আরিফুল ইসলাম রোহিত: নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব হয়ে গেছে সাতক্ষীরার হাট-বাজার। একই সাথে ব্যবহৃত পলিথিন যত্রতত্র নিক্ষেপ করায় তা নষ্ট না হয়ে পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে।
অভিযোগ, নিষিদ্ধ ঘোষিত হলেও পলিথিন ক্রয়-বিক্রয়ের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। একই সাথে প্রতিনিয়ত সীমান্ত গলিয়ে দেশে ঢুকছে লক্ষ লক্ষ পলিথিন।
সরেজমিনে সাতক্ষীরার বড় বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আইন উপক্ষো করে প্রকাশ্যেই বিক্রেতারা পলিথিনের ব্যবহার করছেন। অনেক সময় ক্রেতারাও বিক্রেতার কাছে পলিথিনই চাইছেন। আর এতে শহরের অলি-গলি, রাস্তা-ঘাট, ড্রেন- সবই অব্যবহৃত পলিথিনে ভরে উঠেছে। একটু বৃষ্টি হলেই সর্বত্র আটকে যাচ্ছে পানি। বন্ধ হচ্ছে পানির প্রবাহ। নষ্ট হয়ে জমির উর্বরতা। ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ।
শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, পানি নিষ্কাশনের ড্রেনগুলো ব্যবহৃত পলিথিনে ভরে গেছে। এ কারণে ড্রেন দিয়ে পানি ঠিক মত চলাচল করতে পারছে না। আর এতে পানিবদ্ধ হয়ে পড়ছে লোকালয়।
পরিবেশবিদদের মতে, যততত্র অব্যবহৃত পলিথিন ফেলার কারণে মাটি, পানি ও বায়ু দূষিত হচ্ছে। আর মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন চর্মরোগে। এছাড়া পলিথিনের অবাধ ব্যবহারে ড্রেনেজ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
এদিকে, প্রায় ২২ বছর আগে করা পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ২০০২ সালে সংশোধন করে পলিথিনের উৎপাদন ও বাজারজাত নিষিদ্ধ করা হয়। সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, ‘পলিথিন সামগ্রী উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতকরণে প্রথম অপরাধের দায়ে অনধিক ২ (দুই) বছরের কারাদ- বা অনধিক ২ (দুই) লাখ টাকা অর্থদ- (জরিমানা) বা উভয় দ-ে এবং পরবর্তী প্রতিটি অপরাধের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ২ (দুই) বছর, অনধিক ১০ (দশ) বছরের কারাদ- বা ২ (দুই) লাখ টাকা, অনধিক ১০ (দশ) লাখ টাকা অর্থদ-ে (জরিমানা) বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন অপরাধীরা’।
এছাড়া, বিক্রি, বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের দায়ে অনধিক ১ (এক) বছরের কারাদ- বা অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদ- (জরিমানা) বা উভয় দ-ের বিধান রয়েছে। ‘পরবর্তী প্রতিটি অপরাধের দায়ে ন্যূনতম ২ (দুই) বছর, অনধিক ১০ (দশ) বছরের কারাদ- বা ন্যূনতম ২ (দুই) লাখ টাকা, অনধিক ১০ (দশ) লাখ টাকা অর্থদ- (জরিমানা) বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন অপরাধীরা’।
আর আইনে ‘পলিথিন শপিং ব্যাগ’ বলতে বোঝানো হয়েছে পলিইথাইলিন, পলিপ্রপাইলিন বা এর কোনো যৌগ বা মিশ্রণের তৈরি কোনো ব্যাগ, ঠোঙ্গা বা অন্য কোনো ধারক- যা কোনো সামগ্রী কেনা-বেচা বা কোনো কিছু রাখা বা বহনের কাজে ব্যবহার করা যায়।
শহরের বড় বাজার সড়কের পান ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলাম বলেন, বিক্রেতারা পলিথিনেই জিনিসপত্র কিনতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করার কারণে এর ব্যবহার এত বেশি বেড়েছে। তাছাড়া আইন মানার প্রবণতা মানুষের কম। বরং আইন মানাতে বাধ্য করতে হবে। তবেই পলিথিন ব্যবহার বন্ধ হবে।
বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখন ঝামেলা কম। আগে মাঝে মধ্যেই ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাজা দেওয়া হতো । কিন্তু এখন তা কমে গেছে। এজন্যে পলিথিনের ব্যবসা এখন জমজমাট।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বড় বাজারের এক মুদি ব্যবসায়ী জানান, এসব পলিথিন সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও বেশ জমজমাট হওয়ার পিছনে বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট জড়িত। তারাই মূলত এসব পলিথিন বিক্রয় করে থাকে।
তিনি আরও জানান, এসব পলিথিন মূলত দুই ভাগে বিভক্ত। একটি দেশীয় এবং আরেকটি ভারতীয়। ভারতের পলিথিন দেশে কিভাবে আসে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিদিন বর্ডার থেকে কিছু মহিলা ও পুরুষ পলিথিন নিয়ে আসে। বাজারে বেশ কয়েকটি দোকানে তারা এই পলিথিন সরবরাহ করে থাকে। আর এখান থেকেই সকল দোকানীরা ক্রয় করে।
এদিকে, দেশীয় পলিথিন আসে ঢাকা খুলনাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে। আর সেগুলো শহরের অদূরে কদমতলায় রাখা হয়। সেখান থেকেই শহরের বড় বড় বাজারে তাদের অধীনে এজেন্টদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। আর এভাবেই চলছে পলিথিনের জমজমাট ব্যবসা।
এ ব্যাপারে জেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি আনিসুর রহিম বলেন, পলিথিনের জমজমাট এই ব্যবসা রোধ করার জন্য জনগণকে সচেতন হতে হবে, সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। তবেই নিষিদ্ধ এই দ্রব্যাদি উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধ হবে।
নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব সাতক্ষীরা
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/