সকলে খাওয়ায় না। সবার ধারণা যে, কৌটার দুধ না দিলে হয়তো বাচ্চা সঠিক পুষ্টি পায় না। আসলে এই ধারণাটা ভুল। সুস্থ থাকাটা বড় কথা। মোটা-তাজা বা নাদুস-নুদুস হওয়া বড় কথা নয়।
বৃহস্পতিবার (২ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯টায় সিভিল সার্জন অফিসের সভাকক্ষে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, শিশুর জন্মের পর ছয় মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ পান করাতে হবে। শিশু জন্মের পর শাল দুধের কোন বিকল্প নেই। পবিত্র কোরআন শরীফের সূরা বাকারায় স্পষ্টাকারে বলা হয়েছে, দুই বছর পর্যন্ত শিশুকে মায়ের বুকের দুধ পান করাতে হবে। এতে শিশু আস্তে আস্তে শারীরিক ও মানসিকভাবে বেড়ে উঠবে। শিশু জন্মের পর বিভিন্ন রোগে ভোগে- যেমন ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ইত্যাদি। শিশুকে যদি মায়ের শাল দুধ খাওয়ানো হয় তবে এসব রোগ থেকে শিশু মুক্ত থাকবে। বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত শিশুর জন্মের দুই বছরের মধ্যে যদি মস্তিষ্কের বিকাশ না হয় তবে সারা জীবনেও তা হবে না। দুই ধরণের চিন্তাভাবনা থেকে মায়েরা শিশুদের বুকের দুধ খাওয়াতে চান না। সমাজের উচ্চবিত্ত মায়েরা ও কুসংস্কাচ্ছন্ন মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে চান না। শাল দুধে অ্যান্টিবডি থাকে। যা শিশুর শরীরে ন্যাচারাল টিকা হিসেবে কাজ করে। কয়েকটি টিকা দেওয়ার পরে তা শরীরে কাজ করে। শুধুমাত্র শাল দুধ খাওয়ালে শিশুর শরীরে সাথে সাথে এই টিকার কাজ করবে। ফলে বাড়তি টিকা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না।
জন্মের পর শিশুকে শাল দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে জোর দিয়ে প্রধান অতিথি আরও বলেন, বাচ্চা জন্মদানের পর যত তাড়াতড়ি সম্ভব বাচ্চাকে মায়ের কাছে দিতে হবে, মায়ের দুধ টানতে দিতে হবে। এতে অনেক উপকার রয়েছে। মা হওয়ার একটা কষ্টও আছে একই সাথে আবার আনন্দও আছে। মা যখন প্রথম বাচ্চার মুখ দেখে তখন সব কষ্ট ভুলে যায়। আমাকে প্রায়ই শুনতে হয় যে স্যার মায়ের দুধ হয় না। এটা কীভাবে সম্ভব। তবে হ্যাঁ কিছু ব্যতিক্রম থাকে। তার জন্য চিকিৎসা আছে। আসলে দুধের উৎস কী- মা। মাকে যদি খেতে না দেন তবে দুধ হবে কোথা থেকে। মাকে একটু প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন ডিম, দুধ, মাংস খেতে দেন তাহলে মায়ের বুকের দুধের অভাব হবে না। এজন্য বাচ্চা যতœ নেওয়ার পাশাপাশি মায়েরও যতœ নিন। মাকে বেশি বেশি খেতে দিন। বাচ্চাকে যদি মায়ের বুকের দুধ না খাওয়ান তবে ভবিষ্যতে ব্রেস্ট ক্যন্সার হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। বাচ্চা জন্মের পরে আমরা একটু গরম পানি খেতে দেই। চাউলের গুড়া রান্না করে খেতে দেই। কিন্তু এটা নবজাতকের জন্য মৃত্যুর কারণও হতে পারে। কেননা বাচ্চা জন্মের পর যদি চাউলের গুড়া রান্না করে খাওয়ানো হয় তবে তার নাড়ির গতি বেড়ে যায়। এতে পেটের ভিতরে বাচ্চার নাড়ি পেচিয়ে যেতে পারে। পরে অপারেশন ছাড়া তা আর ঠিক হয় না। মাকে বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়াতে বেশি বেশি উৎসাহিত করতে হবে। তাহলে নবজাতক শিশু নানা রোগ থেকে মুক্তি পাবে।
