ডেস্ক রিপোর্ট: বাল্যবিবাহ নিরসন এবং মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা শীর্ষক দু’দিনব্যাপী কর্মশালা সম্পন্ন হয়েছে। খুলনার সিএসএস আভা সেন্টারে ইউএসএআইডি’র ফুড ফর পিস (টাইটেল ২) খাদ্য সহায়তা কার্যক্রমের অর্থায়নে নবযাত্রা প্রকল্প এ কর্মশালার আয়োজন করে।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোহাম্মদ ফারুক হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবুল হোসেন, খুলনার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. আতিয়ার রহমান শেখ, খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি ফারুক আহম্মেদ, বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের উপ-পরিচালক মু. বিল্লাল হোসেন খান।
কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বলেন, সাংবাদিকদের নিয়ে ‘নবযাত্রা’ প্রকল্পের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। কর্মশালা থেকে অর্জিত জ্ঞান তাদের পেশাগত উন্নয়ন এবং সমাজে বাল্যবিয়ে নিরসনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, বাল্যবিয়ের সাথে দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার একটি যোগসূত্র রয়েছে। স্থানীয় সাংবাদিকগণ যদি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে, তাহলে দুর্নীতির হারও অনেক হ্রাস পাবে।
সভাপতির বক্তব্যে নবযাত্রা প্রকল্পের ডেপুটি চিফ অব পাটি সর্দার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, নবযাত্রা প্রকল্প প্রান্তিক অঞ্চলের দুর্যোগপীড়িত দরিদ্র জনগণের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে এবং সাংবাদিকরা এ কার্যক্রমের সহযোদ্ধা। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন সাংবাদিকরা নবযাত্রার বিভিন্ন কার্যক্রমের পাশে থেকে দারিদ্র্যপীড়িত জনগণের জীবনমান উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাবেন।
কর্মশালার প্রথম দিন রোববার বাল্যবিয়ের কুফল নিয়ে আলোচনা করেন নবযাত্রার জেন্ডার ম্যানেজার তাসনুভা জামান, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সংক্রান্ত সমস্যা এবং এর প্রতিকারের জন্য নবযাত্রার কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন নবযাত্রার এমসিএইচএন ম্যানেজার ডা. মুশতাক আহমেদ।
কর্মশালার দ্বিতীয় দিনে বাল্যবিয়ে নিয়ে প্রতিবেদন লেখার কলাকৌশল ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে কারিগরি পরামর্শ দেন চ্যানেল টুয়েন্টি ফোরের প্রধান বার্তা সম্পাদক শাহনাজ মুন্নী। কর্মশালা সঞ্চালনা করেন নবযাত্রার ইয়ুথ ডেভলপমেন্ট স্পেশালিস্ট আশিক বিল্লাহ।
কর্মশালায় বলা হয়, ইউএসএআইডি’র ফুড ফর পিস (টাইটেল ২) খাদ্য সহায়তা কার্যক্রমের অর্থায়নে বাংলাদেশে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে নবযাত্রা প্রকল্প শুরু হয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদী এই প্রকল্প ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ হবে। ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এর নেতৃত্বে নবযাত্রা প্রকল্প অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম, উইনরক ইন্টারন্যাশনাল এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটি বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলীয় খুলনা জেলার দাকোপ ও কয়রা এবং সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলার ৮,৫৬,১১৬ জন উপকারভোগী মা ও শিশুস্বাস্থ্য ও পুষ্টি, ওয়াটার ও স্যানিটেশন, কৃষি ও বিকল্প জীবিকায়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নারী-পুরুষ সাম্য, সুশাসন ও সামাজিক দায়বদ্ধতার উন্নয়নের লক্ষ্যে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের এই প্রকল্প স্থানীয় অংশীদার সংস্থা, সুশীলনের সাথে শিশু বিবাহ ও জেন্ডার ভিত্তিক নির্যাতন প্রতিরোধ ও নারী পুরুষের সাম্য নিশ্চিত করার জন্য খুলনা জেলার দাকোপ ও কয়রা এবং সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলায় কাজ করে আসছে। এই কার্যক্রমসমূহের মধ্যে অন্যতম হল “বাল্য বিবাহ হ্রাসকরণে প্রচারাভিযান : ১৮’র আগে বিয়ে নয়”। শিশুর পুষ্টিতে বাল্য বিবাহের ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। ২০১১ সালের বিডিএইচএস জরিপ অনুযায়ী খুলনায় ২৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে প্রথম বিবাহের গড় বয়স হচ্ছে ১৫.১ বছর। স্বভাবতই এইসব নারীর গর্ভে জন্ম নেওয়া শিশুদের একটি বড় অংশই অপুষ্টিতে ভুগে। বাল্য বিবাহ রোধে উৎসাহ দিতে এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক গর্ভধারণের হার কমিয়ে আনতে, নবযাত্রা প্রকল্প সচেতনতা এবং আচরণ পরিবর্তনমূলক প্রচারাভিযানের মাধ্যমে বাল্য বিবাহকে ঘিরে বিভিন্ন চর্চা ও মনোভাবের পরিবর্তন সাধন করতে চায়, বিশেষ করে সমাজে প্রভাববিস্তারকারী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ, ধর্মীয় নের্তৃবৃন্দ, হাসপাতালের সেবিকা, এবং শ্বশুর-শাশুড়ির দৃষ্টিভঙ্গিতে ও পরিবর্তন আনতে চায়।
রোববার শুরু হওয়া দু’দিনব্যাপী এই কর্মশালায় খুলনার দাকোপ ও কয়রা, সাতক্ষীরা, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগরের ইলেক্ট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার ৬২জন সংবাদ কর্মী অংশ নেন।
বাল্যবিবাহ নিরসন ও মা-শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা শীর্ষক কর্মশালা সম্পন্ন
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/