Site icon suprovatsatkhira.com

পদ্মাসেতু চালু হলে ভোমরা হবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর: শাজাহান খান

ডেস্ক রিপোর্ট: নৌ ও পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এমপি বলেছেন, পদ্মাসেতু চালু হলে ভোমরা হবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর। ইতোমধ্যে ভোমরা বন্দরের গুরুত্ব উপলদ্ধি করে নতুন ৩৫টি পণ্য আমদানি-রপ্তানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে ভোমরা বন্দরে বর্তমানে মোট ৭৪টি পণ্য আমদানি-রপ্তানির সুযোগ তৈরি হয়েছে।
শুক্রবার (১৭ আগস্ট) বিকেলে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর উপদেষ্টা কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, সরকারের কঠোর অবস্থানে চার বছরে নৌপথে কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। নৌপথকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নৌ মন্ত্রণালয় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে মোংলা বন্দরে সাড়ে ১১ কোটি টাকা লোকসান হয়েছিল। এখন সেখানে ৭৫ কোটি টাকা লাভ হয়েছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর ওয়ার্লড র‌্যাংকিংয়ে ২০১৭ সালে ৯৮তম থেকে ৭১তম স্থানে উন্নীত হয়েছে। একইভাবে ভোমরা স্থলবন্দরও ক্রমেই বেশী মুনাফা অর্জনের দিকে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, গত চার বছরে লঞ্চডুবিসহ কোন ধরনের নৌ দুর্ঘটনা ঘটেনি। নৌ নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় এই সফলতা অর্জিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিটি নৌযানে জনসংখ্যা ও পণ্য ধারণ ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এই ক্ষমতার বাইরে গেলে তখনই দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। মন্ত্রী বলেন, দেশে ৫২টি স্থলবন্দর এখন ৭৪টিতে উন্নীত হয়েছে। পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হওয়ার সাথে সাথে ভোমরা স্থলবন্দরের রাজস্ব আয় আরও বৃদ্ধি পাবে।
স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে ভোমরা স্থলবন্দরের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডা. আ.ফ.ম রুহুল হক, সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুস সামাদ, খুলনা বিভাগীয় কাস্টমস কমিশনার ওহিদুল আলম, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন, পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, বিজিবির ৩৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল সরকার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, কাস্টমসের উপকমিশনার আবদুল জলিল, সহকারি কমিশনার সাগর সেন, সিভিল সার্জন ডা. তৌহিদুর রহমান, ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু ও মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম, আমদানি রফতানি সমিতির সভাপতি আসাদুর রহমান প্রমুখ।
সভায় মন্ত্রী আরও বলেন, আগে আরও কম থাকলেও ২০০৯ সালে ১২টি স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠা লাভ করে। গত নয় বছরের ব্যবধানে আরও ১০টি স্থল বন্দর বৃদ্ধি পেয়ে এখন তা ২২টিতে উন্নীত হয়েছে। আগে বন্দরসমূহে লাভের মুখ দেখা যেতো না। এখন আমদানি রফতানি বাণিজ্যে অগ্রগতি হওয়ায় সরকার অনেক মুনাফা অর্জন করছে। ভোমরা স্থল বন্দরে ১৪০ কোটি টাকা আয়ের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আগে মাত্র দুটি সমুদ্র বন্দর ছিল। এখন তার সঙ্গে পায়রা ও মাতারবাড়ি যুক্ত হয়ে মোট ৪টি সমুদ্রবন্দর হল। এছাড়া মহেশখালিতে আরেকটি বন্দর নির্মাণের কাজ চলছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন ভোমরা বন্দরকে আরও উন্নত করতে বেনাপোলের আদলে সাতক্ষীরায় আরও জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। এরই মধ্যে বেনাপোলে ১৭৫ একর জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভোমরা স্থলবন্দর অচিরেই বেনাপোলের কাছাকাছি চলে আসতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
শাজাহান খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় যাবতীয় উন্নয়ন কাজ হচ্ছে এবং আরও কয়েকটি স্থলবন্দর নির্মাণের কাজ চলছে। বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির মত এলাকায় বন্দর উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। ভোমরা স্থলবন্দরে আমদানি বেশী অথচ রফতানি কম উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়টির দিকে ব্যবসায়ীদের নজর দিতে হবে। বাংলাদেশের অনেক অপ্রচলিত পণ্য বিদেশে রফতানি করা সম্ভব। বিদেশের বাজারে এর চাহিদাও রয়েছে। ভোমরা স্থলবন্দরে ৫২টি অনুমোদিত আমদানি পণ্যের সঙ্গে আরও কিছু যুক্ত হয়ে এখন তা ৭৪ এ উন্নীত হয়েছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, আজ থেকে তা কার্যকর হলো।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মন্ত্রিসভা যে আইন অনুমোদন করেছে তা সংসদে পাশ হওয়ার পর পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে বাস্তবায়ন করা হবে। বর্তমানে সড়কের শৃংখলা ফিরেছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানান মন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, ভোমরা বন্দরে একটি পূর্ণাঙ্গ পুলিশ থানা স্থাপিত হবে। এ বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে কাজ চলছে।
নৌ পরিবহনমন্ত্রী আরও বলেন, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরে অনেক ষড়যন্ত্র হতে পারে। এ ব্যাপারে তিনি সকলকে সতর্ক থাকার আহবান জানান। জামায়াতের কারণে অনেক কলংক মাখা সাতক্ষীরা এখন এক পরিবর্তিত শান্তির জেলা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এই শান্তির ধারাকে ধরে রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা অত্যন্ত সাহসের সাথে দেশের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মত বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। ২০১৯ সালের মধ্যে পদ্মা সেতু আমরা পার হতে পারবো বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, হাত পেতে বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে অর্থ আনার চেয়ে নিজ দেশের অর্থায়নে এতবড় প্রকল্প বাস্তবায়নের সাহস ও শক্তি কেবলমাত্র শেখ হাসিনারই আছে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু যেমন সাহস করে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছেন। একইভাবে তার কন্যাও সেই সাহস দেখিয়ে যাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে তিনি শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন।
সভায় জানানো হয়, ভোমরার স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিককে হাসপাতালে পরিণত করা হবে এবং বন্দরের দুই কিলোমিটার এরিয়ায় আরসিসি রাস্তা তৈরী করা হবে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version