সভায় সিভিল সার্জন ডা. তাওহীদুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী) ডা. এহছেন আরা ও সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী) ডা. কানিজ ফাতেমা।
সভায় সিভিল সার্জন সভাপতির বক্তব্যে বলেন, শিশু জন্মের পরে মায়ের বুকের দুধ বাদ দিয়ে যদি ছাগল বা গরুর দুধ খাওয়ায় তবে শিশুদের আচরণটা তেমনই হবে। শিশু জন্মের পর কেন আমরা ছাগল বা গরুর দুধ খাওয়াবো। মাকে আমরা বেশি বেশি খাওয়াবো। তাহলে শিশু মায়ের দুধ পাবে। জনগণকে যদি সচেতন করা যায় তবে প্রত্যেক মা বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে পারবে। ০-৬ মাস পর্যন্ত শিশুকে শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। শিশুর প্রথম খাবার হলো মায়ের বুকের শাল দুধ। মায়ের দুধ পাওয়া শিশুর জন্মগত অধিকার। মা শিশুকে দুধ খাওয়াবেন এটা তার দায়িত্ব। মায়ের দুধ শিশুর সুস্বাস্থ্য রক্ষায় সৃষ্টিকর্তার অনন্য সৃষ্টি। তাই মায়ের দুধের কোন জুড়ি নেই। একটি শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে উঠার জন্য যে সমস্ত পুষ্টি উপাদান দরকার তা সঠিক পরিমাণে একমাত্র মায়ের দুধেই পাওয়া যায়। সৃষ্টিকর্তা সেভাবেই মাকে তৈরি করে শিশুকে পৃথিবীতে পাঠান।
ডা. তাওহীদুর রহমান আরও বলেন, পৃথিবী জুড়ে অনুপযোগী খাদ্যাভ্যাস শিশুর জীবন ও স্বাস্থ্যের জন্য সর্বাপেক্ষা হুমকি স্বরূপ। মায়ের দুধ না খাওয়া একটা উচ্চবিত্ত পরিবারের শিশুর থেকে দরিদ্র পরিবারের মায়ের দুধ খাওয়া শিশুর স্বাস্থ্য অনেক ভাল থাকে। মায়ের দুধে শুধুই উপকার, ক্ষতিকারক কিছু নেই। এক্ষেত্রে গর্ভাবস্থা থেকেই মায়ের পুষ্টির বিষয়টির দিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশুকে পরিপূর্ণ মায়ের দুধ দেওয়ার বিষয়ে পরিবারের সংশ্লিষ্ট সকলকে পুরোপুরি অবগত করতে হবে। মাকে সময় দিতে হবে। শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর সঠিক অবস্থান ও সংস্থাপন বা পজিশন সম্পর্কে জানাতে হবে।
সভায় জুনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা অফিসার শহিনুর খাতুনের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন অফিসের এমওডিসি ডা. জয়ন্ত সরকার। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ব্রাকের প্রতিনিধি রেজাউল করিম খান, সদর হাসপাতালের সেলিনা আক্তার ও এসকে ফাউন্ডেশনের জোৎনা বেগম।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সিভিল সার্জন অফিসের পরিসংখ্যান সহকারি সুদেব কুমার দে, জগদীশ চন্দ্র হাওলাদার, পাবলিক হেলথ নার্স শেফালী সরকার, পিও উজ্জল কুমার পাল, অডিও ভ্যিজুয়াল অপারেটর মাহবুবুর রহমান, অর্জন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহুয়া মঞ্জুরী, প্রবাহ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শাম্মী আক্তার কুমকুম, লাইট হাউজের ডিআইসি ম্যানেজার সঞ্জু মিয়া, সূর্যের হাসি ক্লিনিকের ম্যানেজার মো মফিজুল ইসলাম।
এর আগে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেনের নেতৃত্বে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সিভিল সার্জন অফিসে গিয়ে শেষ হয়।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version